মাছজীবন – সদানন্দ সিংহ

মাছজীবন      (ছোটোগল্প)

সদানন্দ সিংহ

সবাই বলে এ মন্দির জাগ্রত কালী মন্দির। তাই দূর-দূরান্ত এবং শহর থেকে প্রচুর বিশ্বাসী লোক মন্দিরে পুজো দিতে এখানে আসে। রবিবার এবং ছুটির দিনে লোকসমাগম আরো বেড়ে যায়। আর লোকসমাগম বেশি হলেই দয়াহরি খুশি হয়। বুকে এক আশা তৈরি হয়।
দয়াহরি তাই পদ্মফুলের কলি নিয়ে ভক্তদের কাছে যায় আর অনুরোধ করে, মায়ের জন্য একটা পদ্মফুল নিন না।
কেউ খুব একটা পাত্তা দেয় না। কেউ কেউ বলে, কোথায় পদ্মফুল? এ তো পদ্মফুলের কলি।
দয়াহরি দাঁত বের করে হাসে। বলে, এটাই পদ্মফুল হয়ে যাবে! আমি এক্ষুণি এটা ফুটিয়ে দিচ্ছি।
বলেই দয়াহরি কলিটির প্রতিটি পাঁপড়ি আঙুল দিয়ে টেনে নামিয়ে আস্তে আস্তে ফুটিয়ে দেয়। কলিটি একটা আস্ত পদ্মফুলে পরিণত হয়।
কিন্তু পদ্মফুলের দাম শুনে কেউ কেউ বলে, অ্যাঁ, একটা পদ্মফুলের দাম পঞ্চাশ টাকা! এ তো অনেক বেশি।
শুনে দয়াহরি উত্তর দেয়, আমি চল্লিশ টাকা দিয়ে কিনে এনে পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করি বাবু। আমি পাই মাত্র দশ টাকা।
কেউ কেউ বলে, কুড়ি টাকা হলে নেব।
ওই টাকায় দয়াহরি কী করেই বা দেয়? অগত্যা সে অন্য লোকের পেছনে ছোটে।
মাঝে মাঝে কেউ কেউ কোনো প্রকার দরদাম না করেই পদ্মফুল নিয়ে নেয়। হয়তো দেবী মায়ের প্রতি এদের অপরিসীম ভক্তি বা আস্থা কাজ করে, দয়াহরি জানে।

এই মন্দিরটিকে ঘিরে এখানে এখন এক জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্রের রূপ পাচ্ছে। তামাম ভক্তবৃন্দ এবং সরকারের কৃপায় মন্দিরের পরিধি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। মন্দিরের উন্নয়নে সরকারের খাত থেকে বিভিন্ন সাহায্য এসে যাচ্ছে। ভোটের আগে অনেক ভোটপ্রার্থী এখানে এসে মায়ের একবার দর্শন করে যান। প্রচুর দোকান এবং খাওয়ার হোটেলের সংখ্যা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। হ্যাঁ, পরিবর্তন হচ্ছে বটে। মন্দিরের কাছাকাছিও একটা রেলস্টেশান হয়ে গেছে। এতে অবশ্য স্থানীয় লোকদেরও উপকার হয়েছে।
এসব পরিবর্তনে দয়াহরিরও লাভ হয়েছে। ভক্তবৃন্দ বেশি এলে তার পদ্মফুলের বিক্রিও বেড়ে যায়। দশ বছর ধরে সে লোকের সামনে পদ্মফুলের কলির একটা একটা পাঁপড়ি টেনে টেনে আস্ত একটা ফোটা পদ্মফুল বানিয়ে দিচ্ছে।

আসলে এইভাবে পদ্মফুল কী করে ফুটিয়ে তোলা যায় তা তাকে শিখিয়েছিল দুর্গা। সে কতদিন আগের কথা, প্রায় ষাট বছর। এক বিকেলে লালুকাকাদের পুকুর পাড়ে বসে দুর্গা দয়াহরিকে দেখিয়েছিল কী করে পাঁপড়িগুলি টেনে টেনে নামিয়ে একটা আস্ত পদ্মফুল তৈরি করা যায়। বড় হলে আস্তে আস্তে দয়াহরি এবং দুর্গা পরস্পর নিজেদেরকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছিল। তারপর কালক্রমে বিবাহবন্ধনে একদিন আবদ্ধ হয়েছিল।
তখনো দয়াহরির ম-বাবা জীবিত ছিলেন। তাদের দেড় কানির মতো চাষজমি ছিল। দয়াহরি ঐ জমিতে টুকটাক চাষ করতো। আর তার একটা ভ্যানগাড়ি ছিল, সেটা দিয়ে সে গ্রামের লোকদের মাল টেনে তার মোটামুটি একটা আয় হয়ে যেত।
একসময় মা-বাবাও কালের নিয়মে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। কিন্তু দয়াহরি-দুর্গাদের জীবনে একটা আক্ষেপ থেকে গেল, তাদের সংসারে আর কোনো নতুন মুখ এলো না।
একদিন ভ্যানগাড়িটাও চুরি হয়ে গেল, ফলে তাদের একটা আয়ের উৎস থেমে গেল। তবে চাষবাস চলতে থাকায় তাদের অনাহারে থাকতে হয়নি যদিও অভাব লেগেই ছিল। দুর্গাই সব কিছু সামলে নিয়েছিল বলে দয়াহরিকে অভাব-অনটনের জন্যে মাথা ঘামাতে হয়নি। দয়াহরি জানে, দুর্গা এক আশ্চর্য মহিলা, ঠিক যেন দুর্গা মায়ের মতো। শত প্রতিকূলতার সাথে লড়েছে, কিন্তু মুখ ফুটে কোনো অভিযোগ জানায়নি কোনোদিন। মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে সে দুর্গাকে হাতজোড় করে নমস্কার করে বলতো, “তোমাকে নমস্কার জানাই।” তাতে দুর্গা মহাক্ষেপে লাল হয়ে যেতো, “ঠাট্টা হচ্ছে? আমি কিন্তু ঠিক চলে যাব বলছি।” দয়াহরি তখন বলতো, “সত্যিই তোমাকে আমার দুর্গা মায়ের মতো লাগে, দশ হাতে সবকিছু সামলে নিচ্ছ। কিন্তু দুর্গোৎসব এলে কোনদিন বলনি আমার অমুক জিনিস লাগবে।” স্বামীর কথা শুনে একদিন দুর্গা জবাব দিয়েছে, “তাহলে আমি যা চাইব তা তুমি দেবে? বলো, দেবে?” দয়াহরি বুক ফুলিয়ে উত্তর দিয়েছিল, “আমার ক্ষমতায় থাকলে অবশ্যই দেবো।”
— “সত্যি?”
— “বলেছি তো, ক্ষমতায় থাকলে অবশ্যই দেবো।”
— “আমার কিন্ত আজই চাই।”
— “আজই চাই?” দয়াহরি যেন একটু ঘাবড়ে যায়।
— “হ্যাঁ।”
— “ঠিক আছে, বলো।”
— “সেটা হচ্ছে, একটা ফোটানো পদ্মফুল।”
— “একটা পদ্মফুল! ব্যস!”
— ” হ্যাঁ।”
— “ঠিক আছে, আমি এক্ষুণি এনে দিচ্ছি।” বলেই দয়াহরি বেরিয়ে গেছিল।
পেছন থেকে দুর্গা চেঁচিয়েছিল, “আরে, আগে খেয়ে যেও না।”
দুর্গার কথা আর দয়াহরির কানে যায়নি, অনেক দূর এগিয়ে গেছে সে।
পরে একটা পদ্মফুলের কলি জোগাড় করে বাড়ি ফিরেছিল। দুর্গার সামনে সেটা বের করে একটা একটা পাঁপড়ি টেনে নামিয়ে পদ্মফুল ফুটিয়েছিল। তারপর ঠিক অমিতাভ বচ্চনের মতো হাঁটু গেড়ে বসে ফোটা পদ্মফুল দুর্গার দিকে বাড়িয়ে ধরেছিল, “এই নিন দেবীজি।” যেটা ছিল এক মধ্যবয়স্কের রোমান্টিকতায় ভরা, তখন তার বয়েস পঞ্চাশের ওপর।
দয়াহরি ছিল অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান। তখন তো মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না। তাদের গ্রামে ছিল বেড়ার ঘর, টিনের চাল, কাঠের বেঞ্চির এক অস্থায়ী সিনেমা হল, যার পর্দা ছিল ছোট। সেখানে ১৬ মি.মি. রিলের সাহায্যে পর্দায় প্রোজেক্ট করা হত। ছোট পর্দায় দেখে মন ভরতো না। শহরের সিনেমা হলে থাকত ৩৫ মি.মি. রিলের জন্যে বড় পর্দা। দয়াহরি আর দুর্গা মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে মর্ণিং বা ম্যাটিনি শো দেখে আসতো।
দয়াহরির ভালো লাগতো মাছজীবন। সুযোগ পেলেই সে তাদের গ্রামের পুকুরগুলিতে ডুব দিয়ে মাছের মত জলের নিচে ঘুরে বেড়াতো। জলের নিচের মাছগুলি তার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। জলের নিচে রোদের আলোয় মাছের সংসার সে মন দিয়ে লক্ষ করতো। এক ডুব দিয়ে সে পুকুরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে যেত। 

দুর্গারও একটা শখ ছিল। পান খাওয়া। পানের সাথে ৬০ নং জর্দা। বাড়িতে কয়েকটা পান গাছ ছিল। তাই পানের জন্য খুব একটা খরচ করতে হত না। 
এই পানের জন্যই কিনা দয়ালহরি ঠিক জানে না, একদিন দুর্গার গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ল শহরের বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে। আগে মাঝে মাঝে গলা ব্যথা হত, গ্রামে টুকটাক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেত। একসময় সেটা বেড়ে গেলে সে দুর্গাকে নিয়ে শহরের বড় সরকারি হাসপাতালে চলে গেছিল। সেখানেই গলার ক্যান্সার ধরা পড়ল। হাসপাতালের আউটডোরে উপস্থিত হয়ে দিনের পর দিন চিকিৎসা চলার পাশাপাশি রোগ বেড়ে যেতে থাকে। একসময় দুর্গা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। তখন হাসপাতালে দুর্গাকে ভর্তি নিয়ে নেয়। রোগ ধরা পড়ার সাত মাসের মধ্যেই দুর্গা মারা যায় হাসপাতালেই।
দুর্গা চলে যাওয়ার পর দয়াহরি ভীষণ ভেঙে পড়েছিল। চাষবাষ একদম ছেড়ে দিল। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করতেও আর ভালো লাগতো না। কিন্তু ক’দিন আর এভাবে কাটানো যায়? টাকাপয়সা ছাড়া পৃথিবী যে অচল। একদিন সে ভাবল, চাষের জমি রেখে কী হবে? একদিকে তার চাষ করার আর ইচ্ছে নেই, অন্যদিকে তার বয়স ষাটের কাছাকাছি, ইচ্ছে থাকলেও চাষ করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বাড়ির ভিটে বাদ দিয়ে অন্য জমিগুলি বিক্রি করে দিল। সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে ধীরে ধীরে টাকা উঠিয়ে তার খাওয়া-পরার খরচ চালাতে থাকে।
হাতে কিছু জমি বিক্রির টাকাপয়সা ছিল বলে সে বিয়ের কিছুদিন পরে তোলা তাদের পোস্টকার্ড সাইজের জয়েন্ট ফটো থেকে শহরের দোকানে গিয়ে দুর্গার ফটোটা আলাদা করে বড় করে বানিয়ে একটা সুন্দর ফ্রেমে বাঁধিয়ে নিল। বাড়িতে এসে সে দুর্গার ফ্রেমে বাঁধানো ফটোটাকে টেবিলের ওপর সাজিয়ে বসাল।
সকাল বিকেল সন্ধ্যা সময় পেলেই সে দুর্গার ফটোর দিকে চেয়ে থাকে। দুর্গা তাকে দেখে কখনো মৃদু মৃদু হাসে। কখনো দুর্গা তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কখনো দুর্গার চোখে সে জল দেখে।
এদিকে দয়াহরির টাকাপয়সা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে সে অশক্ত শরীরে কী করে কোনো আয়ের চেষ্টা করা যায় কিনা ভেবে কূল পাচ্ছিল না। তখনই মন্দিরে গিয়ে পদ্মফুল বিক্রির চিন্তা তার মাথায় আসে। সেভাবেই সে লেগে গিয়েছিল প্রায় দশ বছর আগে।

এখন দয়াহরি প্রতিদিন এই মায়ের মন্দিরে আসে। পাঁচ-দশটা পদ্মফুল বিক্রি করে। অবিক্রিত কলিগুলি বাড়িতে এসে বালতির জলে ঢুবিয়ে রাখে আগামীকালের জন্যে। তবে হ্যাঁ, প্রতিদিন বাড়ি ফিরে সে একটা পদ্মফুল দুর্গার চোখের সামনে আস্তে আস্তে ফোটায়। তারপর সেই ফুল দুর্গার ছবির সামনে রেখে ধূপকাঠি জ্বালায়। দুর্গার চোখ জলে ভরে যায় অথবা হয়তো তার নিজের চোখই জলে ভরে যায়। দুর্গা প্রতিদিন বলে, “ভালো থেকো।” দয়াহরি প্রতিদিন উত্তর দেয়, “আমি ভালো নেই গো।”

আজ মন্দিরে এসে দয়াহরি দেখলো প্রচুর পুলিশ ঘোরাফেরা করছে মন্দিরের এদিক সেদিক। সে জানে, ভোট এসে পড়েছে। নেতারা এই সময় মন্দিরে পুজো দিয়ে যান। আশীর্বাদ চান। হয়তো আজও কোনো নেতা বা মন্ত্রি আসবেন এখানে।
দয়াহরি তার কাজ শুরু করে দেয়, মন্দিরে প্রবেশরত ভক্তদের কাছে গিয়ে পদ্মফুল বিক্রির চেষ্টা করতে থাকে। পদ্মফুলের দাম জেনে বেশির ভাগ লোকই চলে যায়। এক ঘন্টা যাবত চেষ্টা করেও সে একটা ফুলও বিক্রি করতে পারে না। হঠাৎ সে দেখে একদল লোক নিয়ে একজন নেতা বা মন্ত্রি গোছের কেউ হবেন, সে ঠিক জানে না, মন্দিরের দিকে আসছেন। মন্দিরে ঢুকবার সময় দয়াহরির হাতে পদ্মফুল দেখে তার এক চেলাকে নির্দেশ দিলেন, পদ্মফুল নিয়ে এসো। সেই চেলা লোকটি দয়াহরির কাছে এসে বলল, সব পদ্মফুলগুলি দাও।
দয়াহরি একটা একটা করে হাতে টেনে টেনে ফুটিয়ে ন’টা পদ্মফুল লোকটার হাতে তুলে দিল। লোকটি বলল, আরে এতো বেজোড় হয়ে গেল। আরেকটা আছে?
দয়াহরি কাঁচুমাঁচু করে উত্তর দিল, আছে, তবে ওটা বিক্রির জন্য না। আমার নিজের জন্য।
লোকটি যেন অবাক হয়ে বলে, দাও দাও ওটাও দাও। নইলে স্যর আবার ভীষণ রেগে যাবেন।
লোকটি দশটা পদ্মফুল নিয়ে দাম মিটিয়ে চলে গেল। দয়াহরি একটু মুশকিলে পড়ে গেল। প্রতিদিন সে একটা পদ্মফুল রেখে দিত দুর্গার জন্য, আজ সেটা নিয়ে গেল জোর করে লোকটা।
কী আর করে। দয়াহরি বাড়ির দিকে ফিরতে থাকে। যেতে যেতে তার মনে হয়, না, দুর্গার জন্যে একটা পদ্মফুল চাই। এবার সে পদ্মফুল ব্যাপারীর বাড়ির পথ ধরে।
মাথার ওপরে রোদ জ্বলজ্বল করে। দয়াহরির শরীর ঘামে ভিজে যায়।

পদ্মফুল ব্যাপারী দয়াহরিকে অসময়ে দেখে একটু অবাক হয়। দয়াহরি বলে, একটা পদ্মফুল হবে এখন ?
ব্যাপারী অবাক হয়, একটা ? আপনি তো দশ-পনেরটা নেন সবসময়। তাছাড়া যে ছেলেটা পদ্মফুল সংগ্রহ করে দেয় সে তো সকালে আসবে। এখন কীভাবে দেব ?
দয়াহরি তবু বলে, আমার একটাই এখন দরকার, নিজের জন্যে। আগামীকাল আমার জন্যে পনেরটা রেখে দেবেন।
— আগানীকাল যত চান, পেয়ে যাবেন। এখন যদি দরকার হয়, আপনি নিজে গিয়ে দিঘিতে গিয়ে দেখুন। বলে ব্যাপারী ঘরের ভেতরে চলে গেলেন।

অগত্যা দয়াহরি দিঘির কাছে যায়। কতদিন হল সে দিঘিতে সাঁতার কাটেনি। দিনগুলি কেবল এগিয়ে যায়। বয়েসটাও স্বপ্নের মত হারিয়ে যায়, ঠিক টের পাওয়া যায় না।  এইরকম এক দিঘির মত পুকুরের ধারে বসে দুর্গা একদিন দেখিয়েছিল কী করে পদ্মফুল ফোটাতে হয়।
দয়াহরির ব্যাগের ভেতর একটা গামছা ছিল। গরমে শরীরটা জ্বলছে। সে সাদাজামা গেঞ্জি খুলে দিঘির পাড়ে রাখে । ধুতি খুলে গামছা পরে নেয়। চারিদিকে তাকিয়ে পদ্মফুলের কলি খোঁজে। ধীরে ধীরে নামে জলে। ঠাণ্ডা জলের স্পর্শে তার শরীর জুড়িয়ে যায়। এবার সে জলে ডুব দেয়। ডুব সাঁতরে সে এগোতে থাকে জলের ভেতর। শব্দহীন এক দেশে যেতে যেতে যেন সে যেন রাস্তা হারিয়ে ফেলতে থাকে। কিন্তু উপরে উঠতে আর তার মন চাইছিল না। সে কি মাছ হয়ে যাবে ? পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ, বেদনা থেকে সে কি দূরে চলে যাবে ? শরীরের শক্তি ধীরে ধীরে কমে আসছিল। ধীরে ধীরে দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পদ্মফুল ? দুর্গা কি এখন তার অপেক্ষায় ? দুর্গার কথা মনে হতেই দয়াহরি তির তির করে মাছের মত ওপরে উঠতে থাকে। না, তার এখন মাছজীবন বেছে নেবার সময় নেই।
দুর্গা তার জন্যে অপেক্ষা করছে।