আবাল – সদানন্দ সিংহ

আবাল – সদানন্দ সিংহ

আবাল     (অনুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

গ্রাম পঞ্চায়েতের মিটিং বসেছে। রামকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। রামকুমার নাকি কথায় কথায় প্রায়সময়েই আবাল বলে গালিগালাজ করে থাকে গ্রামের পঞ্চায়েত মেম্বারদের। এই গতকালও সে পঞ্চায়েত মেম্বার অশ্বিনীকে আবাল বলে গালিগালাজ করেছে। তাই অশ্বিনী গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে বিচার চেয়েছে। যার ফলেই আজকের এই পঞ্চায়েতের মিটিং।
রামকুমারকেও আজকের এই মিটিং-এ উপস্থিত থাকার জন্য নোটিস ধরানো হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সব মেম্বারগণও এসে গেছে। কিন্তু রামকুমারের পাত্তা নেই এখনো। অশ্বিনী গাঁওপ্রধানকে বলে, দেখছেন তো, ও কেমন বেয়াদপ; আমরা সবাই বসে আছি আর ওর দেখা নেই এখনও। ওকে একটা টাইট দেওয়া দরকার। অশ্বিনীর কথায় বাকি উপস্থিত মেম্বার সবাই একমত, হ্যাঁ ওকে একটা টাইট দেওয়া দরকার। রামকুমারের অনুপস্থিতিতে টাইট দেওয়ার এক বিধানও ঠিক হয়ে যায় — এক হাজার টাকা জরিমানা। পরবর্তী কালেও সে যদি গালিগালাজ করতে থাকে তাহলে এই জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হিসেবে বাড়তেই থাকবে অর্থাৎ দু হাজার, চার হাজার, আট হাজার… এইভাবে বাড়তেই থাকবে। এ টাকা গ্রামের ফান্ডে জমা হবে।

প্রায় আধা ঘন্টা পর রামকুমার এসে হাজির হয়। তাকে দেখে অশ্বিনী ফেটে পড়ে, এই তোমার সময় হল ! আমরা আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি।
রামকুমার উত্তর দেয়, কি আর করব। সবাই জানে আমার চারটা গরু আছে, মাঠে চরানো গরুগুলিকে জল খাইয়ে তো এলাম। এবার বলেন, আমাকে কেন ডেকেছেন?
এবার গাঁওপ্রধান বলে, তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তুমি নাকি গ্রামের লোকদের গালিগালাজ করে থাক, এই গতকালও অশ্বিনীকে গালিগালাজ করেছ।
শুনে রামকুমার যেন একটু অবাক হয়, কই না তো। আমি গালিগালাজ করিনি।
— মানে তুমি অস্বীকার করছ গতকাল তুমি আবাল কথাটা বলোনি।
— আমি শুধু বলেছি, আবা-ল।
— তার মানেই হচ্ছে তুমি অশ্বিনীকে আবাল বলে গালিগালাজ করেছ।
— না আমি গালিগালাজ করিনি। শুধু আবা-ল বলেছি।
গাঁওপ্রধান বেশ অবাক, আবাল কথাটা কি গালি নয় ? তাহলে আবাল-এর মানে কী ?
রামকুমার হেসে উত্তর দেয়, আবাল মানে আমার বাল। এই স্বাধীন দেশে কি নিজের সম্বন্ধে কথা বলার স্বাধীনতা আমার নেই ? আশ্চর্যের ব্যাপার !