জেরা – সদানন্দ সিংহ

জেরা – সদানন্দ সিংহ

জেরা             (অনুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

মনীষা বলল, জানো, আজ ধীরেনবাবুর মেজো ছেলেটাকে রাস্তায় দেখলাম কোট-বুট-টাই পরে গটগট করে হেঁটে যাচ্ছে।
অফিস থেকে ফেরার পর রঞ্জন আর মনীষা চা নিয়ে বসেছিল নিত্যদিনের মত। মনীষা হাউস ওয়াইফ। রঞ্জন অফিস থেকে ফিরে এলেই মনীষার বিভিন্ন সংবাদ বর্ষণ শুরু হয়। আজও তাই হচ্ছিল। রঞ্জন চায়ে এক চুমুক দিতে দিতে বলল, তো ?
— শুনলাম, ছেলেটা নাকি মহারাষ্ট্রে এক বড় কোম্পানিতে মোটা বেতনের চাকরি পেয়েছে।
রঞ্জন উত্তর দেয়, ভালোই। মহারাষ্ট্রের কোথায় ?
— জানি না।
— কতদিন হল পেয়েছে ?
— জানি না।
— কী চাকরি মানে কোন্ পোস্টে ?
— জানি না।
— কোন্ কোম্পানি ?
— জানি না।
— কত বেতন ?
— জানি না।
— তা তুমি দেখছি কিছুই জান না।
— আমি কি পুলিশ নাকি, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবর নেব ? কেবল জেরার পর জেরা। তোমার এ এক বিশ্রী স্বভাব। যত্তোসব।

মনীষা একটু রেগে চুপ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর মনীষা আবার বলল, পাঁচ বছর আগে বিয়ের প্রথম রাতে তুমি আমায় কী জেরা করেছিলে মনে আছে ? আমার সব মনে আছে। তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে, আমি দৌড়-ঝাঁপ খেলেধুলো করেছিলাম কিনা, গাছে উঠতে পারি কিনা, গাছের ডালে আঘাত লেগে শরীরে কোনো চোট পেয়েছি কিনা, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছি কিনা। তোমার সমস্ত রকম জেরার মূলেই আছে সন্দেহ। তুমি সন্দেহবাতিক। আমি কি আর বুঝিনি বিয়ের রাতের জেরাগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল আমার সতীচ্ছেদ নিয়ে। অস্বীকার করতে পার তুমি ?
এবার রঞ্জনের মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুতে থাকে, কী-কীসব বলছ ! মা-মানে মানে …। আর আওয়াজ বেরুয় না রঞ্জনের মুখ থেকে। মনীষার কথাগুলি যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।