বলাই দে’র ছড়া

বলাই দে’র ছড়া

হেরে যাবার ডর

বলাই দে

সাতেও নাই পাঁচেও নাই
আছি হাওয়ার সাথে,
দেখেও না দেখার ভান
আছি দুধে ভাতে!

‘মানবতা আর মনুষ্যত্ব’
উঠলো যদি কথা,
আমি বাপু এড়িয়ে চলি
‘নীতি’ নিরপেক্ষতা।

মাঠে নেমে লড়াই করে
মেঠো রাজনীতি,
আছি আমি ভালোই আছি
নাই হারাবার ভীতি।

যুক্তিতর্কে বোঝাও যতই
মানছি না সেই যুক্তি,
নিজের নাকের ডগায় আমি
খুঁজে ফিরি মুক্তি!

ঘরের খেয়ে বনের মোষ
যারাই তাড়ায় নিত্য,
আগাছা সব আমার কাছে
দেখেই জ্বলে পিত্ত।

নিজে বাঁচাই আমার কাছে
বেঁচে থাকার শর্ত,
হারবো কেন, ভয়েই থাকি
হেরে যাওয়ার ডর তো!

স্মৃতির ঘোরে

বলাই দে

সিঁড়ি বেয়ে নেমেই পড়ি
যেখান থেকে আসা,
বন্ধ দুয়ার যায় যে খুলে
স্মৃতিতে খুব ঠাসা।
দখিন খোলা ঘর ছাড়িয়ে
পানা দীঘির জল,
মাছরাঙাটি হঠাৎ ধরে
মাছটি ছলাৎ ছল।
বর্ষা দিনে স্কুলে যাওয়া
পেরিয়ে বাঁশের সাঁকো,
হোক পুরোনো হৃদয় জুড়ে
ভুলতে পারি নাকো!
কোথায় তখন বিজলী বাতি
হ্যারিকেনের আলো,
চারটি মাথা একসাথে তে
ছিল কতই ভালো।
“ঠনার” উপর কুপির বাতি
“মা” যে পাকান খাদ্য,
মায়ের সে ঋণ রয় যে অটুট
চুকায় কার সাধ্য?
শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে
হলাম প্রবীণ আজ,
জরাজীর্ণ দিনগুলো সব
সাজায় নতুন সাজ।


চোখে ঠুলি বাপু

বলাই দে

সামনে আছে গভীর খাদ
কিছুই এখন ছন্দে নেই,
রাজা এবং পারিষদে
মানবে না তা কিছুতেই।
বন্যা যখন ভাসায় দুকুল
ধপাস ধপাস ভাঙছে পার,
ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে
ভীষণ বিষম হাহাকার।
রোম নগরী পুড়ছে যখন
রাজা “নিরো” বাজায় বাদ্য,
বুঝেও না বোঝার ভান
রুজি রুটি কমছে খাদ্য।
সামলে নেবে সবই কিছু
ইতিহাস পাল্টে ফেলে,
উড়বে নাকি বিহঙ্গ হায়
ইচ্ছে মতো ডানা মেলে!
লাটাই হাতে উড়াও ঘুড়ি
যেমন খুশি টানছে ডোর,
কানে তালা চোখে ঠুলি
এগিয়ে যাবে আসবে ভোর।

এইখানেতে

বলাই দে

আয়রে আয় আয়রে আয়
আকাশ থেকে মাটিতে,
পায়ের পাতা শক্ত হলে
পারবি রে ঠিক হাঁটিতে।
ফানুস আর উড়াসনে
ফেটে গেলে পটাস দুম,
আয়রে আয় নেমে আয়
ছাড়িয়ে দিই স্বপ্ন ঘুম।
চাঁদ দেখেছিস “চাঁদমামা”
ডাকছে দেখ্ এই মাটি,
অস্ত গেলে চরাচরে
নামে আঁধার জমজমাটি।
এইখানে তে বৃষ্টি মুখর
নদী, সাগর বেগবান,
আবেগ ঘন হৃদয় নাচে
সুখ আর দুখের ডাকে বান।
ফসল ফলায় ঘাম ঝরিয়ে
তাদের কথাই আগে শোন্,
দখিন হাওয়া দোল দিয়ে যায়
এইখানে তেই ঈশানকোণ।