সপ্তাহের শেষ শনিবার – বিজয়া দেব

সপ্তাহের শেষ শনিবার – বিজয়া দেব

সপ্তাহের শেষ শনিবার    (ছোটোগল্প)

বিজয়া দেব

সকালবেলায় সূর্য যখন প্রথম উঠছে, আলোর রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে, যখন দু’চারটে পাখি কিচিরমিচির করে প্রকৃতিকে বিকশিত করছে, তখন আহত মনে কুবলয় পাশ ফিরে ঘুমন্ত সন্তানকে দেখে। শিশু আর প্রকৃতি বড় কাছাকাছি। একে অপরের হাত ধরে আছে। সে জানে না তার বাবা আজ থেকে তার অপদার্থ বাবাতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই কাফকার মেটামরফোসিসের বিশাল পোকায় রূপান্তরিত হয়েছে সে। হঠাৎ করেই তার সন্তানকে সুস্থিরভাবে বড় করে তোলার সামর্থ্য হারিয়েছে। সে তার চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছে, গতকালই বিকেলে জানতে পারল, আগে থেকে কিছুই সে জানত না, হঠাৎ করেই, আগাম কোনও মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই। তার মতো আরও জনা পঞ্চাশ জনের ভাগ্যের চাকা উল্টোদিকে ঘুরে গেছে। তাদের সংস্থার নাকি ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছিল, তাই অন্য আরেকটি লাভজনক সংস্থার সাথে ওটাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আর কর্মী কমিয়ে দেওয়া হয়েছে জনা পঞ্চাশেক।
সেই অমল শৈশবে সে বাবা জ্যাঠাদের কাছে শুনেছে চাকরি একবার পেলে নাকি সহজে চলে যায় না। চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন তেমনই চলে যাওয়াও নাকি খুব কঠিন। কিন্তু সে-ই অনড় বিশ্বাসে এখন চিড় ধরে গেল। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। আজ থেকে তার কোনও কাজ নেই, কোথাও যাওয়ার নেই। তবে আজ শনিবার, আগামীকাল রবিবার। দুটোদিন বন্ধ।

সোহিনী ছাদে দাঁড়িয়ে তখন প্রকৃতি দেখছে। সেই সময় একটি বুলবুলি কিছু একটা দেখে উড়ে গিয়ে ঠোঁটে করে নিয়ে এসে তার সাথীর মুখে গুঁজে দিল। সেই বুলবুলিটি হতে পারে তার বড় হয়ে যাওয়া সন্তান কিম্বা তার প্রণয়িনী। পশুপাখির জগত নাকি বড় হয়ে গেলে তার সন্তানকে চিনতে পারে না। কে জানে! তারা যে বার্তালাপ করে তা একেবারেই নিরর্থক কি না কে জানে! চারদিকে ছড়ানো খাবার, পয়সা খরচ করে কিনে খেতে হয় না। খুঁটিয়ে খেয়ে নিয়েই হয়তো পেট ভরে, কারও দ্বারস্থ হতে হয় না। মাথার ওপর কোনও মালিক নেই, ঈশ্বর ধর্ম কিছু বোঝে না। এদের কোনও মালিক নেই, এদেরকে কেউ গায়ের জোরে খাটাতে পারে না। মানুষকে এরা বিলকুল বিশ্বাস করে না, কাছে গেলেই উড়ে যায়। তবে এদের মধ্যেও কিছু দুর্ভাগা পাখি আছে, যারা মানুষের ফাঁদে ধরা পড়ে, তোতার বুলি শেখে, মানুষের মজা দেখার পাত্র হয়।
পুব দিকে লাল হয়ে সূর্য উঠছে। সোহিনী দুচোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে, লাল আলোয় ভরে গেছে তার বন্ধ করে রাখা দু’ চোখের বলয়। অপূর্ব সেই রক্তিমাভা। লাল কোথাও গাঢ়, কোথাও কমলা…. আচ্ছা সূর্যমন্ত্রটা কি ছিল? হ্যাঁ, মনে পড়েছে – ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম/ ধান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম।
বাংলা অর্থ কী চমৎকার – জবা ফুলের মতো লালবর্ণ, অন্ধকার বিনাশী সব পাপ বিনাশকারী কশ্যপনন্দন সূর্যকে প্রণতি।
বাকি সবটাই সত্য এবং চমৎকার কিন্তু “সর্ব পাপ বিনাশকারী” কথাটা?
— সোহিনী?
সোহিনী ঘুরে তাকায়। কুবলয় অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে।
— পমপম?
— ঘুমোচ্ছে।
— ও।
সোহিনীর পাখপাখালি আকাশবাতাস সূর্য গাছপালা বড় কাছের। ছাদে বাগান করেছে। এদের সন্তানের মতো পরিচর্যা করে।
কুবলয় এখনও ঐ খারাপ খবরটি জানায়নি, কিন্তু জানানো দরকার। তবে এই সকালবেলায় এই নবোদিত সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আমার চাকরি চলে গেছে’ এই কথাটা সোহিনীকে বলার সাহস তার হলো না। পরিবর্তে সোহিনী তাকে বলল — চা খাবে? প্রাতঃকর্ম শেষ হলো?
তার মুক্তোর মতো দাঁতের সারিতে সূর্যালোক ঝলসাচ্ছে। সোহিনীর মধ্যে এক নিষ্পাপ সৌন্দর্য আছে। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে সোহিনীকে দেখতে লাগলো। মনে হলো, এইরকম একটি নিষ্পাপ মুখশ্রীর বড় দরকার এই মুহূর্তে, এই মহাশূন্যতার নির্বান্ধব অসহায় সময়ে। সে এই দু:সংবাদটি যদি আদৌ না দেয়? কি হতে পারে তাহলে? নাহ আজ সে এই খবরটি মোটেই দেবে না, দেখা যাক কী হয়। আপাতত চলুক। সে যদি ভাবতে পারে আদৌ কিছুই হয়নি, যেমন ছিল তেমনই আছে, তাহলে সবকিছুই স্বাভাবিক বলে ভাবা যেতেই পারে অন্তত আজকের দিনটির জন্যে। কিন্তু ব্যাপারটা তো এখানে নয়, ব্যাপারটা অর্থকরী। আসলে টাকাই যে সব, বেঁচে থাকার মূল। এই যে সোহিনী, এই যে দেখেশুনে ভাড়া নেওয়া চমৎকার গোছানো দু’কামরার ফ্ল্যাটবাড়ি, এসবের পেছনে সেই টাকা। মাসান্তে স্যালারি একাউন্টে টাকা ঢুকে যাওয়ার বার্তাটি স্মার্টফোনের স্ক্রিনে আচমকা ভেসে ওঠা…. এমন চমৎকার এক শেষ বসন্তের ভোরে কুবলয়ের কান্না পেল। কান্না চাপতে সে সোহিনীর দিক থেকে পেছন ফিরে ছাদ থেকে নেমে গেল। সোহিনী একটু ভাবলো, তারপর সে-ও নেমে এলো। ঘরে এসে কুবলয়ের দেখা পেল না। বাথরুমের বন্ধ দরজা বাইরে থেকে ঠেলে দেখল ভেতর থেকে বন্ধ আছে, শোবার ঘরে পমপম অঘোরে ঘুমোচ্ছে, আজ ছুটির দিন, শনিবার, আজ কাল দু’দিন একটু তো হাঁফ ছাড়া যায়। কুবলয় অত:পর বেরিয়ে এলো।
চা খেতে খেতে সোহিনী লক্ষ করল, কুবলয় একদম কথা বলছে না। নাহলে চা খেতে খেতে টুকিটাকি কথা তাদের নিত্যকার অভ্যাস। চা খাওয়া শেষ হলে সোহিনী চায়ের বাসনপত্র গোছাতে গোছাতে বলে — কি ব্যাপার ? এতো চুপচাপ যে!
কুবলয় খবরের কাগজ মেলে ধরে মুখটা ঢেকে নেয়। আয়নায় সে নিজের কাছে নিজে ধরা পড়ে গেছে আর সোহিনীর চোখে এই পরিবর্তন চোখে পড়বে না? নিশ্চিত পড়বে।
— মনে হচ্ছে আমাকে আর মনে ধরছে না, পরকীয়ায় লিপ্ত হলে?
কেন যে কুবলয়ের মুখে কথা জোগায় না, মনে হয় এখান থেকে পালিয়ে যায়! মিথ্যে মুখে আসে না। এই ভয়ানক ঘটনা আজ বাদে কাল সোহিনী জানতে পারবেই। তবু মনে হয় আজকের ছুটির দিনটা ঠিকঠাক যাক। কিন্তু সে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না। নাটক করতে সে কেন শেখেনি কে জানে! তরতর করে জীবন বয়ে চলে, তার মধ্যে একটা দিন ভালো থাকাটাই অনেক। কিন্তু সে নিজের মনটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারছে না।
সোহিনী একটানে মুখের সামনে ধরে রাখা খবরের কাগজ সরিয়ে দিয়ে বলে — আমার চোখে তাকাও। কি হলো? তাকাচ্ছ না যে! কি লুকোচ্ছ তুমি? আমার চোখে তাকাও! তাকাও বলছি!
কুবলয় তাকাতে পারে না। তার দু’ চোখ জলে ভরে আসছে।
— তুমি কাঁদছ? এতো শুকনো মুখ! রাতে ঘুমোও নি মনে হচ্ছে। শরীর খারাপ? ডাক্তার দেখিয়েছ বুঝি আমাকে লুকিয়ে? ডাক্তার বুঝি ভয় লাগিয়ে দিয়েছে? দাদা বৌদি ঝিল্লি ওরা সবাই ভালো তো?
কুবলয়ের এক দাদা থাকে দেশের বাইরে। সে থাকে য়ুরোপের একটি দেশে। একটি মেয়ে তাদের ঝিল্লি। পড়াশোনায় দাদা ছিল ভালো, কুবলয় সাধারণ, মাঝারি। দাদা কুণাল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর সে একটি সরকারি হস্তশিল্পের অফিসের সামান্য করণিক। হস্তশিল্পের বাজার মার খাচ্ছে ব্যাপারটা মাঝেমধ্যে কানে আসছিল, কিন্তু এভাবে আচমকা পঞ্চাশজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে সে তার আঁচটুকুও পায়নি। হঠাৎ, হঠাৎ, একেবারেই হঠাৎ, এ যেন বিনামেঘে বজ্রপাত।
কুবলয়কে কখনও কাঁদতে দেখেনি সোহিনী। গড়পড়তা সাধারণ মানুষ, অতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকলেও ইদানীং তারা দুজনেই একটা নিজস্ব বাড়ি করার স্বপ্ন দেখছিল। সোহিনী মাইনে থেকে একটা অংশ সরিয়ে নিয়ে বলত এটা ব্যাংকে রেখে এসো, কুবলয় আমতা আমতা করতো, এতো কম টাকায় চালাবে কী করে!
— সে তোমায় ভাবতে হবে না। হ্যাঁ গো, যে টাকা আমরা ব্যাংকে রাখছি, সেই এমাউন্ট ব্যাংকে ই এম আই দিলে হয়ে যাবে না?
— পাগল হয়েছ? এতে হবে না।
— আমি ভাবছিলাম এখনই ফ্ল্যাট দেখা শুরু করে দিলে ভালো। এখনও পমপম ছোট, ওর পড়াশোনার চাপ বাড়লে আর কিছুই করতে পারবে না, মানে সম্ভব হবে না। তার আগে মাথার ওপর নিজস্ব ছাদ চাই।
কুবলয় ভাবত, আরও কিছু টাকা ব্যাংকে জমুক। তারপর হবে। কেন হবে না? পরিকল্পনা থাকলে সব হয়। তাছাড়া সোহিনী গোছানো গৃহিণী। যদিও সে একটু আপনভোলা, তবু সংসারটাকে সে একেবারে আঁকড়ে ধরে আছে। না না এই ভয়ংকর সত্যিটা তাকে বলা যাবে না, কিছুতেই না।
সোহিনী কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর বলে — আজ বাজার যেতে হবে না, যা আছে তাই দিয়ে চালিয়ে দেব।
কুবলয় একটু অবাক হয়ে সোহিনীকে দেখে। এই শনি রবিবার তারা একটুখানি ভালোমন্দ খায়। আজ সেটাকে ছেড়ে দিল সোহিনী কী ভেবে? সে কি বুঝতে পেরেছে? কিছু তো অবশ্যই। সে সোহিনীর চোখে তাকাল। দেখল সোহিনী তার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহিনীর চোখ বলছে, আমি সব বুঝতে পেরেছি। মুখে বলার দরকার নেই। এই কথাটা আজকের জন্যে বুকে রেখে দিলেই হয়তো স্বস্তি। মনে হোক না সবকিছুই ঠিক আছে। অন্তত একটা দিন তো মাথাটা শূন্য করে সাদামাটাভাবে কাটিয়ে দেওয়া চলে।

২.
সোহিনী জানে। তবে সে অপেক্ষায় ছিল। কোনও মতে যদি কুবলয় রেহাই পেয়ে যায়, তাহলে সংসারটা বেঁচে যাবে। নাহলে সামনে একটা গুরুতর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের সাথে জড়িয়ে যাওয়া। মানসিক প্রস্তুতি কি ছিল খানিকটা সোহিনীর? ছিল, ভয় ছিল, কুবলয় এমনিতেই একটু ঠান্ডা প্রকৃতির, একটা অপরাধী ভাব, দেশকালের খোঁজ রাখে কম। সময় কত দ্রুত পালটে যাচ্ছে, মিথ্যের বহরে সময় ক্রমশ ভারাক্রান্ত হচ্ছে, সত্যি মিথ্যে আলাদাভাবে চেনাটা খুব কঠিন, এই সময়ে এরকম গোবেচারা ভালো মানুষ ছাটাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অথচ অফিসে খাটুনিতে তার জুড়ি নেই।
সোহিনী ফ্রিজ খুলে দেখে চারটে সজনে ডাঁটা, তিনপিস রুই মাছের টুকরো, হাফ বেগুন, একটি কাঁচা আম, দুটো আদার টুকরো, একটি গন্ধরাজ লেবু রয়েছে। পমপম উঠে পড়েছে, চার বছরের পমপম ইসকুল যায়। তবে আজ তো ছুটি। আজ শনিবার। তার খাবার তৈরি করে দিল সোহিনী, যেন কিছুই হয়নি। ছেলেকে পড়ালো। পড়া শেষ করে কুবলয়কে বলল — ওকে নিয়ে একটু ঘুরে এসো তো। তারপর রোজকার মতোই রান্না করল। সজনে ডাঁটা, আলু, টম্যাটো আর তিন’পিস পোনামাছের হাল্কা ঝোল, মুগডাল, ঝিরিঝিরি করে একটা আলু আর একটা পেঁয়াজ ভাজা, কাঁচা আমের চাটনি। বাড়ি নি:শব্দ, তার রান্না করা মুগডালের ফোঁড়নের গন্ধ হাওয়ায় ভাসছে। পাশের ফ্ল্যাটের ধীরাজ তার বউ কেয়াকে বলে — সোহিনী রাঁধে ভালো, কী গন্ধ ছাড়ছে, আ:। কেয়া বলে — বলব ডেকে? শুনে খুব খুশি হবে। যাও না, আজ দুপুরবেলায় ওখানেই খেয়ে এসো।
ধীরাজ বলে — তোমরা ভারি হিংসুটে।
— তোমরা বলছ কেন, তুমি বলো। ভারি শয়তান লোক একটা।
এপারে সুখী দাম্পত্যের আলাপ চলে, ওপারে নিশ্চুপ দুটি ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে কুবলয় ভাবে এই ছাদ আর কতদিন তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে, কতদিন?
তারা কেউ কাউকে কিছু বলে না, পমপমকে মাছের টুকরো দেওয়া হয়, এদিন একটুখানি ভালোমন্দ খাওয়া হয়, পমপম জানে, তাই একটা ডিম দিয়ে সোহিনী কারুকাজ করে কী একটা সুস্বাদু স্পেশাল তৈরি করেছে, পমপম তাই পেয়েই খুব খুশি।
পমপমকে মাঝখানে রেখে তারা নিশ্চুপ খায়। কেউ কারো চোখের দিকে তাকায় না ভয়ে। যেন এক জ্বালামুখী বিস্ফোরণের জন্যে প্রস্তুতিপর্ব শুরু করেছে, চোখে চোখে তাকালেই তার বিস্ফোরণ ঘটবে এক্ষুনি।

৩.
ফুটপাতের পাশে হাঁড়িতে ভাত ফুটছে টগবগ করে। পাশের ঘরের কেয়াবৌদিদের গাড়িটা ঘ্যাঁস করে থামলো। ধীরাজবাবু ও কেয়াবৌদি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে। ভাতের ফ্যান উপছে পড়ছে। ধীরাজ ও কেয়ার চোখ আরও বিস্ফারিত হলো, তারা পেছনে কি দেখছে? একটা কোলকুঁজো মানুষ, একমুখ দাড়ি, এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসছে..
ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসল সোহিনী। পমপম ঘুমোচ্ছে। সে সন্তর্পণে বাইরে আসে। একচিলতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কুবলয়। পশ্চিমমুখো এই ছোট্ট ঝুলবারান্দা। নবমীর চাঁদ ঢলে পড়ছে। তাকে দেখে কুবলয় কথা না বলে চলে গেল। ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল নিশ্চয়ই।
একটা দিন আর রাত তারা কাটিয়ে দিতে পেরেছে যাহোক। ভোর হোক। আপাতত সবকিছু ঠিক আছে ভেবে নেওয়াটাই যদি স্বপ্ন হয়, হোক না! এখন ভোররাত, সকালের ভোরের আকাশ কেমন হবে ভাবতে ভাবতে ঘরে গিয়ে অতি সন্তর্পণে বিছানার এপাশটায় পমপমের পাশে শুয়ে পড়ল সোহিনী। ওপাশে তখন শুয়ে আছে কুবলয়। তার নি:শ্বাসের শব্দটাও কানে আসছে না।

সোহিনী নিরুচ্চারে বলে — ওগো, আগামীর ভোর, আগামীর সূর্য! তোমরাও তো একটুখানি সময় দেবে না, হে আদিত্য, তুমিও টুপ করে আলোকিত মুখটি দেখাবে ঠিক সময়মতো। একটুও ভাববে না, পরিস্থিতিবিশেষে আলোও বড় অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে কারও কারও কাছে।