বিহারিলালের উল্টোরথ
সদানন্দ সিংহ
ঘর ছাড়িয়ে চারুবাঁক পেরিয়ে ডানদিকে মোড় নিলে প্রথমেই যে একমাত্র তেঁতুলগাছটা নজরে আসে, সে গাছটা আরো কতোদিন বেঁচে থাকবে বিহারিলাল সেটা জানে না। যে জালালি কবুতরটি তার ঘরের টিনের চালে একা একা বসে থাকে, সে কবুতরটি কোনোদিন সঙ্গী জোটাতে পারবে কিনা তা সে জানে না। যে ফানুসটা একটু আগে তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেছে, সেটা যে কেন গেছে তা সে জানে না। আজ এতোদিন পরে তার তাপ্পিমারা চপ্পলের একটা কী করে যে দু টুকরো হয়ে গেছে তাও সে জানে না।
আসলে বিহারিলাল পৃথিবীর অনেক কিছুই জানে না। সত্যি বলতে কী, আসলে সে জানতেও চায় না। কীই বা হবে জেনে! মালিকের রিক্সা, পরিশ্রম আর কিছু খাবার – এ নিয়েই তার একার জীবনটা বিচ্ছিরিভাবে কেটে যায়।
হ্যাঁ, তার জীবনে আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হচ্ছে শনিতলার ছিলিম।
ঘরে ফেরার আগে প্রতিদিন সে ছিলিমে বেশ কয়েকটা সুখটান। আঃ। কী আরাম, শরীরের কষ্টগুলি যেন কোথায় হারিয়ে যেতে থাকে। তারপর সে যেন পৃথিবীটাকেই ঘোরাতে থাকে। বেশ মজা লাগে তার। অন্যসময় পৃথিবীটাই তাকে ঘোরায়। নিঃস্ব করে দেয়। আর ছিলিমে টান পড়লেই তার উল্টো হয়, সেইই তখন পৃথিবীটাকে ঘোরায়। তখন সে ইচ্ছে করলেই দেখে, এক স্বপ্ন-ধোঁয়ার ভেতর উল্টোদিক থেকে এক রথ তার দিকে আসছে। সে রথে জগন্নাথ থাকেন না। সে রথে বিহারিলাল নামক আহাম্মক লোকটিই বসে থাকে। আর সে বিহারিলালেরও দু’হাত কাটা। তাই শনিতলায় বসে বিহারিলাল হাসে। প্রাণ খুলে হাসে। হা হা হা হা। হা হা হা হা। তারপর হঠাৎ সে উঠে দাঁড়িয়ে ভাবে, রথটাকে একটু জায়গা করে দিতে হবে। তাই সে এবার চেঁচায়, সরে যান, সরে যান, রথ আসছে। আর আশ্চর্য, পথচারী লোকজনেরাও সরে যায়।