স্পীড ডায়াল (অনুগল্প)
সমিত রায় চৌধুরী
“শর্মিষ্ঠা আর কুণাল’কে এই সব জ্ঞান দিতে কে বলেছিল? তুমি জানো না তাদের পেটে ভালো কথা সয় না!”
ভাস্বতী হাতে লোশন মাখতে মাখতে কথাগুলো বলল। এই কথা শুনে বিবেকের এই শীতের রাতে ঘাম বেরোনোর অবস্থা। শর্মিষ্ঠা আর কুণালের সাথে আজ অফিস ছুটির পর চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে একটু আড্ডা দিয়েছিল। সন্ধ্যায় তো ভাস্বতী বাড়িতেই ছিল। শর্মিষ্ঠাকে যে ভাস্বতী সহ্য করতে পারে না সেটা বিবেক জানে। সে কিছু আন্দাজ করতে না পেরে শুধু বলল,
“সেই একটু-আধটু কথা বললাম। আমি তাদের সাথে এমনিতে কথা বলি না।”
ভাস্বতী এইবার ঝাঁঝালো ভাবে বলল,
“একটু-আধটু কী? পুরো পঁচিশ মিনিট কথা বলেছ!”
“খারাপ কিছু তো বলিনি। ভুল হয়ে গেছে। আর কথা বলবো না।”
এতটুক বলে বিবেক রাতের পরিবেশটা শান্ত করলো। কিন্তু কিছুতেই তার মাথায় ঢুকলো না, ভাস্বতী এই সব শুনলো কীভাবে। তাহলে কি তার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছে!
পরদিন অফিসে গিয়েও বিবেকের মন খচ-খচ করছে।
বিকেলে অফিস ছুটির পর আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কুণালের সাথে অফিসের নিজের রুমেই দুঃখের কথা বলা শুরু করল। মনটা একটু হালকা করে হাতে কিছু ফুল নিয়ে আজ বাড়ি ফিরলো বিবেক।
ঘরে ঢুকে ভাস্বতীর সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো চেহারা দেখে ফুলগুলি সামনের ঘরে ফুলদানিতে রেখে দিল।
“আমি তোমার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছি? এই সব কথাবার্তা তুমি কুণালকে বলেছ! বিবেক আমি তোমার সাথে শুধু কেয়ার কথা ভেবে আছি। আর পারছি না আমি।”
এরপর আর যা যা হওয়ার সব হল।
বিবেক সামনের ঘরের ফুলদানির পাশের সোফাটায় শুয়ে রইল।
সকালবেলা ছোট্ট মেয়ে কেয়া স্কুল ড্রেসে এসে বাবার সাথে বসল।
“বাবা, তোমার মোবাইলে মার নম্বরটা স্পীড ডায়াল থেকে সরিয়ে ফেল।”
মুহূর্তের মধ্যে বিবেক মোবাইল স্ক্রিনে সেভ করা ভাস্বতীর কন্টাক্ট নাম্বার ‘আমার জীবন’ দেখলো। বিয়ের পর অনেক সাধ করে ভাস্বতীর মোবাইল নম্বরটি নিজের মোবাইলে তুলেছিল ‘আমার জীবন’ নাম দিয়ে। মুহূর্তে তা সরিয়েও ফেলল।
গত দুইদিনের সব কল লগ দেখলো। কিছুক্ষণ পর পরই ভাস্বতীর মোবাইলে ফোন গেছে তার অজান্তে এবং আকস্মিকভাবে। সেটা যে তার প্যান্টের পকেটে মোবাইল রাখার দরুণ হয়েছে, তা সে বুঝতে পারলো। কাকতালীয় ভাবে ওই সময়ে অন্যদের সাথে তার কথোপকথন পৌঁছে গেছে ভাস্বতীর কানে।
এইবার বিবেক কেয়ার মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
“এই সব প্রযুক্তির যন্ত্রণা, মা।”