সদানন্দ সিংহের ছড়া
খিচুড়ি সদানন্দ সিংহ যায় যে দিন যায় যে ক্ষণ সামলে কানাই। হায় রে মন যখের ধন আগলে বেড়াই। কুলপতি ডন পা-চাটা হন ভাইরে ভাই। সুতোর পণ পলাশ বন খিচুড়িই বানাই।
খিচুড়ি সদানন্দ সিংহ যায় যে দিন যায় যে ক্ষণ সামলে কানাই। হায় রে মন যখের ধন আগলে বেড়াই। কুলপতি ডন পা-চাটা হন ভাইরে ভাই। সুতোর পণ পলাশ বন খিচুড়িই বানাই।
চোখ বনাম হৃদয় বলাই দে দেখা কি যায় খালি চোখে হৃদয় ছাড়া ? হৃদয়হীনের জীবনব্যাপী কেবল তাড়া! ‘আমি আমি’ ভাবের ঘোরে জীবন কাটে, হৃদয়বান হেঁটেই চলেন জীবন হাটে। চোখ থেকেও দেখেন কেবল নাকের ডগা, সবকিছু তার হাতের মুঠোয় হায় দারোগা! হৃদয়বান খোঁজেন কেবল মুক্ত হাওয়া, হারজিতের আজব খেলায় নেই পরোয়া। গায় যে গীতি হৃদয় দিয়ে এতেই বাঁচে, ফুরফুরে রয় ভিতর ভুবন সদাই নাচে। মনুষ্যত্বের পতন হলে বুকটা ভারী, হৃদয়হীন চিরদিনই চালায় হুকুমদারি! ঢেউয়ে ঢেউয়ে বলাই দে পার হয়ে যায়…
হাতুড়ের কেরামতি বলাই দে হাতুড়ে হাতড়ে মরে পায় না খুঁজে নাড়ি, রোগী কেবল মূর্ছা যে যায় বুকটা ভয়ে ভারী। কোন্ ওষুধে ধরবে খুঁটি কেমন করে কবে? মরণ থেকে আসবে ফিরে মর্তের এই উৎসবে! কপালেতে ফুটেছে ভাঁজ চিন্তা কিযে চিন্তা, তুড়ি মেরে কথার পিঠে চললো এতদিন তা। রোগের কারণ জানা যাদের তাঁরা যে হায় ব্রাত্য, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতায় নিদান দিতে পারতো! হেলা ফেলায় কেটেছে দিন বেহাল দশায় রোগী, ঝাড়ফুঁকের জোর আয়োজন যোগব্যায়ামে যোগী। বুকের ভেতর ঘড়ঘড়ানি চলছে উর্দ্ধশ্বাস, শ্মশান যাত্রার…
গাঁজাখোর সদানন্দ সিংহ গাঁজায় মেরে এক টান, বলেন তিনি, ব্যোম ব্যোম ভোলা।। গাঁজায় মেরে দু টান, হাসেন তিনি, চোখ এবার ঘোলা।। গাঁজায় মেরে তিন টান, স্থির তিনি, খোঁজেন কেবল চেলা।। গাঁজায় মেরে চার টান, দাঁড়ান তিনি, শূন্যে চালান ঠেলা।। গাঁজায় মেরে পাঁচ টান, চিৎ তিনি, শূন্যে ভাসান ভেলা।।
শেষ হয় বলাই দে ঘটনার ঘনঘটা স্মৃতি পটে দগদগে, চেতনায় হানা দেয় ফোটে খুব টগবগে। পথে পথে কেটে যায় জীবন আর যৌবন, বালি খুঁড়ে বালি শুধু বায়ু ছোটে বনবন। অপলক চোখ দুটি বেদনার মুখ ছবি, একরূপে প্রতিদিন কিবা সোম কিবা রবি! কেবা শোনে ফরিয়াদ কেইবা দেয় আশ্বাস, ভাবে শুধু দিনরাত বিধাতার পরিহাস! মেতে থাকে জনপদ যার যেমন ধান্দায়, কেন আর রাখে মনে নিঃস্ব এই বান্দায়! ফিরে ফিরে আসে ওই জীবনের কালবেলা, এইভাবে শেষ হয় জীবনের যত খেলা! শূন্যে বিলীন…
সূর্যকান্ত সদানন্দ সিংহ ইয়া বড়ো পেশি তুলে গোঁফে দিয়ে তা, সূর্যগ্রহণ দেখতে গিয়ে অন্ধ হলেন আজ, সূর্যকান্ত ঝাঁ। অন্ধ হয়ে কাঁদে এখন, গোঁফ চোখ একাকার। দিনের ছবি মনে ভাসে, দিগন্ত আজ সীমাহীন অন্ধকার। মা কাঁদে বৌ কাঁদে; তবে আশায় পুত্র-কন্যা, শেষ চিকিৎসা চোখের ডাক্তার, চলো এবার, আশা ষোল আনা।
শাপে বর প্রভঞ্জন ঘোষ চাঁদের কালো চাঁদ ছাড়ে না- কালির কাজল চোখে টেনে চন্দ্র মুখটি ভরিয়ে তোলে মুখের শোভা আরো চতুর্গুণে। বাঁশির ছিদ্র বাঁশ ছাড়ে না তাতেই হাওয়া চালান ক’রে সকল বাঁশি প্রাণ ভ’রে দেয় মনমাতানো মধুর সুরে-সুরে। ফলের আঁটি ফল ছাড়ে না তাল তথা আম তাতেই খাঁটি তাইতো দেহ যায় না ভেঙে আছাড় পেয়ে স্পর্শ ক’রে মাটি। খাটের নিদ্রা খাট ছাড়ে না তাতেই দেহ আঁকড়িয়ে ঘুম সোজা সকল চিন্তা, সকল ব্যথা এক নিমেষে দূর ক’রে হয় তাজা!
শাসক বলাই দে অনেক অনেক বাদশা ছিল সারা বিশ্ব জুড়ে, ইতিহাসের পাতায় পাতায় পাবেই খুঁজে খুঁড়ে! বাদশাহের আরাম আয়েশ ছিল হারেমখানা, চলন বলন ডগমগানো কতনা খানসামা! জাহাঁপনার লোক লস্কর ছিল কতই নবাব, হুকুমদারি তামিল করার লোকের কী আর অভাব! নবাব সাহেব খুব দাপুটে মেজাজ ছিল খুব, মৌ সাহেব ওই জমিদার সব ভোগবিলাসে ডুব। বাদশা নবাব রাজরাজারা ইতিহাসেই আছে, গণতন্ত্রের স্বৈরাচারী তেমন করেই বাঁচে। প্রজা বৎসল রাজা যিনি হৃদয় জুড়ে রণ, প্রজা পীড়ক শাসক যতই বিতাড়িতই হন! বেচেন্দ্রদা বলাই দে…
কত্তা সদানন্দ সিংহ রাশভারী কত্তা আপিসের বস, সর্বদা মনটা ছন্দহীন ধস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, নায়কী জুন্টা সুনামের যশ। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, ভালোবাসে ভর্তা আলুর রস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, বৌয়ের গোট্টায় ইজ্জত লস।
খয়ের খাঁ সদানন্দ সিংহ লোকটি হলেন খয়ের খাঁ। হুজুর হুজুর বললেই যিনি হাসিমুখী হয়ে তিনি পিঠে দেন খুশির ঘা। কেউ যদি বলে, মামা। বা হুজুর হুজুর না বলে দেখেও না দেখার ভান করলে রাগে তিনি অগ্নিশর্মা। হিসেব চলে, কে শত্রু কে মিত্র কাকে জমাবে, কাকে দমাবে মালার ভাগী কে হবে আঁকেন তিনি চিত্র-বিচিত্র। উঠোন ধ্বংসে মত্ত তিনি তোয়াক্কা করেন না কাউকে দুর্গন্ধ খুঁজেন শুঁকে বাঞ্ছারামেরও আপদ ইনি।