উড়াল – সুদীপ ঘোষাল

উড়াল – সুদীপ ঘোষাল

উড়াল               (অনুগল্প)

সুদীপ ঘোষাল

উত্তরা সিনেমার সামনে উড়াল দেয় পাখি। রাজুকে দেখতেই ডানা মেলে নাচে। রাজু ডানার আড়ালে মন খারাপ ভোলে।
গতকাল পাখির জন্য মন খারাপ, খেতে পারেনি রাজু। খিদের থালায় ওর ছবি ভেসে উঠলে ক্ষুধা নিবৃত্তি হয়, না খেয়ে।
ঈশারা কত কথা বলে, কত গান করে। কথাভোলা পাখি চোখ নাচায় মেঘের খুশিতে।
আজ বৃষ্টিদিনে শরীরে মাউথ অরগ্যান বাজিয়ে হাঁস ভাসছে জলে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁসের ঘুঙুর ধ্বনিতে বিহ্বল, মেঘের তল ভেজে মাটিতে।
— আবার কবে ভাসব?
— যখন কদম কলি হাসবে।

মজাদার ”নোনতা কুরকুরে” খায়, আনন্দ-কলতান। দুজনে ভেসে এল বাসস্ট্যান্ডে।
তারপর শুভেচ্ছা বিনিময়, চোখের ঈশারা…আসি। ফুটন্ত ফুলের বাসনায় মনখারাপ, শিউলি শরতে ফেরে নিশিথে।
পাখি গান গায়, “আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে”…।

তারপর নদী ভাঙে, কিশোরী বাঁক। ক্লান্ত পাখি উড়তে ভুলে যায়, লাল বেনারসীর বাঁধনে …
দীর্ঘ শীত শেষে, বসন্তের খোঁজে, পাখি বরকে নিয়ে আসে উত্তরা সিনেমায়। হলঘরে সেলুলয়েডের আলোয় বৃষ্টিমুখর স্মৃতি জাগে।

— ও রাজু, কেমন আছ?
— বর কোথায়?
— ‘সেই- কুরকুরে’ আনতে বাইরে গেল।
— ‘সেই স্বাদ’ কেমন আছে ?
— আমি এখন ডানাকাটা, তুমি একা?

রসহীন ‘ছিবড়ানো কুরকুরে’ প্যাকেট হাতে শীত এল।
ক্লান্তিকর জীবনে, পাখির ভিজে স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা। সিনেমা শেষ হলে, সকলে বাইরে আসে, বাসে উঠে।
রাজুর কানে বাজে বেসুরো গান, আমি ডানাকাটা, তুমি কি একা।
রাজুর ঘাড়টা এপাশ-ওপাশ দোলে ক্লান্তিতে…

ডানাভাঙা পাখি উড়াল দেয় না, স্বপ্ন দেখে না আর।