জিতে যাওয়া (অনুগল্প)
ব্রতীন বসু
দীপক রোজ ঘুম থেকে ওঠার আগে একটাই স্বপ্ন দেখে। এক মিহি গলায় কে যেন ওর কানের কাছে বলছে, তুমি আজ জিতবে, সব কিছুতে জিতবে। অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাসে ভরে যায় মনটা।
দীপক এক আই টি কোম্পানির জুনিয়র প্রোগ্রামার, সারাদিন ল্যাপটপে কাজ, কঠিন টাইমলাইন, লিডের চোখ রাঙানি, লাঞ্চে স্যান্ডউইচ অথবা ক্যান্টিনের এক ঘেয়ে খাবার, রাতে মায়ের হাতের রুটি তরকারি, অল্প ওটিটি দেখা দিয়ে ঘুম। আবার এক স্বপ্ন ভোর রাতে।
জীবন এক ধাতুতে গড়া, জেতা হারার কিছু ব্যাপার নেই।
কিন্তু রোজ ওই স্বপ্ন, ওই সুন্দর সুরেলা গলায় জেতার আশ্বাস, ওটাই যেন বেঁচে থাকার মন্ত্র, ওটাই মন হালকা করা ফুর্তি। দীপকের বেশ খানিকটা ওজন বেশি, ব্যায়াম করা হয় না, খেলাধুলো করার সময় নেই, কিন্তু জানে, যদি কোনোদিন ও খেলতে যায় ও জিতবে। ওর স্বপ্ন ওকে বলেছে।
মানুষ কত কি ভালবাসে, ফ্যান্টাসাইস করে, দীপক ওই মিহি গলা শুনবে বলে ঘুমোতে যায়, ও ভালবাসে ওর স্বপ্নকে, ওটাই ওর বাস্তব।
প্রশ্ন করে, কবে জিতবো, কিসে জিতবো?
মিহি গলা উত্তর দেয় না, শুধু বলে, তুমি আজ জিতবে, সব কিছুতে জিতবে।
গতকাল বেলা এগারোটায় দীপককে এইচ আর রুম থেকে ডেকে বলল, স্যরি তুমি যে প্রোজেক্টটায় ছিল কন্ট্রাক্ট রিনিউ করেনি আমাদের কোম্পানির সাথে।এই মুহূর্তে তোমাকে দেওয়ার মত কোন এসাইনমেন্ট নেই আমাদের কাছে, সো উই হেভ টু লেট উ গো। তিন মাসের ফুল স্যালারি, মেডিক্যাল ইন্সিওরেন্স দেওয়া হবে।
দীপক হাসল। ও জানে ওর ভয়ের কিছু নেই, ওর জন্য আরো ভাল চাকরি নিশ্চয় অপেক্ষা করছে। এইচ আরের মেয়েটার কন্ঠস্বর পুরো মিলে যায় যে ওর স্বপ্নের মিহি গলার সাথে। তাই এই চাকরি যাওয়া ওর হেরে যাওয়া নয়, ওর জয়।
দীপক নিশ্চিন্তে ধন্যবাদ জানিয়ে, ফিন্যান্স থেকে ফুল এন্ড ফাইনাল পেচেক নিতে গেল।
আজ জানা গেল কিসে জিতবে ও। জীবনের লড়াইতে।