গোবর্ধনের দাওয়াই (ছোটোদের গল্প)
সদানন্দ সিংহ
সাতসকালে গোবর্ধনদা আমার বাড়িতে এসে উপস্থিত। না, বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেননি, রাস্তা থেকেই আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করছেন। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম গোবর্ধনদা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি তখন স্কুলের পড়া তৈরি করছি। বুঝলাম আমাকে খুব দরকার, নইলে কে আবার সাতসকালে ডাকাডাকি করে ?
আমাকে জানালায় দেখে গোবর্ধনদা আমাকে নিচে রাস্তায় নেমে আসতে বললেন।
রাস্তায় নেমে আসার পর গোবর্ধনদা আমাকে বললেন, বড্ড মুশকিলে পড়েছি। তোমার মতামত জানতে চাই।
শুনে আমি খুশি হলাম, আমার মতামতকে কেউ একজন অন্তত প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমি হাফপ্যান্ট পরি বলে আমাকে কেউ ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে না। সবাই তুই-তুমি বলে সম্বোধন করে। তারপর গোবর্ধনদা যা বললেন তা হল এই —
হর্ষবর্ধনদার বেশ কয়েকদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না। তাই গোবর্ধনদাকে বলে দিয়েছেন যে করেই হোক ঘুমের ট্যাবলেট কিনে আনতে। আর গোবর্ধনদা ট্যাবলেট কেনার জন্য গতকাল থেকে ওষুধের এক দোকান থেকে আরেক দোকানে কেবল ঘোরাঘুরি করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কেউই ঘুমের ট্যাবলেট দিচ্ছে না, সবাই নাকি বলেছে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লাগবে। আর এদিকে হর্ষবর্ধনদা নাকি সামান্য একটা ঘুমের বড়ির জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে চান না, কারণ ডাক্তারের কাছে গেলেই নাকি অমুক টেস্ট তমুক টেস্ট করতে বলবে আর তাতে এক কাঁড়ি টাকা খরচ হয়ে যাবে।
এসব শুনে আমি বললাম, কিন্তু এখন আমি কী করব?
গোবর্ধনদা বললেন, কিছুই করতে হবে না। আমি একটা উপায় বের করেছি। সেটা ঠিক কাজ করবে কিনা তুমি বলো।
জানতে চাইলাম, কী উপায় ?
গোবর্ধনদা বললেন, মাস খানেক আগে আমার শরীরে এক চুলকানি হয়েছিল। আমি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলাম তখন, ওরা আমাকে চুলকানি কমাবার বড়ি দিয়েছিল। সেই ওষুধ খেয়ে আমার চুলকানি কমেছিল। তবে সেই ওষুধ খাবার পর আমার খুব ঘুম পেয়েছিল। তাই আমি ভাবছি চুলকানি কমাবার ওষুধ নিয়ে ঘুমের বড়ি বলে দাদাকে দেব। এ বিষয়ে তোমার মতামত কী ?
কী উত্তর দেব ভাবলাম। শেষে বললাম, আমার মায়ের হাতেও কয়েকবার চুলকানি হয়েছে, তখন ট্যাবলেট খাবার পর মায়েরও বড্ড ঘুম পেয়েছিল।
— পেয়েছি, উত্তর পেয়ে গেছি। আমি চুলকানির ওষুধ আনতে ওষুধের দোকানে যাচ্ছি। বলেই গোবর্ধনদা প্রায় ছুটে এগোতে লাগলেন।