সিঁদুর খেলা – প্রসেনজিৎ রায়

সিঁদুর খেলা – প্রসেনজিৎ রায়

সিঁদুর খেলা       (অনুগল্প)

প্রসেনজিৎ রায়

“রিমি তাড়াতাড়ি এসো,আমরা যাচ্ছি” বলেই পাশের বাড়ীর সীমা বৌদি চলে গেলেন রোহিতদের বাড়ির উঠোন থেকেই। রিমি আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছিল। আজ দশমী। রোহিতদের বাড়ির সামনে পাড়ার পূজোতে সবাই সিঁদুর খেলতে চলেছে। রিমির দেরি দেখে সীমা বৌদি ডেকে গেলেন। রিমিও তাড়াতাড়ি চুল বেঁধে সিঁথিতে সিঁদুর পরতে গিয়ে রোহিতের কথা মনে পড়লো। সুদূর কাশ্মীরের সীমান্তে সীমান্ত সুরক্ষার চাকরি। আত্মীয়স্বজন সবারই কথা রিমির কপালটা ভালো — কেন্দ্রীয় সরকারের লম্বা বেতনভোগী ছেলে পাওয়া কি আর মুখের কথা ! মুখে প্রকাশ না করলেও তা অনেক আত্মীয়ের গা-জ্বালারও কারণ। কিন্তু রিমিই জানে এই আপাতদৃষ্টিতে ধরা পড়া আর্থিকভাবে সচ্ছ্বল জীবনে ঢাকা পড়া কষ্ট, ক’দিন থেকেই ভারত-পাকিস্থানের সীমান্তে উত্তেজনা — যুদ্ধ লাগে লাগে রব চারদিকে। প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আয়নায় সিঁথির জ্বলমল সিঁদুর দেখে মনে মনে অদৃষ্টকে প্রশ্ন করে — কাল সকালে স্নান সেরে আবার পরতে পারবো তো…?

রিমি গিয়ে যোগ দেয় পাড়ার সব দিদি-বৌদির সাথে সিঁদুর খেলায়। ধবধবে ফর্সা মুখে লাল সিঁদুরের আস্তরণে অপরূপা লাগছে রিমিকে….অথচ যার অধিকার এই সৌন্দর্যে সে সব ছেড়ে কয়েক হাজার মাইল দূরে দেশমাতার সম্ভ্রম রক্ষার্থে নিয়োজিত।

হঠাৎ থেমে গেল ঢাক ঢোলের শব্দ…….এক চরম নীরবতা। রিমির সামনে এসে পাড়ার রাজু দাঁড়াল চোখে জ্বল নিয়ে।
— বৌদি, রোহিতদার গায়ে গুলি লেগেছে।
চিৎকার করেই জ্ঞান হারালো রিমি।

জলের ঝাপটায় রিমির জ্ঞান যখন ফিরলো — অর্ধ উন্মীলিত চোখেই মা দুর্গার মুখটা স্মরণ করে অস্ফুটে বলে উঠল — এ সিঁদুর রক্ষার দায় তোমার, মা !