বস্ কিংবা বসিজম
সদানন্দ সিংহ
বস্ কিংবা বসিজম – এই দুটো শব্দের প্রতি পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষেরই একটা মোহ আছে। কারণ ব্যাপারটার মূল লক্ষ্য হচ্ছে “দাবানো”। সেই বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে আপনি যদি একজন হোন তাহলে আপনার মূল উদ্দেশ্য হবে কারুর দাবিয়ে রাখা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং একই সাথে আপনার উদ্দেশ্য থাকবে কাউকে দাবিয়ে দেওয়া। এই দু’টি শব্দকে যদি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার না করে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা যায় তাহলে দেখা যাবে এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ-পশু-কীটপতঙ্গ সবাই কোনো না কোনো বসের শ্রীচরণতলে অবস্থান করছেন। এই বস্রা আপনাকে গণ্ডি কেটে দিচ্ছেন কীভাবে হাঁটবেন, কীভাবে কথা বলবেন, কী কাজে নিযুক্ত থাকবেন, কী ধরনের কাজ করবেন – সমস্ত কিছু বসের ইচ্ছেনুযায়ী আপনাকে করতে হচ্ছে। যদি না করেন তাহলেই মুশকিল হয়ে যাবে আপনার সমান্তরাল সুষম জীবনযাপন, যেহেতু আপনি তাঁর শ্রীচরণতলে অবস্থান করছেন।
এর পাশাপাশি কিছু সাধারণ মানুষ, পশুপক্ষী বা কীটপতঙ্গ আপনার শ্রীচরণতলেও অবস্থান করছে। আপনি আবার তাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পছন্দ করছেন। রিক্সাওয়ালা বা শাকসবজি ব্যবসায়ীর মতো কাউকে ধমক দিয়ে এক-দু টাকা কম দিচ্ছেন বা আপনিই হয়তো কাউকে কীভাবে হাঁটবেন, কীভাবে কথা বলবেন, কী কাজে নিযুক্ত থাকবেন, কী ধরনের কাজ করবেন – ইত্যাদি সব ঠিক করে দিচ্ছেন। মোট কথা, বসিজম চালাতে পেরে আপনি খুশিই হচ্ছেন, কিন্তু কেঊ যদি আপনার ওপর বসিজম চালাতে আসে তখন আপনি তা মোটেই পছন্দ করছেন না। এটাও ঠিক যে বৈরাগ্যবৃত্তি অবলম্বন ছাড়া আপনার ওপরের বস্ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সহজ সমাধান নেই। এই কাজটা বেশ কঠিন বটে। এর জন্যে আপনাকে অনেক কলাকৌশল শিখতে হবে। সেটা একজন সৈনিকের যুদ্ধক্ষেত্রের কলাকৌশল থেকে শুরু করে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার কলাকৌশলও হতে পারে। এসব যদি আয়ত্ত করতে পারেন তাহলে আপনার আর চিন্তা নেই। এসব কলাকৌশলগুলি সুযোগসুবিধামত আপনার বসের শ্রীচরণের ওপর প্রয়োগ করা যায় তাহলে আপনার বস্ যে কাত হয়ে গড়াগড়ি খাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এসব কলাকৌশল আয়ত্ত হয়ে গেলে রাজনীতির ক্ষেত্রেও আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তখন একদিন হয়তো সবাই আপনাকে স্যার বলে ডাকতে শুরু করবে। অর্থাৎ তখন আপনি নিজেই হবেন নিজের বস্।
[বিঃ দ্রঃ = সত্যিকারের বসেরা কিন্তু বসিজম পছন্দ করেন না। তাঁরা অধস্তনদের সম্মান করেন, অধস্তনদের কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং সবাইকে নিকৃষ্ট বা মেশিন হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখেন।]