খোরপোশ – গুলশন ঘোষ

খোরপোশ – গুলশন ঘোষ

খোরপোশ      (অনুগল্প)

গুলশন ঘোষ

লালনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২৫ ধারা। তার পক্ষের উকিল হীরালাল হাজরা ডিস্ট্রিক কোর্টে লড়ছে।
ছয় মাস হয়ে গেলো কেসের কোন আপডেট পাচ্ছে না লালন।
হীরালালের কাছে লালন কিছু জানতে চাইলেই বলা হচ্ছে, কেস তো আমার আন্ডারে রয়েছে তোমাকে ভাবতে হবে না।
কিন্তু, এরই মধ্যে একদিন পিয়ন সকালে চিঠি দিয়ে গেলো। চিঠি খুলে দেখে ১২৫ ধারা চালু হয়ে গেছে। এরিয়ার বাবদ সামনে মাসেই ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে লালনকে।
লালন চিঠি নিয়ে ছুটল হীরালালের কাছে। সে লালনকে আশ্বস্ত করে জানায় যে সে এই অর্ডার স্টে করে দেবে।
কিন্তু, অর্ডার স্টে করতে লাগবে ৩০ হাজার টাকা। একদিন ভাবার জন্য সময় নিল লালন। অনেক কষ্টে লালন তার কেস অর্ডার স্টে করার জন্য হীরালালের অ্যাকাউন্টে টাকাটা G-pay করে দেয়।

স্টে অর্ডার বার হল মাত্র ২৮ দিনের জন্য।
সামনে মাসে আবার ডেট পড়ল হেয়ারিং-এর। কিন্তু, সেবারেও অর্ডার স্টে করার জন্য ১৫ হাজার টাকা চাইল লালনের কাছ থেকে।

লালন একটা কোম্পানিতে সামান্য মাইনের কর্মচারী। তার প্রতিমাসের মাইনে হীরালালকে দিতেই চলে যাচ্ছে। আবার এতগুলো টাকা এক সঙ্গে না দিতে পারলে ১২৫(বি) চালু হয়ে যাবে। হতে পারে জেল।
বেশ খানিকটা চিন্তায় পড়ল লালন। সে মনে মনে ভাবে প্রতিমাসে এইভাবে অর্ডার স্টে করার জন্য হীরালাল আমার কাছ থেকে টাকা লুটবে। এর থেকে খোরপোশ চালু হয়ে যায় যাক। সে সরাসরি লালনকে ফোনে তার এই ভাবনার কথা জানালো।
হীরালাল লালনের কথা শুনে বলে, একবার যদি টাকা চালু হয়ে যায় – তা হলে তোমার বউ আর কোর্টে আসবে না। ডিভোর্সও দেবে না।
লালন নিজের মধ্যে স্থিরতার যে দম ধরে রেখেছিল – তা হীরালালের কথার পিনে চুপসে গেল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় লালন শেষমেশ বলে, একটা দিন আমাকে ভাবার সময় দিন।
হীরালাল গর্বের সঙ্গে উচ্চ গলায় বলে, ভাবার কী আছে, তুমি তো ভাগ্যবান। আমাদের ডিস্ট্রিক কোর্টে হৈ হৈ পড়ে গেছে। ১২৫ ধারায় মেন্টেনেন্স কেসের অর্ডার বেরিয়ে যাওয়ার পর স্টে অর্ডার পাওয়া আর ডুমুরের ফুল দেখা একই।

ফোনালাপ হওয়ার পরই লালনের মন দুলতে লাগল পেন্ডুলামের ঘড়ির মতো। কাকে টাকা দেবো হীরালালকে… না কি স্ত্রীকে এরিয়ার। অস্থির হয়ে ডিস্ট্রিক কোর্টের এক পরিচিত উকিলকে ফোন করলে জানতে পারে তার উকিল প্রতি ডেটে ৮০০ টাকা পায়।
লালন বুঝতে পারল কীভাবে হীরালাল তাকে মুরগি করেছে এতদিন।

পরের দিন সকালেই লালন ছুটল হীরালালের বাড়িতে।
দেখে হীরালাল টেবিলে বসে রুটির একটা স্লাইড় নিয়ে তাতে বাটার লাগাচ্ছে ছুরি দিয়ে।
লালনকে দেখে বলে টাকা নিয়ে এসেছো। এত ভাবার কী আছে। কোর্টের সরকারি উকিলরা আমার কাছে পরামর্শ নেই কেস লড়তে গেলে। আমার কপাল খারাপ তাই সরকারি উকিল হতে পারিনি।
ক্ষিপ্র লালন বলে, অনেক হয়েছে….কেন আমার কাছ থেকে এত টাকা নিয়েছেন মিথ্যা বলে। টাকা ফেরত দিন।
হীরালাল রুটিটা মুখে চিবাতে চিবাতে বাটারে ছুরিটা দিয়ে বলে — আমি তোমার কাছে থেকে টাকা নিয়েছি সেটা আমার ক্রেডিট। আমি টাকা দেবো না, কী করতে পারো করে নাও।

ক্রুদ্ধ লালন তাকে শাসাতে শাসাতে বাড়ি থেকে বার হতেই পথে দেখা কলেজের বন্ধু সঞ্জুর সঙ্গে।
অস্বাভাবিক লালনকে এত সকালে এই অবস্থায় দেখে সঞ্জু বিস্মিত না হয়ে পারল না।
লালন অনেক কথাই সঞ্জুকে জানায়। সঞ্জু শুনে অবাক।
হীরালাল কোর্টের বড় উকিল – এই কথা শুনে সঞ্জু না হেসে পারল না। এইচ.এস এ দু’বার ফেল করে সে না কী বড় উকিল। এক নম্বরের চিটিংবাজ। ধাপ্পাবাজ। অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ওর বউ আলাদা থাকে। ও তোর কেস লড়ছে!!……… ওর বিরুদ্ধেও তো খোরপোশের মামলা রয়েছে। দেখ, হয়ত তোর থেকে টাকা নিয়েই বউকে টাকা দেয়।