অবিশ্বাস – গুলশন ঘোষ

অবিশ্বাস – গুলশন ঘোষ

অবিশ্বাস     (অনুগল্প)

গুলশন ঘোষ

তনয় গঙ্গাধরপুর বিদ্যাপীঠ-এ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
নিয়মিত সকালে আসে স্কুলগাড়ি।
তখনই যত বিপত্তি। বায়না। স্কুলে সে কিছুতেই যেতে চায় না। বাহানার তালিকা বৈচিত্র্যে পূর্ণ। কোনদিন পেটে লাগা। তো কোনদিন বমি ভাব। কিংবা পটি করার নাম করে বাথরুমে ঢুকলে বেরোবার নামই করে না । কত কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে তবেই তাকে বার করা যায়। আবার কোনদিন স্কুলে মারামারি করতে গিয়ে জামার বোতাম ছেঁড়া থাকায় স্কুল যাবে না বলে বায়না ধরে। প্রায়দিন গাড়িকে বিরক্তিসহকারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
তবে তাকে কেউ গল্প বললে সে মন দিয়ে শোনে। তার মা তাকে প্রায়দিন এটা ওটা গপ্প বলে শোনায়। এসবের মধ্যে তনয়ের সবচেয়ে ভালো লাগে ‘রাখাল ও বাঘে’র গল্পটা। রাখাল ভীত চাষিদের বোকা বানিয়ে যখন খুশিতে হাততালি দিত তখন এটা শুনে তনয় মুখ টিপে হাসে এবং নিজেও করতালি দেয়। তার মা তখন তাকে নীতিকথার শেষটা বুঝিয়ে বলে — কোন দিন মিথ্যা বলতে নেই – যেদিন সত্যিই বাঘ আসবে সেদিন রাখালের মতো তোর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।

সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি পড়ছে। তনয়ের স্কুলগাড়ি হাজির। হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে। এখনও রেডি হতে পারেনি সে। গেটের সিঁড়িতে রাখা বুট জোড়ার একটি তনয়কে পরিয়ে দিতেই সে বলে — মা গো পায়ে কী কামড়াল। খুব জ্বালা করছে।
তার মা তার কোন কথায় কর্ণপাত না করে বুটের লেসটা বেঁধে অন্য বুটটিও পরিয়ে স্কুল গাড়িতে তুলে দিল এসব কোনও কিছুকে প্রশয় না দিয়ে।
তনয় যেতে যেতে ড্রাইভারকে বলল — তার পা খুব জ্বালা জ্বালা করছে। ড্রাইভার জানে যে বদমাইশি করে বলছে। তাই থামলেন না। দ্রুত এগিয়ে গেলেন স্কুলের দিকে।
এর কিছুক্ষণ পর তার মুখ দিয়ে গেঁজলা উঠতে শুরু করেছে দেখে একজন পডুয়া ড্রাইভারকে জানায়। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে দেখে তনয় নেতিয়ে পড়েছে।
ড্রাইভার ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি বুট খুলে ঝাড়তে গিয়ে দেখে একটা বিষধর সাপের বাচ্ছা।
কাঁদতে কাঁদতে ফোন করে তার মাকে জানায় — দ্রুত লোকাল হসপিটালে আসার জন্য।
তনয়ের মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দু’গালে গালে চড় মারছে আর বলছে সোনা আমার, কেন বিশ্বাস করলাম না তোর কথা। কেনো খুলে দেখলাম না গোপাল রে…। মাটিতে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে – রাখালের গল্প শুনে হাততালি দেওয়া হাসিমুখটা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পাগলের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে কাঁদছে আর বলছে -–সোনা, কে জানতো তোর কপালেও এমন দিন নেমে আসবে!