সদানন্দ সিংহের ছড়া
কত্তা সদানন্দ সিংহ রাশভারী কত্তা আপিসের বস, সর্বদা মনটা ছন্দহীন ধস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, নায়কী জুন্টা সুনামের যশ। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, ভালোবাসে ভর্তা আলুর রস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, বৌয়ের গোট্টায় ইজ্জত লস।
কত্তা সদানন্দ সিংহ রাশভারী কত্তা আপিসের বস, সর্বদা মনটা ছন্দহীন ধস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, নায়কী জুন্টা সুনামের যশ। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, ভালোবাসে ভর্তা আলুর রস। রাশভারী কত্তা আপিসের বস, বৌয়ের গোট্টায় ইজ্জত লস।
শাপে বর প্রভঞ্জন ঘোষ চাঁদের কালো চাঁদ ছাড়ে না- কালির কাজল চোখে টেনে চন্দ্র মুখটি ভরিয়ে তোলে মুখের শোভা আরো চতুর্গুণে। বাঁশির ছিদ্র বাঁশ ছাড়ে না তাতেই হাওয়া চালান ক’রে সকল বাঁশি প্রাণ ভ’রে দেয় মনমাতানো মধুর সুরে-সুরে। ফলের আঁটি ফল ছাড়ে না তাল তথা আম তাতেই খাঁটি তাইতো দেহ যায় না ভেঙে আছাড় পেয়ে স্পর্শ ক’রে মাটি। খাটের নিদ্রা খাট ছাড়ে না তাতেই দেহ আঁকড়িয়ে ঘুম সোজা সকল চিন্তা, সকল ব্যথা এক নিমেষে দূর ক’রে হয় তাজা!
শাসক বলাই দে অনেক অনেক বাদশা ছিল সারা বিশ্ব জুড়ে, ইতিহাসের পাতায় পাতায় পাবেই খুঁজে খুঁড়ে! বাদশাহের আরাম আয়েশ ছিল হারেমখানা, চলন বলন ডগমগানো কতনা খানসামা! জাহাঁপনার লোক লস্কর ছিল কতই নবাব, হুকুমদারি তামিল করার লোকের কী আর অভাব! নবাব সাহেব খুব দাপুটে মেজাজ ছিল খুব, মৌ সাহেব ওই জমিদার সব ভোগবিলাসে ডুব। বাদশা নবাব রাজরাজারা ইতিহাসেই আছে, গণতন্ত্রের স্বৈরাচারী তেমন করেই বাঁচে। প্রজা বৎসল রাজা যিনি হৃদয় জুড়ে রণ, প্রজা পীড়ক শাসক যতই বিতাড়িতই হন! বেচেন্দ্রদা বলাই দে…
খয়ের খাঁ সদানন্দ সিংহ লোকটি হলেন খয়ের খাঁ। হুজুর হুজুর বললেই যিনি হাসিমুখী হয়ে তিনি পিঠে দেন খুশির ঘা। কেউ যদি বলে, মামা। বা হুজুর হুজুর না বলে দেখেও না দেখার ভান করলে রাগে তিনি অগ্নিশর্মা। হিসেব চলে, কে শত্রু কে মিত্র কাকে জমাবে, কাকে দমাবে মালার ভাগী কে হবে আঁকেন তিনি চিত্র-বিচিত্র। উঠোন ধ্বংসে মত্ত তিনি তোয়াক্কা করেন না কাউকে দুর্গন্ধ খুঁজেন শুঁকে বাঞ্ছারামেরও আপদ ইনি।
হেরে যাবার ডর বলাই দে সাতেও নাই পাঁচেও নাই আছি হাওয়ার সাথে, দেখেও না দেখার ভান আছি দুধে ভাতে! ‘মানবতা আর মনুষ্যত্ব’ উঠলো যদি কথা, আমি বাপু এড়িয়ে চলি ‘নীতি’ নিরপেক্ষতা। মাঠে নেমে লড়াই করে মেঠো রাজনীতি, আছি আমি ভালোই আছি নাই হারাবার ভীতি। যুক্তিতর্কে বোঝাও যতই মানছি না সেই যুক্তি, নিজের নাকের ডগায় আমি খুঁজে ফিরি মুক্তি! ঘরের খেয়ে বনের মোষ যারাই তাড়ায় নিত্য, আগাছা সব আমার কাছে দেখেই জ্বলে পিত্ত। নিজে বাঁচাই আমার কাছে বেঁচে থাকার শর্ত,…
পূজো-পূজো প্রভঞ্জন ঘোষ ঘাসের ডগা শিশির ফোঁটা শরৎ ঋতু শিউলি ফোটা। ডোবা-পুকুর শাপলা, শালুক পুকুর-ডোবা মাছের মুলুক। সকাল-সন্ধ্যা হীম-কুয়াশা ঐ তাল গাছ বাবুই বাসা। সূর্য পাটে রাঙ্গা আলো মেঘ আকাশে পেঁজা তুলো। সন্ধ্যে নামে তুলসি তলা শাঁখের আওয়াজ প্রদীপ জ্বলা। বারান্দা-খাট মাদুর পাতা ভাই-বোন, পেন …
মিছামিছি সদানন্দ সিংহ আছাড় খেয়ে, পড়ে গিয়ে লোকটা বলে, বাবা রে।। পরের জান, পরের প্রাণ থুক্কু বলে, পালা রে।। আপনি বাঁচলেই, বাপের নাম আর যে সব, মিছে রে।। নজরদারি ব্যবসাদারি সব যে খতম হলো রে।। কানা মাছি ভোঁ ভোঁ তোমার দেখা আর নাই রে।।
বিকল হলে বলাই দে চাকা যদি হয়রে বিকল হুংকারে কী চলে গাড়ি, অর্থশাস্ত্র রাজনীতি নয় এইটুকু তো বুঝতে পারি। দেশাত্মবোধ ভিন্ন ব্যাপার হয়তো একটু আবেগ তাড়া, নুন আনতে পান্তা ফুরায় কীইবা করে হতচ্ছাড়া! রোজগার কই, কেইবা দেবে গা খাটিয়ে উদর পূর্তি, আকাশ তলে গাছের নীচে তাদের আবার কিসের ফুর্তি। বেঁচে থাকার হাজার হ্যাপা কথাটুকু কে না জানে, পকেটে নাই কানাকড়ি যাবে সে কোন্ দোকানে? দেশেই থাকো দেশেই বাঁচো ছুঁড়ে ফেলো পুড়ে ফেলো, নদীর জলে উদর পুরে কর্তাবাবুর পাঁপড় বেলো।…
চোখের মণি বলাই দে সব তথ্যই পৌঁছে যায় মন্ত্রবলে, এই ভাবেই বাড়ে ফসল সুকৌশলে। দাদাই বড় শুভাকাঙ্ক্ষী প্রাণের সখা, টপাটপ ভাঙছি সিঁড়ি শুধুই একা! পিছনে রয় পড়ে রয় বাকিরা সব, ঝড়ের বেগে ছুটছে ঘোড়া আজকে পরব! সবই কেমন হাতের মুঠোয় দেয় যে ধরা, সাদামাটাই ছিলাম বটে হতচ্ছাড়া! আজকে এই জগৎ খানা আকাশ ছুঁয়ে, সবই কিছু সামনে আমার পড়ছে নুয়ে! ক্ষমতার পাঁকে পাঁকে লেপ্টে গেছি, আমি ‘দানি’ চোখের মণি হয়েই বাঁচি! গণতন্ত্র বলাই দে শাসন চলে শোষণ চলে বেড়েই চলে…
আনাড়ি সদানন্দ সিংহ ডালিম গাছেই ডালিম পোকা, পোকার খবর রাখি না। ভেজাল খেয়েই বেঁচে আছি, শরীর নিয়ে ভাবি না। গায়েব রেস্ত সমজদার, ট্রাঙ্কে ড্রয়ারে কাড়ি কাড়ি। মোর যে কিছু বলার নাই, মুই যে এক বাল আনাড়ি। ডাইনে বাঁয়ে সামলে চলি, অধিকার নিয়ে লড়ি কম। তিনিই দেখবেন আশা করি, দেখি না যে কোনোই ভ্রম। লাভক্ষতির দোহাই গেয়ে, মাঝে মাঝে ফেলি ছিপ। পাপপুণ্যের চোরাস্রোতে, দিশাহারা দিগ্বিদিগ।