ঝিলিক (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
দীপ আর সীমা সকালের ব্রেকফাস্ট সারছিল। বাবাইয়ের ব্রেকফাস্ট আগেই হয়ে যাবার পর স্কুলের ইউনিফর্ম পরে সে স্কুলবাসের অপেক্ষা করছে। স্কুলবাসটা তাদের বাড়ির কাছে আসতে প্রায় দশ মিনিট লাগবে। টিভিতে তুরস্কের ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা ও উদ্ধারকার্য দেখানো হচ্ছিল। ব্রেকফাস্ট করতে করতে টিভি দেখছিল ওরা। এইসময় বাবাই তাদের সামনে এসে বলল, বাবা আমি টার্কি যাবো।
শুনে ওরা যেন আকাশ থেকে পড়ল। দীপ বলে উঠল, বলিস কী! সেখানে কেন যাবি? সে তো অনেক দূরে।
বাবাই শান্তভাবে বলল, জানি। সেখানে আমি ভূমিকম্পে চাপা পড়া লোকদের উদ্ধার করব।
ছেলের কথা শুনে দীপ আর সীমা পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর সীমা বলল, ভালো কথা। তাহলে আমরাও সঙ্গে যাব অবশ্যই।
মায়ের কথায় বাবাই উত্তর দিল, তোমরা কী করে যাবে? আমি জানি, তোমাদের যাওয়া হবে না।
সীমা আবার বলল, আশ্চর্য তো! আমাদের যাওয়া হবে না এটা কী করে জানলি?
বাবাই সহজ স্বরে উত্তর দেয়, কারণ তোমরা আমাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাও না, কোথাও খেলাতে নিয়ে যাও না। সারাক্ষণ শুধু পড়াশোনা আর হোমটাস্ক করিয়ে রাখ। জানি, তোমরা কোথাও যাবে না।
দীপ আর সীমার মধ্যে আবার চোখাচোখি হল। এবার দীপ বলল, বাবাই, এক দেশ থেকে আরেক দেশে তো হঠাৎ করে যাওয়া যায় না। সেজন্য পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট বের করতে হয়।
— তাহলে তাড়াতাড়ি আমার পাসপোর্ট বের করে দাও।
দীপ হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে। রাত্রে আমি অফিস থেকে ফিরে এলে আমরা তিনজন বসে ল্যাপটপে তিনজনের জন্যেই অনলাইনে আবেদন করে দেব। তবে পাসপোর্ট পেতে মাসখানেকের ওপর লাগতে পারে তো, তাই টার্কি হয়তো যাওয়া হবে না, ততদিনে হয়তো উদ্ধারকার্য শেষ হয়ে যাবে। সে যাহোক, আমরা আবেদন করব।
এমন সময় স্কুলবাসটা এসে পড়ল। বাবাই স্কুলব্যাগ কাঁধে বেরুচ্ছিল।
দীপ ছেলেকে উদ্দেশ্য করে একটু জোরে বলল, আগামীকাল শনিবার। স্কুল বন্ধ। আজ আর তোকে পড়তে হবে না। বিকেলে মা তোকে পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে। তুই পার্কে গিয়ে যত জোরে পারি ছুটে যাবি। আগামী রবিবারে আমরা তিনজন আবার নদী দেখতে যাবো কিন্তু।
যেতে যেতে বাবাই পেছন ফিরে বলল, সত্যি বাবা?
বাবাইয়ের চোখে এক অদ্ভূত খুশির ঝিলিক। সে ঝিলিকের মধ্যে দীপ আর সীমা হারিয়ে যেতে চাইল।