যেমন কর্ম (অনুগল্প)
সুদীপ ঘোষাল
বিজন একটা স্কুলে প্যারাটিচারের কাজ করে। পড়ে, পড়ায়। বেশ ভাল চলছিল। হঠাৎ ভোটের দিন এগিয়ে এল। বিজন ভোটের থার্ড পোলিং অফিসার হিসেবে ট্রেনিং নিল। ট্রেনিং হল কাটোয়া কে ডি আই স্কুলে। তারপর শেষ ট্রেনিং হল বর্ধমানে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্যান্য সকলের সঙ্গে পরিচয় হল। ভোটের দিন এগিয়ে এল।
বুথ তিরিশ কিলোমিটার দূরের এক অজ পাড়াগ্রামে। বিজন ঘুরল গ্রাম। বেশ ভাল লাগল। তারপর সন্ধ্যাবেলায় মুড়ি খাওয়ার সময় প্রিসাইডিং অফিসার বললেন, বিজন, সামনে বাজার থেকে একটা কাঁচা লঙ্কা এনে দিন তো। সকল অফিসার অবাক হয়ে গেলেন তার কথায়। এখানে বাকি সকলে পোলিং অফিসার। সকলে সম্মানিত লোক। কিন্তু প্রিসাইডিং অফিসার অভদ্র লোক। তারপর বললেন, কল থেকে জল এনে দিন। তারপর আগামীদিনের কিছু কাজ করা হল। বিজন বুঝল, প্রিসাইডিং অফিসার বেশ যুতের নয়। কাজ জানে না। ফার্ষ্ট পোলিং অফিসার বললেন, বিজনবাবু আগামীকাল মার খেতে হবে। তৈরি থাকুন।
পরের দিন সকাল থেকে ভোটের কাজ শুরু হল। ভোট ভাল চলছে আর তার সঙ্গে চলছে প্রিসাইডিং অফিসারের শাসন। বিজনকে তিনি বললেন, ভুল করলে চড় মারব। একটা মহিলার হাত ধরে আঙুল টেনে বললেন, এইভাবে টিপ সই দিয়ে নেবেন। মহিলা রেগে বললেন, আপনি অভদ্রভাবে আমার গায়ে হাত দিলেন কেন? এতক্ষণ বিজন মহিলাদের দেখিয়ে দিচ্ছিল কি করে কি করবেন। কিন্তু প্রিসাইডিং অফিসার গোলমাল বাধালেন। মহিলার চিৎকারে লোক জমে গেল। প্রিসাইডিং অফিসার অপমানিত হলেন। কিন্তু তার মান অপমানের অনুভূতি কম। ফলে ভোটের শেষে তিনি বিপদে পড়লেন। এজেন্টরা বললেন, আপনি ট্রেনিং ঠিকঠাক নেননি। জানেন না কিছুই। অন্যান্য বুথ থেকে বাস চলে এল রাত বারোটার সময়। বিজনদের হলেই বাস রওনা হবে ডিসিআরসির দিকে। কিন্তু রাত দুটো বেজে গেল তবু কাজ শেষ হল না। শেষে বিজন বাস থেকে অন্য একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে ডেকে আনলেন। তিনি পাকা লোক। কাজ দেখেই বোঝা গেল। এক ঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ হলে সকলে রওনা দিল ডিসিআরসির দিকে। বিজনদের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রিসাইডিং অফিসারটির জন্য বাসে কেউ সীট ছেড়ে দিল না, তাই উনি বাসে দাঁড়িয়েই রওনা হলেন।