পারিজাতের কুটির – সুদীপ ঘোষাল

পারিজাতের কুটির      (ছোটোগল্প)

সুদীপ ঘোষাল

সন্ধ্যার দিকে একটা  লোকাল ট্রেনে সুবোধ আর অপর্ণা রোজ  বাড়ি ফেরে। স্কুল এক না হলেও কাছাকাছি। স্টেশন থেকে দূরত্ব অনেকটা। তাই অর্পিতা একা আসতে সাহস পায় না। মোবাইলে জেনে নেয় সুবোধের খবরাখবর। তবে সুবোধ কাজ থাকলে আগেই জানিয়ে দেয়। আজ যথারীতি দুজনেই স্কুলে এসেছিলো। এখন ফেরার পালা।
ট্রেন চলছে। ফাঁকা সিটগুলো মন খারাপের সুরে চলছে। লোকজন খুব কম। অর্পিতা বললো, কি রে আজকে লোকজন কম কেন?  কোনো পুজো পরব আছে না কি? সুবোধ বললো, না তো। জানা নেই।
অন্যদিন দুজনেই মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আজ ব্যাপারটা অন্যরকম। দূরে বসে আছে চারটে লোক। বেশ ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। সাধারণত এত আস্তে কথা কেউ বলে না।
অর্পিতার থার্ড আই সচেতন হলো। বললো, বুঝলি পরের স্টেশনে নেমে আমরা অন্য কামরায় বসবো। কিন্তু বিধি বাম। ট্রেনটা হঠাৎ মাঝ মাঠে থেমে গেলো। এখনও এক ঘন্টা লাগবে।

এতদূরে স্কুল। এবার দুজনেই আবেদন করেছে সরকারের কাছে। বাড়ির কাছে এলে সমস্যা মিটে যাবে।   

ট্রেনটা থমকে দাঁড়িয়ে আছে। অর্পিতার মনে হলো, কতযুগ ধরে এখানে অন্ধকারে তারা আছে। সময় কাটতে চাইছে না। ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো আলো ছড়ানো শুরু করেছে। কোন এক রূপকথার জগতে হারিয়ে যায় মন।
হঠাৎ সুবোধের আর্তনাদে সম্বিত ফিরে এলো অর্পিতার। লোক দুজন সুবোধকে ধরে এক ঠেলায় ফেলে দিলো আর দুজন অর্পিতাকে বেঁধে একটা বোরখার মত পোশাক পরিয়ে দিলো। এখন অর্পিতার কিছু করার নেই। চারজন তাকে ঘিরে রেখেছে বাঁধা অবস্থায়।
প্রায় দশ মিনিট পরে ট্রেন ছেড়ে দিলো। সুবোধ পরে থাকলো আহত অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যে। অর্পিতা ভাবে, এই রাতের অন্ধকারে সুবোধ বাড়ি ফিরে যেতে পারবে তো?
অর্পিতা ভাবে সে কোথায় যাবে। চাকরির কি হবে? এরা কি করতে চায় আমাকে নিয়ে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এখনও অবধি এরা কেউ দেহের গুপ্ত স্থানে হাত দেয় নি। অত ইতর স্বভাবের নয়। কথাবার্তা  বেশি শোনা যাচ্ছে না। তাহলে এদের উদ্দেশ্য কি? এইসব চিন্তা করতে করতে হয়ত কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো অর্পিতা।

যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে শুয়ে আছে জঙ্গলের মাঝে উঁচু একটা মাচানে। খড়, বিচুলি দিয়ে পাতা বিছানা। মাচানের মাথায় হোগলা পাতার ছাউনি। চারিদকে বন, জঙ্গলে ঘেরা। সামনেই একটা ডোবা রয়েছে।

এখন অর্পিতার হাত মুখ বাঁধা নেই। মুক্ত স্বাধীন। বেশ একটা ভয় ভয় ভাব। কিন্তু সামনে কোনো পুরুষ নেই। একটা দেহাতি মহিলা এলো। ভাঙ্গা বাংলায় কথা বললো। সে বললো, দিদি আপনি একোন হামাদের নজরবন্দি হুয়ে আছেন। পালাতে চেষ্টা কোরবেন না। বাঘ, ভাল্লুক আছে। ছিঁড়ে খেয়ে লিবে। এখন ইখানেই আপনার জিন্দেগি কাটবে।
অর্পিতা বললো, তোমার নাম কি?
মহিলাটি বললো, আমিও আপনার মত এখানে এয়েছি। কিন্তুক এরা লোক ভাল। নিজের কাজ লিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমার নাম মঙ্গলি বাঈ। আমাকে সবাই মা বলে ডাকে।

অর্পিতা স্কুলে থাকতে মাঝে মাঝে ভাবতো, একটা জঙ্গলে একবার হারিয়ে গিয়ে দেখবে কেমন লাগে? একঘেয়ে জীবনে আনন্দ নেই। বিধাতা তাই হয়তো সেই সুযোগ দিয়েছে।
অর্পিতা ভাবলো হাপিত্যেশ করে লাভ নেই। এরা কি চায় দেখা যাক। মরার আগে ভূত হয়ে লাভ নেই।

রাতে মা খাবার দিলো আর অর্পিতার কাছে শুয়ে পড়লো। ভোরবেলা থেকে পাখির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। মা সব ঘুরে ঘুরে অর্পিতাকে চিনিয়ে দিলো। অর্পিতা চালাকি করার চেষ্টা করলো না। দেখলো চারদিকে বিপদের হাতছানি। সাপ, কাঁকড়াবিছে, জোঁক কিছুরই অভাব নেই। তারপর বাঘ, শিয়াল, হায়েনা তো আছেই। শিক্ষিতা আধুনিক মেয়ে সে। বুঝতে পারলো সে এক ভীষণ শক্ত জালে বন্দি।

একদিন দুপুরের সময় আলোচনা সভায় নেতাদের আবির্ভাব হলো। এবার প্রথমে দলের বয়স্ক লোকটি বললো, মা তুমার ইখানে কোনো মানহানি হুয়েছে কি?
অর্পিতা নির্ভয়ে বললো, আমি এখন কোথায় আছি জানতে চাই। আর আপনাদের উদ্দেশ্য কি?  আমাকে আপনাদের কি প্রয়োজন?
বৃদ্ধ লোকটি বললো, তুমার অবস্থান আমরা বলবেক লাই। আমরা না খেয়ে মরবো কেনে? তার প্রতিকার চাই। আর তুমাকে আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দিবার লেগে এনেছি। তুমি শিখাই পড়াই দিবে। আমরা জানি তুমি ইস্কুলের মাষ্টার। তাই তুকে তুলেছি। সারা দেশের নানা জায়গার লোক ইখানে আছে। আমরা মেয়ে মাষ্টার চাই। পুরুষ মানহষ এসে ইখানে মা বোনের ইজ্জত লিয়ে মরে। তুদের সভ্য জগতের পুরুষগুলাকে আমরা না পসন্দ করি। আমি বিশি কুতা বলবেক লাই। তু কাজ শুরু কর। আমরা ডাকাতি করে খাবার লিয়ে আসি।

অর্পিতা দেখলো কোনো পথ নাই। হাতে এদের অস্ত্র। কি করে পায় এরা জানি না। পেটে ভাত নাই আর যুদ্ধের শখ। জন্ম থেকে এরা এই শিক্ষা পায়। সরকার তো চেষ্টা করে। কিন্তু একদিন কি আলো ফুটবে না এদের চোখে। অর্পিতা এদের মায়ায় পড়ে যায়। মনটা কেঁদে ওঠে আর জেদ চেপে যায়, করবো অথবা মরবো।

আলোচনা শেষে অর্পিতা মেয়েদের নিয়ে আলাদা করে বসলো। সে বললো, আমরা লেখাপড়া শেখার পাশাকাশি কাজ করবো।
মিনা বললো, কি কাজ রে দিদি।
অর্পিতা বললো, চাষ করবো। আমরা ফসল ফলাবো জঙ্গলের বুকে। তোরা আমার সাথ দিবি তো? সব মেয়েরা সমস্বরে বললো, হুঁ দিবো। লিশ্চয় দিবো।

এইসব ছেলে মেয়েরা খাটতে জানে। কাজ করে খেতে জানে। শুধু এদের পরিচালনা করতে হবে সঠিকভাবে।
পরের দিন থেকে শুরু হয়ে গেলো অর্পিতার কাজ। সকালে পড়ানো। তারপর কাজ আর কাজ। মাঝে রান্নাবান্না করে একসাথে খাওয়া। এখানে বহুদূরে এক একটি গ্রাম আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম পায়ে হাঁটা জঙ্গলের সরু পথ। একটা নদীর ধারে জলপ্রপাত। জঙ্গল কবিতাময় মাকড়সাজাল। পথ হারালেই বিপদ। বাঘ এখানে সহজে আসে না। তবে খট্টাস, খরগোশ, বেজি, সাপ, শেয়াল দেখা যায় সবসময়। সবথেকে ভয়ংকর হলো হায়না। দল বেঁধে ঘোরে। একটা গোটা গরু খেতে সময় লাগে কুড়ি মিনিট। কত মানুষ এদের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে।

আজ বাইশ মাইল দূরে একটা মালগাড়ি ট্রেন ছিনতাই করতে গিয়ে ধংলুর ডান পায়ে গুলি লেগেছে। তবে ওরা বিভিন্ন শস্যের বীজ, ফসলের বীজ আর প্রচুর চালভর্তি বস্তা ডাকাতি করেছে। অর্পিতার ভালো লাগলো না। সে বললো, আমার মত যদি নাও আজ থেকে চুরি বন্ধ করো।
-– আমরা খাবো কি? একজন প্রশ্ন করলো।
অর্পিতা বললো, আমরা নিজেরাই জঙ্গল কেটে বা পুড়িয়ে জমি তৈরি করবো ফসল ফলাবো তোমাদের আনা এই বীজ দিয়ে।
একজন বললো, অত সোজা লয় রে। সোজা হাতে গুড় উঠবে না বাপ।

অর্পিতা জানে বাধা আসবে। তবু সে এগিয়ে যাওয়ার জেদে অটল রইলো।

শুরু হয়ে গেলো চাষ। জলের অভাব নেই। জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে বাড়তে থাকলো চাষযোগ্য জমি। মাটির বুকে ফসলের ঘুম, মনকে নাড়া দিলো অর্পিতার ভাবনা।
 

একদিন অন্ধকারে একটা বিশাল হায়েনা একটা ছেলের পা চিবোতে থাকে। তার চিৎকারে লোকের গোলমালে হায়েনাটা পালিয়ে যায়। এরা চুরি করে খড় এনেছে। সবার হাতে এক একটা জ্বলন্ত আঁটি। আগুনের ভয়ে সব হায়েনা পালিয়ে গেলো।
অবধারিত মরণের হাত থেকে বেঁচে গেলো ছেলেটা কিন্তু পা-টা তার অকেজো হয়ে গেলো। ছেলেটা সুস্থ হওয়ার পর থেকে পড়াশোনার প্রতি মন দিলো। আর দিদির স্নেহে সে বড় হতে লাগলো।

অর্পিতা তাদের সঙ্গে ছয় মাস হলো আছে। তাদের সংস্কার, ভাষা, অভ্যাস, বিশ্বাস ধীরে ধীরে জেনে গেলো। অর্পিতা তাদের মধ্যে জাগাতে থাকলো নতুনকে জানবার আগ্রহ, শান্তির বাণীর সুস্থ ভাবধারা, অসির চেয়ে মসি বড়োর ধারণা আর মানুষকে বুঝবার ইচ্ছাশক্তি।    

নিজের বাড়িতে ফেরার লোভ বা মোহ যে একেবারেই ছিলো না তা নয়। অর্পিতা চাইলো এদের সঙ্গেই নিজের ভবিষ্যৎ জড়াতে।
কষ্টসাধ্য জীবন ও কর্মে অটল থেকে বন্য জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে থাকলো তার জীবন। তৃষ্ণার জলের জন্য বালি খুঁড়ে জল জোগাড় করতো তারা।
অর্পিতা দেখতো এখানকার অধিবাসীরা কোনো বিশেষ প্রাকৃতিক দৃশ্যের তোয়াক্কা করে না। তার এখানকার পরিবেশে থেকেই বড়ো হয়েছে। কিন্তু অর্পিতা জঙ্গলের মধ্যে সুর খুঁজে পেতো। ছন্দে বিভোর হয়ে যায় তার মন। গানের সঙ্গে পাখির ডাক মিশে যেত। রঙিন মেঘ, সবুজ বনানী, জলকণিকার স্নেহলিপি একাকার হয়ে পারিজাত কাননের ছবি আঁকতো তার মন। নদীর দুই তীরে কাশের কারসাজি লতা বিতান ও বিচিত্র সুগন্ধি ফুলের শোভায় তার মনপ্রাণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো। একটা ছোটো সুন্দর পারিজাতের বাগান অর্পিতার মনে ছবি হয়ে ধরা দিতো। পারিজাতের খেলাঘর বিধাতা তাকে দিয়েছেন। সে এতেই সুখী হতে চায়।      

অর্পিতার মনে বর্ষাকালীন ছবি এক অন্য ধারণা আনে। ভিজে ভিজে চারদিকের শীতল হাওয়া জলে ডোবা তার উপর খাদ্য দুষ্প্রাপ্য। চাষ হলেও খাদ্য যথেষ্ট নয়। তার জন্য এক এক দিন একবার মাত্র খাওয়া হয়। সকলে অর্পিতাকে ভালোবাসেন। তার যত্ন করার চেষ্টা করে। বাঁশ আর বাখারি দিয়ে খাট বানিয়ে দেয়।
অর্পিতার ভালো লাগে, কেউ আর এখন মালগাড়িতে ওয়াগন ব্রেকিং করে না। তারা বলে, একটা শহরের শিক্ষিতা মেয়ে যদি খেটে খেতে পারে তাহলে আমরা পারবো না কেন?  তারা তাদের মূলধন বীজধান বা বীজগম সব খেয়ে নেয় না। ফলমূল খেয়ে বাঁচিয়ে রাখে মূলধন। এখন আর কেউ পুলিশের গুলিতে মারা যায় না। ছয় বছর হয়ে গেলো অর্পিতার জঙ্গলে। একদিনের জন্যও তার অপমান হয়নি। সভ্য সমাজের চেয়ে অনেক বেশি  বিবেকের কাছে তারা পরিষ্কার। মানুষের কল্যাণের কাজে লাগতে পেরে অর্পিতা অনেক বেশি খুশি। হয়তো এই ছয় বছরে তার বিয়ে হত একটা বা দুটি সন্তান হত। কিন্তু তা শুধু আত্মীয়দের ভালোলাগার জন্য। আর এখানে তার পুরো আকাশটাই নিজের নীল সংসার। সবাই সকলের জন্য। একের আনন্দে বহুর সমাবেশ। এটাই তো মানুষের চিরন্তন সুর। মহতের বাণী।
অর্পিতা দেখেছে এখানকার শিশুদের অধিকাংশ ক্যালশিয়ামের অভাব, ফ্লুরোরাইডোর বিষক্রিয়ায় দেহ শীর্ণ, ভিটামিন সি এর অভাবে নানারকমের রোগ হয়। এই জঙ্গলে হরেক ওষুধের গাছ আছে। যেমন শিউলি, কালমেঘ, থানকুনির পাতা, কুলেখাঁড়া, কলমি শাক আরও নানারকম শাক। নদীতে পানিফলের মত একরকমের ফল, শালুক, পদ্ম তো আছেই। এইসব সবুজের উপকার বুঝিয়ে বলে জঙ্গলের ছেলেমেয়েরা অনেক সুস্থ। তার সঙ্গে যোগাসন। অর্পিতাকে এইজন্যই ধরে আনা হয়েছে শহর থেকে। এদের সর্দার জানে শিক্ষিত হৃদয়বান মানুষ ছাড়া এখানকার উন্নয়ন অসম্ভব। তার জন্য তারা অপরাধ করতেও পিছুপা হয় না। তবে নিরন্ন অশিক্ষিত মানুষের সেবায় নিজেকে লাগাতে পেরে অর্পিতা আজ গর্বিত।
মিনা সবসময় অর্পিতার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। সে অর্পিতার সঙ্গে উঠে, বসে, শোয়, খায়। লেখাপড়া শিখেছে তার কাছে। এখন ছোটোখাটো শিশুদের পড়ানোর ভার নিয়েছে মিনা। মিনা চাষবাস দেখাশুনা করে। সকালে শিশুদের আসন করায়। ছোলা বাদাম খেতে দেয়। বনমুরগি আর বুনো হাঁসের ডিম ছেলেরা সকালবেলা নদীর ধারে জোগাড় করে। তারপর সিদ্ধ করে খায়। অর্পিতা তাদের বলতো তোরা একটাও পাখি মারবি না। ওদের ডিমও খাবি না। শুধু শাকসব্জী খেয়েই তো হাতির অত বড় শরীর। কেউ কেউ লুকিয়ে চুরি করে ডিম খেতো। কিন্তু সংখ্যাটা কমে গেছে অনেক।

এখন খুব কম লোক তির হাতে শিকারে যায়। মাঠে ফসল ফলায়। আর প্রয়োজনে বুনোমোষ পোষ মানিয়ে চাষ করায় আর গাভী-মোষের দুধ খায়। কিন্তু জঙ্গলের একটা অংশে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে কিছু মানুষের ভুল জীবনপ্রণালী। তার জন্য সে নিজের বাড়িতে বাবার কাছে শেখা সমস্ত বিদ্যা সে ঢেলে উজাড় করে দিয়েছিলো ভালোবাসার জঙ্গলের শিশুদের জন্য। সমগ্র অংশের তো পারে নি। অর্পিতা ভাবে কোনো মানুষের একার পক্ষে তা সম্ভব  নয়। একটা জিনিস সে করতে পেরেছে জঙ্গলকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে তার কাছে থাকা শিশুগুলিকে। কেউ এখন তাকে ছাড়তে চায় না।

এবার পুলিশ প্রশাসন হয়ত জানতে পেরেছে কোনো এক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নজরবন্দী হয়ে এই জঙ্গলে আছে। তারা এটাকে উগ্রপন্থীদের চক্রান্ত বলে তল্লাশি চালায় এখন রোজ। কিন্ত অর্পিতা আর এই জঙ্গল ছেড়ে যেতে চায় না। তার সামনে পাঁচজন বৃদ্ধ মারা গেছেন অসুখে। তাদের আর সেই শক্তি নেই। এখন তারা ভালোভাবে বাঁচতে চায়। তাদের ইচ্ছার কথা অর্পিতা প্রশাসনকে জানাবে। আর একটা মানুষ যেন ভুল বেঝাবুঝির শিকার না হয়। সে বিধাতাকে ডাকে তাদের সাহায্য করার জন্য।

একদিন সকালে মিনা তার ছোট্ট কুটির ঘরে অর্পিতাকে নিয়ে গেলো। পারিজাতের কুটিরে মিনার মা, বাবা আছেন। অর্পিতাকে দেখে দেবির মত তার কাছে এসে পায়ে হাত দিতে গেলো। অর্পিতা বললো, আপনারা আমার চেয়ে বড়ো। আপনারাই আমার ভগবান। সেখানে অর্পিতা নারকেল কোড়া খেলো তাদের খুশির জন্য। মিনার বাবা বললেন, সারা জঙ্গলে ঘরে ঘরে তুয়ার মত বিটি চাই। তবেই জঙ্গলের লোক বুঝবে নিজের ভাগ্য অন্য কেউ গড়ে দেয় না। পরিশ্রম করলে না খেয়ে পরাণটা যায় না।
অর্পিতা বললো, তোমার মেয়ে মিনা আবার দশটা মিনা তৈরি করবে। এইভাবে ছড়িয়ে পড়বে নব আগুনের ঢেউ। সেই আগুনে পবিত্র হবে মানুষের অন্তর। আলো ছড়িয়ে যাবে পারিজাতের কুটিরে কটিরে। জেগে উঠবে নতুন ভোর।
তারপর মিনাকে নিয়ে সে চলে এলো জঙ্গলে। হঠাৎ একটা পাইথন জড়িয়ে ধরে অর্পিতাকে। মিনা চপ করে মুখটা চেপে ধরলো সাপটার তারপর পাকিয়ে খুলে ফেললো সাপের প্যাঁচ। সাপটা ছেড়ে দিলো নদীর ওপাড়ে গভীর জঙ্গলে। অর্পিতা দেখলো পুরোপুরি তৈরি মিনা। জীবন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তার মন।

একদিন অর্পিতা বললো, পুলিশ আমাকে খুঁজছে। হয়ত আমাকে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসবে। আমি না থাকলেও জঙ্গলের প্রাণ তোকে জাগাতে হবে। আরও শত শত মিনার প্রয়োজন এই জঙ্গলের।
মিনা বললো, আমার মনে থাকবে দিদি। আমি চেষ্টা করে যাবো আজীবন।

আজ ভোরে উঠেই অর্পিতা দেখে পুলিশের জিপ হাজির। কাউকে না বলে সে জঙ্গলের অন্য আর একটা গ্রামের দিকে ছুট লাগালো। সে স্থির করে ফেললো আরও গ্রামে আমি আলো জ্বালবো। সে ছুটতে ছুটতে চলে গেলো আর একটি গ্রামে।
অর্পিতা একটু বিশ্রাম নিলো। তারপর ভাবতে শুরু করলো কি করে অচেনা গ্রামের লোক আমাকে চিনবে। জঙ্গলকে আমি চিনি কিন্তু নতুন অশিক্ষিত মানুষের কাছে আবার তার পরিচয় নতুন করে শুরু করতে হবে। নদীর ধার বরাবর দু চার মাইল দূরে এক একটা গ্রাম। সেই ধার বরাবর গিয়ে একটা বাড়িতে সে আশ্রয় নিলো। একজন বয়স্ক মহিলাকে অর্পিতা বললো, আমি রাস্তা হারিয়ে এখানে এসেছি। যদি দয়া করে একরাত কাটাতে দেন আমি খুব উপকৃত হবো।
মহিলাটি বললেন, অতশত বুজি না বুইলি। তু একরাত থাকবি থাক। এখন জল খা।
অর্পিতা আশ্বস্ত হলো। এখানেই থাকা যাবে। সে তালপাতার কুটিরে ঢুকে শুয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে রাত নেমে এলো। সবাই ঘুমিয়ে আছে। আর অর্পিতা ভাবছে বাড়ির কথা। সুবোধের কথা। এতদিনে বাবা মা হয়তো আমার আশা ছেড়ে দিয়েছে। সুবোধের ছেলেপিলে হয়েছে। কিন্তু এসবের জন্যই কি মানুষের জন্ম। কোনো দায়িত্ব নেই জগতের কাজে, মানুষের কাছে। এই কি জীবনের ধর্ম! কি জানি আমি জানি না। অর্পিতা ভাবছে ছোটোবেলার কথা। কত কষ্টে মা তাকে বড় করেছে, তার কথা। তার নাম, ব্যবহার সকলেই পছন্দ করে বলে মনে হতো না। ছোটোবেলা থেকেই বন্ধুবান্ধব সকলেই তাকে এড়িয়ে চলতো। সংসারে তাকে সকলে একটু অন্য চোখে দেখতো। মাসি বলেতো, ওকে আগে খাইয়ে দে দিদি, তারপর অন্যকথা। মায়ের মুখে শুনেছে শৈশবে সে খুব কাঁদুনে স্বভাবের ছিল। কেউ কোলে নিয়ে আদর করতে চাইলে সে প্রাণপণে মাটিতে গড়াগড়ি দিত। তারপর কোথাও বেড়াতে গেলে কান্না আরও তীব্র হতো। এরপর বড় হয়ে স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রথম বছর ভর্তি হতে পারল না। পরের বছরে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হল। পড়াশুনায় ভালো ছিল। পড়াশুনা ভালোই চলছিলো। তারপর হঠাৎ তাদের সংসারের মেরুদণ্ড প্রিয় কাকাবাবু মরে গেলেন। বাবা চাকরি ছেড়ে জমিজমা, বাড়িঘর দেখার জন্য চলে এলেন তাদের জন্মভূমি গ্রামের বাড়িতে। বড়দা, মেজদা চাকরি পেলেন বাবার অফিসে। বেশ চলছিলো সুখের সংসার। তার পড়াশুনা শুরু হলো গ্রামের পরিবেশে। আবার নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু। সবকিছু নতুন। তার সকলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিলো
কিন্তু যারা এতদিন বন্ধু হয়ে একসাথে খেলাধূলা করে তারা কি সহজে নতুন কাউকে পাত্তা দেয়। তবু তাদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করে গেল অনবরত। সকলে গ্রহণ করলো না। কোনোরকমে সময় কাটাত। তারপর বি,এস,সি পড়ার জন্য হাওড়া চলে এল। ক্লাস সেভেনে পড়তে পড়তে চলে গেল গ্রামে। আবার চলে এল শহরে। তাকে সেখানে অনেকের মনে আছে, অনেকের মনে নেই। তবু সবাইকে পরিচয় দিয়ে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করল।

মনে পড়ে মধু মাসিকে। ফুটপাতের পাতানো মাসি। সে বলত মাদার টেরেসা। তার জীবন সংগ্রাম সে চোখে দেখেছে। মনে পড়ছে সেই মাসির কথা।  মধু মাসি বলেছিলেন তার জীবনের সংগ্রামের কথা।  মাসি ফুটপাতের এক কোণে কোনোরকমে থাকত। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। একদিন ফুটপাতে কুড়িয়ে পেলো একটা শিশুকে। তাকে ভগবানের দান মনে করে মানুষ করতে লাগলো। তারপর মাসি আরও চারজন অনাথ শিশুর খোঁজ পেলো। মাসি ভিখারি হতে পারে কিন্তু তার পড়াশোনার যোগ্যতা, বুদ্ধি ভালোই ছিলো। শিক্ষিতা রুচিশীল মাসি কি করে ভিখারি হলো, সে ঘটনা পুরো বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যাইহোক স্বাধীনচেতা মাসি স্বামীর ঘর ছেড়ে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছিলো বাধ্য হয়ে। মাসি এবার পাঁচ শিশুকে নিয়ে সরকারি অফিসে হানা দিতে শুরু করলো। একদিন এক সরকারি আধিকারিক বললেন, মাসি আপনার কোনো পরিচিতি নেই। আপনার অনাথ আশ্রমের কোনো জমি নেই। কি করে আপনি অনাথ আশ্রয় গড়ে তুলবেন। আপনার অর্থবল, জনবল কিছুই নেই। মাসি বললো, কিন্তু আমার একটা জিনিস আছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। আমি আশ্রম গড়ে তুলবোই।আপনি দেখে নেবেন। আমার সে মনোবল আছে।
পাঁচ শিশুকে নিয়ে মাসির পথ চলা শুরু হলো। তিনি ভিক্ষা করে অই শিশুদের পরিচর্যার ব্যবস্থা করলেন। পাঁচ শিশুকে দেখে একদিন অমরবাবুর মায়া হলো। তিনি মাসিকে বললেন, আপনার শিশুদের থাকার জন্য আমি ঘর তৈরি করে দেবো। আমি জায়গা দেবো। আমার যতটা সাহায্য করা প্রয়োজন আমি করবো। আইনের ঝামেলা আমি দেখাশোনা করবো।
মাসি জোড় হাতে অমরবাবুকে নমস্কার জানালো। কেতুগ্রামের ফাঁকা জমিতে ঘর তৈরি হলো প্রথমে দুটি। তারপর শুরু হলো মাসির বিজয় যাত্রা। তারপর সমাজের বিভিন্ন  স্তরের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আসতে লাগলো। তৈরি হতে লাগলো আরও ঘর। বাউন্ডারি হলো। আর অনাথ শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। প্রথমে শুকনো কাঠ কুড়িয়ে রান্না করা মাসি আজ গ্যাস ওভেনে রান্না করে নিজের শিশুদের জন্য। মাসিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। কিন্তু বাদ সাধলো আর এক বিপদ। একদিন আশ্রম থেকে তিনটি শিশু চুরি হয়ে গেলো। মাসি পাগলের মত খুঁজতে শুরু করলেন শিশুদের। এক রাখালের কাছে খবর পেলেন, এক পাষণ্ড তিন শিশুকে হাত পা বেঁধে রেখেছে চিলেকোঠার ঘরে। রাখালকে নিয়ে মাসি থানায় গেলেন। পুলিশের সাহায্যে ধরা পড়লো বিরাট শিশু পাচারকারী দল। রাখাল অই মালিকের কাছেই কাজ করতো। তিনজন শিশুকে কাঁদতে দেখে রাখালের সন্দেহ হয়। তারপর মাসি জিজ্ঞেস করাতে সব ছবি পরিষ্কার হয়ে যায়। রাখালকে মাসি অনাথ আশ্রমের এক অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করলেন।
এইভাবে মাসি এলাকার মানুষের কাছে মা বলে পরিচিত হলেন। তিনি এবার আর একটি আশ্রম গড়ে তুললেন শালারে। এইভাবে মাসির পাঁচ পাঁচটা আশ্রম চলছে সুন্দর পরিবেশে মানুষের সহায়তায়।     

অর্পিতার বাবাও খুব দয়ালু লোক ছিলেন। তিনি একবার অর্পিতাকে বলছিলেন একটা অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেছিলেন, একবার মহালয়ের সকালে আকাশের সাথে কাশফুলের রং ছড়ানো প্রতিযোগিতা চলছে! এমন সময় শরতের মেঘ ঝরিয়ে দিলো রূপোলি বৃষ্টি। চারদিকে মহা সমারোহ প্রকৃতির বুকে। পুজো আসছে কিনা। তাই তাদের সময় নেই থমকে থাকার। পুজোর পাঁচটা দিন নদীর তীরে বসে থাকতে ভালো লাগে। কতকগুলো ঝুপড়ি বাসা জুড়ে অবহেলিত মানুষের বাস। পুজোর দিনে নগ্ন দেহমনে খিদের ছাপ। বসে আছি পুজোর প্রথম দিনে। আমার পরিধানে নতুন জামা দেখে আদুল গায়ের দুটি শিশু কাশফুল চিবোচ্ছে আর অবাক চোখে নতুনের গন্ধ খুঁজছে জামার ভাঁজে ভাঁজে। আমার বমি আসছে। চিকেন পকোরা পেটের মধ্যে বিরোধ শুরু করেছে। হাল্কা হয়ে শিশু দুটিকে বসিয়ে গল্প শুরু করলাম। দূর থেকে ঢাকের শব্দ ভেসে আসছে। শিশু দুটি মাথা দোলাচ্ছে। কাশ ফুলের গোড়া থেকে তখনও খাদ্যপ্রাণ শুষে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে দুজনেই। থাকতে না পেরে বললাম, তোদের বাড়ি কোনটা?  চল আমাকে নিয়ে চল। শিশু দুটির বাড়ি গিয়ে মাটির বারান্দায় বসলাম। তাদের মা বেরিয়ে এলো। গামছা জড়ানো গায়ে। কারণ শাড়িটি শতচ্ছিন্ন। আমি বললাম, ওদের বাবা কোথায়? মুখে কথা না বলে ইশারায় দেখিয়ে দিলো। দেখলাম সকাল থেকে নেশা করে পরে থাকা মাতালের মতো ওর অবস্থা। একবার মুখ তুলে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে সে শুয়ে পড়লো। চোখে ঘুম নিয়ে ওদের জন্ম। না দেখাই ভালো। ওরা চোখ খুলে চেয়ে থাকলে বিপ্লব ঘটে যাবে রাতারাতি। ঘুম ওদের ভুলিয়ে রাখে খিদের জ্বালা। পাঁচশো টাকা দিয়ে তাদের মাকে বললাম, মা তুমি চাল ডাল মাছ এনে রান্না করো। আমিও তোমাদের সাথে বসে খাবো। আমার মা ডাকে গামছা দিয়ে চোখ মুছে সে দোকানের দিকে পা বাড়ালো। পিছন থেকে আমি দেখলাম আমার দেশের একজন মা তার শিশুদের আহারের ব্যবস্থা করার জন্য দৃপ্ত দুই পায়ে এগিয়ে চলেছে…

বাবার ছায়ায় অর্পিতা মানুষ হয়েছে তার চেনা জগতে। ভোরের আজানের সঙ্গে সঙ্গেই তার বন্ধুর আম্মির মুখ দেখে শুরু হতো তার দিন। সারাদিন স্কুলে কাটতো ছেলেবেলার জগৎ। মনে পড়ে স্কুল থেকে এসেই ব্যাট হাতে বেরিয়ে পড়তো ছেলে মেয়ে একসাথে ক্ষেত্রপালতলার মাঠে। খেলার থেকে গল্প হতো বেশি ৷ জাহাঙ্গীর, মতিউল্লাহ, সিরাজ, ইজাজুর, সামিম, সুদীপ্ত, বাবু, ভম্বল, বিশ্বরূপ, মিলু, অধির সব বন্ধুরা জড়ো হতো ক্রিকেট খেলবে বলে। খেলার শেষে বসে গল্প করতো। প্যান্ট না পরে ছেলেরা মাঠে না এলে বকাবকি করতেন। পাজামা পরে খেলার অসুবিধা। বলতো, বিরাজুল। বল লেগে একবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলো এক বন্ধু। ধীরে ধীরে সকলের প্যান্ট পরে আসার অভ্যাস হয়ে গেলো। ম্যাচ খেলতে যেতাম অনেক জায়গায়। একবার বিল্বেশ্বর গ্রামের টিমকে হারিয়ে জিতেছিলাম এক হাঁড়ি রসগোল্লা। সুধীনবাবু ধরিয়ে দিলেন বিরাজুলের হাতে ক্যাপটেন হিসেবে। সবাই ভাগ করে খেলো। পুরস্কারের এই অভিনবত্বে অধুনা কানাডা বাসী মিলুদা খুব খুশি হয়েছিলেন। আমাকে কোনোদিন মেয়ে বলে মনে করেনি। বন্ধুর কোনো লিঙ্গভেদ করতো না তারা। তখন ১৯৮০সাল। তারা দশজন বিল্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল। একটা রেকর্ড রেজাল্টে সবাই খুশি হয়েছিলেন সেবার। তারপর জীবন যুদ্ধে সবাই আলাদা হয়ে গেলো। পরে কে যে কোথায় পড়তে গেলো কোনো খবর পেল না। কিন্তু পুরোনো অনেক ক্লাসমেটের সঙ্গে যখন দেখা হয়, মনে পড়ে যায় পুরোনো দিনের কথাগুলো। একবার স্কুল থেকে ছাত্রদের নিয়ে বেড়াতে গেছিলেন স্কুলের শিক্ষক মহিমবাবু। ঘুরে এসে অজয় নদীর ধারে যখন এল, তখন রাত্রি দশটা বেজে গেছে। নদীতে বর্ষার উদ্দাম গতি। কানায় কানায় ভর্তি জল। মহিমবাবু চিন্তায় পড়ে গেছেন, কি করে চল্লিশটা ছেলেমেয়ে নদী পার হবে। হঠাৎ সবাই অবাক হয়ে চেয়ে দেখল পাঁচজন সাহসী ছেলে হাফ প্যান্ট পরে খালি গায়ে লাফিয়ে পড়লো জলে। তারা সবাই হায় হায় করে উঠল ভয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটো নৌকো নিয়ে তারা ছেলেদের নদী পার করছে। মহিমবাবু বললেন, মাঝিরা এলো না? শ্যাম বললো, স্যার চিন্তা করবেন না। ওদের ঘুমের ব্যাঘাত না করে আমরা নৌকো নিয়ে এসেছি। ওরাও জানে শ্যাম থাকলে কোনো ভয় নেই। মহিমবাবুর চোখে জল এসে গিয়েছিলো। দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন দামাল পাঁচ ছাত্রকে।
এই রকম খোলামেলা পরিবেশে মানুষ হয়েছিলো অর্পিতা। দানবীর খোলামেলা মানুষ অর্পিতার বাবা। তার রক্ত শিরায় শিরায় প্রবাহিত। হয়ত তার জন্যই অর্পিতা মানবসেবায় ঝাঁপ দিতে চাইছে।

অর্পিতা দেখছে একদিকে হাসিখুশি জাঁকজমকের জীবন। একরাশ শিউলির হাতছানি। আরেকদিকে কষ্ট, প্রবল বিপদের মত জীবন নদীর স্রোত।  কোনটাকে বেছে নেওয়া উচিত অর্পিতার। সে বিবেকের কাছেই প্রশ্ন রাখছে। উত্তর দেবে আগামীদিনের পথ…