ঢেউ (অনুগল্প)
সোমনাথ বেনিয়া
সমুদ্রের পাড়ে সমুদ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে বসে আছে সুমিত। সুমিত ঢেউ দেখতে ও গুনতে খুব ভালোবাসে। ঢেউ গুনতে-গুনতে হঠাৎ ওর মনে হয় আচ্ছা, সমুদ্র কি তার নিজের সমস্ত ঢেউকে মনে রাখে ? কোন ঢেউ পূর্ণতা পায়, কোন ঢেউ অপূর্ণ থেকে যায়। কোন ঢেউয়ে তার গর্ব হয় কিংবা কোনটায় অপমানিত। আবার কোনটায় তার সুখ থাকে, কোনটায় দুঃখ। অন্যদিকে কোনটিতে তার ঘৃণা এবং কোনটিতে তার ভালোবাসা থাকে। সুমিতের এইরকম মনে হওয়ার কারণ সমুদ্রের এই বিশাল ব্যাপ্তি।
সে উঠে পড়ে এবং সমুদ্রের আরও একটু কাছে গিয়ে সমুদ্রকে এই প্রশ্নটি করলো যে সমুদ্র কি তার সমস্ত ঢেউকে মনে রাখতে পারে। উত্তর পাওয়ার আশায় সে সমুদ্রের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু না কিছুই হলো না। সে নিজেই তার এই ছেলেমানুষিতে হেসে উঠলো। সে ভাবে সমুদ্র কখনো উত্তর দেয় কি!
এরপর নিজের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে সে পিছন ফিরতেই, সমুদ্রের একটি ঢেউ তার পা ভিজিয়ে দিল। সে শিউরে উঠলো। জলটা কেমন যেন চেনা-চেনা লাগছে! সেই জলের স্পর্শে তার নিজের ভিতরে একটি দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ উঠে এসে বূকের কাছে আটকে গেল। এক দম বন্ধ করা অবস্থায় সুমিতের মনে পড়ে তার ভালোবাসার সমুদ্রে এক সময় একটি পরিযায়ী জীবন যে ঢেউ তুলেছিল, তাকে কি সে এখনও ভুলতে পেরেছে? বারংবার চেষ্টা করেও কি সে ভুলতে পেরেছে। পারেনি, তাইতো!
আসলে যে ঢেউয়ে অন্তরের অতলস্পর্শের দ্বিধাহীন পবিত্রতা থাকে, তা সে যেমনই হোক, তাকে সমুদ্রের বিস্তারের চেয়েও অসংখ্য গুণ বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে থাকা এই মন, ভুলতে পারে না। প্রকৃতপ্রস্তাবে ভুলতে চায় না। সেখানে সমুদ্রতো অনেক দূরের কথা …