ফারাক (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
রাগিনী চারিদিকে ভগবানকে খুঁজে পায়। কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে বহুদূর। রাগিনীর স্বামী অরিন্দম আবার তর্কে সবসময় এগিয়ে, বিজ্ঞানে বিশ্বাসী। মাঝে মাঝে রাগিনীর সঙ্গে অরিন্দমের বেশ জোরালো তর্ক হয়। বলাই বাহুল্য, সে তর্কযুদ্ধে রাগিনী সবসময় হেরে যায়। রাগিনী একসময় রণে ভঙ্গ দিয়ে চলে যায়, কিন্তু রাগে গোঁ গোঁ করে যায়। অগত্যা তখন অরিন্দমকেই কাছে গিয়ে নানা কায়দা করে রাগিনীর মান ভাঙাতে হয়।
সারাবছর ঘরে একটা পূজাপাল্লি কিংবা ঘরের বাইরের কোনো মঠে দানধর্ম লেগেই থাকে রাগিনীর। আর তার খরচ অরিন্দমকেই সামলাতে হয়। অরিন্দম অনেকসময় হিমসিম খায়। মাঝে মাঝে অরিন্দমও ঝেড়ে কথা বলে, এসব করে করে তুমি রাগিনী রাগিনীই রয়ে গেলে, রাজনন্দিনী হলে না। কী লাভ হল ? রাগিনী উত্তর দেয়, আমি লাভের জন্যে করি না।
অথচ দুজনের মধ্যে ভালবাসা প্রবল। আবার অপার্থিব চিন্তাধারা নিয়ে দুজনের মধ্যে ফারাকও প্রবল।
অরিন্দম জানে এক মানুষের সাথে আরেক মানুষের এরকম ফারাক পৃথিবীর আদিতেও ছিল এখনও আছে। আর এই ফারাকের ছিদ্র দিয়েই ঢুকে গেছে যুদ্ধ, ধ্বংস, দখল, দাবিয়ে রাখা। কিন্তু এই ফারাক কি চিরতরে থেকেই যাবে ? অরিন্দমের মনে প্রশ্নটা আসে বারবার, কিন্তু উত্তর আসে না।