গোবর্ধনের বাঁদরামি – সদানন্দ সিংহ

গোবর্ধনের বাঁদরামি – সদানন্দ সিংহ

গোবর্ধনের বাঁদরামি       (ছোটোদের গল্প)

সদানন্দ সিংহ

বহুদূর থেকে আমি একটা ডুগডুগির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। সেই ডুগডুগির একটা তাল আছে। আমি এই ডুগডুগির তালটাকে চিনি। এই তালে ভালুক বা বানর নাচে। আমি তাই সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে ছুটে যাচ্ছিলাম।
গিয়ে দেখি সত্যিই একটা লোক রাস্তার ধারে বানর নাচ দেখাচ্ছে। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সেই নাচ দেখছে বেশ কিছু লোক। কয়েকজন আবার সামনের সারিতে বসে বানরের খেলা দেখছে। আমি দেখলাম গোবর্ধনদা সামনের সারিতে বসে বানরের নাচ দেখছেন। আমিও গোবর্ধনদার কাছে গিয়ে বসলাম।
গোবর্ধনদা আমাকে দেখে খুশি হলেন। বললেন, তুমি ঠিক সময়েই এসেছ। তারপর একমনে বানরের লাফালাফি দেখতে দেখতে গোবর্ধনদা বললেন, দাদা বলেছিল চটপট কী করে কাজ করতে হয় তা শিখতে গেলে প্রথমেই বানরের আচরণ শিখতে হয়। আমি তাই বানরের আচরণগুলি ভালো করে লক্ষ করে শেখার চেষ্টা করছি। তুমিও শেখার চেষ্টা করো, কোনোদিন কাজে আসবে।
ভাবলাম, ক্ষতি কী, আমিও যদি গোবর্ধনদার মতো কিছু শিখতে পারি।
দেখলাম, বানরের খেলার কিছু দর্শক চলে যাচ্ছে, আবার কিছু নতুন দর্শক এসে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে টুংটাং করে কিছু টাকাপয়সার কয়েন সামনের থালায় এসে পড়ছে।
গোবর্ধনদা মন দিয়ে বানরের খেলা দেখতে দেখতে বলেন, আমি সব শিখে নিয়েছি হাবু। এখন আমি বানরের মত আচরণ করার প্র্যাকটিস শুরু করব কিনা ভাবছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কখন।
— এখনই। বানরের সাথে দেখে দেখে প্র্যাকটিস করলে মনে হয় সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে আমি ওদের মত ডিগবাজি খেতে পারব না। ওলট খাব। তুমিও কি আমার সাথে চেষ্টা করবে তো হাবু ?
একটু আশ্চর্য হয়ে বললাম, আমি! আমিও করব ?
— হ্যাঁ হ্যাঁ, বানরের সাথে সাথে আমরা দুজন একসঙ্গে করলে টাকাপয়সা আরো পড়বে। এতে বানরের আরো ভালো হবে। এইটুকু সাহায্য তো আমরা করতেই পারি। কী বলো ?
ভাবলাম, সত্যিই তো, কাউকে সাহায্য করলে দোষ কী। বললাম, ঠিক আছে।
তারপর আমরা দুজন রাস্তায় গড়িয়ে, লাফ দিয়ে বানরের সাথে সাথে তার অনূকরণ করতে লাগলাম। দর্শকরা খুব তালি দিল। টাকাপয়সার কয়েন ওড়ে আসতে লাগল। এসব করতে কিন্তু আমার বেশ মজাই লাগছিল। এইসময় টের পেলাম, হর্ষবর্ধনদা আমাদের দুজনের জামার কলার ধরে দাঁড় করিয়ে বলছেন, ছি ছি, তোমরা রাস্তার এই নোংরায় গড়াগড়ি খাচ্ছ ! পাগল হলে নাকি ?।
গোবর্ধনদা জবাব দিলেন, কেন, তুমিই তো বলেছিলে বানরের মত চটপট আচরণ করা শিখতে। আমরা তাই করছি।
— আমি বুঝি তাই বলেছিলাম ? তাহলে তোমরা যা খুশি করো, আমি তোমাদের সাথে নেই। আমি চললাম। বলেই হর্ষবর্ধনদা চলে যেতে থাকেন।
দাদার অপস্রিয়মাণ দেহের দিকে চেয়ে গোবর্ধনদা বললেন, আশ্চর্য মানুষ! আমাকে বানরের মত হতে বলল, আর এখন বলছে আমাদের সাথে নেই। চলো এখন বাড়ির দিয়ে যাই।