
চোখ বনাম হৃদয়
বলাই দে
দেখা কি যায় খালি চোখে
হৃদয় ছাড়া ?
হৃদয়হীনের জীবনব্যাপী
কেবল তাড়া!
‘আমি আমি’ ভাবের ঘোরে
জীবন কাটে,
হৃদয়বান হেঁটেই চলেন
জীবন হাটে।
চোখ থেকেও দেখেন কেবল
নাকের ডগা,
সবকিছু তার হাতের মুঠোয়
হায় দারোগা!
হৃদয়বান খোঁজেন কেবল
মুক্ত হাওয়া,
হারজিতের আজব খেলায়
নেই পরোয়া।
গায় যে গীতি হৃদয় দিয়ে
এতেই বাঁচে,
ফুরফুরে রয় ভিতর ভুবন
সদাই নাচে।
মনুষ্যত্বের পতন হলে
বুকটা ভারী,
হৃদয়হীন চিরদিনই
চালায় হুকুমদারি!
ঢেউয়ে ঢেউয়ে
বলাই দে
পার হয়ে যায় দশক দশক
একটু তাপের আশে,
বিধি যেন চুপটি থেকে
আড়াল থেকে হাসে।
শাসন আসে নতুন সাজে
আশায় বাঁধে বুক,
ঘরের কাছেই বসত যেন
পড়ে পাওয়া সুখ।
জীবনভর জান লড়িয়ে
ঝরঝরে হয় হাড়,
একটু আলো দেখবে বুঝি
এইতো আশা তার।
ঘরে ফিরে দিনের শেষে
ক্লান্তি ঘিরে ধরে,
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে
ঘুমায় চিরতরে!
বুকের ভেতর কিচিরমিচির
ডেকে চলে পাখি,
দেখলি অনেক দু’চোখ ভরে
রইলো কী আর বাকি ?
কৃতজ্ঞতায় প্রসন্নতা’র
ঢেউ খেলে যায় বুকে,
ঢেউয়ে ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়া
অচেনা এক সুখে!
সেকেলে
বলাই দে
জীবন ব্যাপী দেখেছি যে
নানান জোয়ারভাটা,
নাইবা গেলাম সমুখ পানে
পিছন দিকেই হাঁটা।
যারা আছো যাও এগিয়ে
স্বপ্ন দেখো খুব,
আমার দু’চোখ উজ্জ্বল আজও
দিই অতীতে ডুব।
অতীত কেবল অতীতই হয়
দেয় না কিছু তাড়া,
আমি এখন দিব্যি আছি
অতীত নিয়েই খাড়া।
ভবিষ্যত টা ঘোলাটে খুব
শুধুই এলোমেলো,
মুখে আমার চওড়া হাসি
অতীত ডাকে ‘হ্যালো’!
অনেক সিঁড়ি নামতে পারি
মুহূর্তের এই পলে,
উঠতে গেলে হোঁচট লাগে
সূর্য যে যায় ঢলে।
যারাই আছো নব্য যুবা
উড়াও রঙের ফানুস,
আমায় কিছু দোষ দিয়ো না
আমি, সেকেলেরই মানুষ!
ভ্রান্তি
বলাই দে
নিশ্চিত বলে হয় না কিছুই
এসব নেহাত ভ্রান্তি,
ভ্রান্তিটুকু আছে বলেই
আসছে না তো ক্লান্তি!
নিশ্চয়তা নিয়েই বাঁচি
নইলে হতো কষ্ট,
ভ্রান্তির বশে এই বাঁচাটাই
সুখটি যেন স্পষ্ট।
বুঝতে পেলে ভ্রান্তিটুকু
কী যে হতো হালটা,
এলোমেলো হয়েই যেতো
ছিঁড়ে যেতো ‘পাল’টা।
দিগবলয়ে রঙের ফানুস
কাটে দিবারাত্রি,
বে-সুমার সেই স্বপ্ন দেখা
অচিনপুর যাত্রী।
বিপর্যয়ের সময়টাতে
যখন সবই রুদ্ধ,
নতুন করে নতুন দিশায়
শুরু জীবন যুদ্ধ।
যারা এখন এগিয়ে আছে
পিছিয়েও পড়ে দৌড়ে,
ইতিহাস তো সেইটে শেখায়
লাগাও যতই ফেউরে!