টাইট – সদানন্দ সিংহ

টাইট – সদানন্দ সিংহ

টাইট         (অণুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

আজ রবিবার। ছুটির দিন। সন্ধ্যেবেলায় নিমন্ত্রণ রক্ষায় সতীনাথের বাড়িতে লোকনাথ সস্ত্রীক উপস্থিত। চায়ের প্রথম নিমন্ত্রণ। লোকনাথদের সাথে পাঁচ-ছ বছরের ছেলে অনল। এসেই অনল তার কাজকর্ম শুরু করে দিল। প্রথমেই সে টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানিটা মেঝেতে নামিয়ে ফুলদানিতে রাখা প্লাস্টিকের ফুলগুলি মেঝের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল। তারপর ফুলগুলিকে এদিক ওদিক ছুঁড়ে মারতে লাগল। লোকনাথ ছেলের দিকে চেয়ে বলল, দেখেছেন সতীনাথবাবু, ছেলেটা কী দুষ্টু হয়েছে। লোকনাথের স্ত্রী ছেলের দিকে চেয়ে বলল, অনলবাবা, এভাবে করে না। ছেলেকে শাসন বলতে ব্যস ওইটুকুই। অনলের বয়ে গেছে মা-বাবার কথা শুনতে। সে তার খেলা চালিয়ে যেতে থাকে, প্লাস্টিকের ফুলগুলি চারিদিকে ছুঁড়তে থাকে।
লোকনাথের সাথে সতীনাথের পরিচয় হয়েছিল অদ্ভুতভাবে। সেদিন সতীনাথ স্কুটার চালিয়ে এক কাজে বেরিয়েছিল। পথে হঠাৎ তার অর্ধাঙ্গিনীর ফোনকল পায় সে। সে তাড়াতাড়ি ব্রেক কষে রাস্তার কিনারে স্কুটার থামিয়ে স্কুটারে বসেই ফোনালাপ করতে থাকে। এইসময় অনল ছেলেটা সামনে এসে তার স্কুটারের সামনের চাকায় দমাদম লাথি মারতে থাকে। প্রথমে ওইটুকু ছেলের এত রাগ দেখে সতীনাথ বেশ আশ্চর্য হয়েছিল। সে ছেলেটাকে বলেছিল, স্যার স্যার, করছেন কী ? ছেলেটা বলেছিল, সরো এখান থেকে। গাড়িতে উঠব। গাড়ির কথা শুনে সতীনাথ চারিদিকে লক্ষ করতেই দেখে সে দাঁড়িয়ে আছে এক রাস্তায় পার্ক করা মারুতি কারের দরজার সামনে। সেই কারের সামনেই লোকনাথ আর তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তারা বেশ মজা করে ছেলের কাণ্ডকারখানা দেখছিল। সামনেই একটা সরকারি পার্ক আছে, বোধহয় তারা সেখানে গেছিল। হয়তো এখন ফিরে এসেছে। ছেলেটার মা-বাবার এমন আচরণ দেখে সতীনাথের বেশ রাগ ধরে গেছিল। মনে মনে ভাবল, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। সে স্কুটারটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে লোকনাথদের কাছে গিয়ে বলল, আপনাদের যেন চেনা চেনা লাগছে। তারপরই শুরু হয়েছিল পরিচয়পর্ব। তখনই জানা গেল তারা কাছাকাছিই থাকে, লোকনাথ নতুন ফ্ল্যাট কিনে ঢুকেছে কয়েক মাস হল। তখনই সতীনাথ চায়ের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল লোকনাথদের, উদ্দেশ্য একটাই — এক টাইট দেওয়া।
চা-টা খাওয়া একসময় সাঙ্গ হল। এই সময়ের মধ্যে অনল দেয়ালে টাঙানো দুটো ক্যালেণ্ডার টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেছে, তারপর সতীনাথদের বেড়ালটাকে এক বই ছুঁড়ে ছুঁড়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সতীনাথ এবার মোবাইল দিয়ে লোকনাথদের কয়েকটা ফটো তুলে নেয়। বলা বাহুল্য, লোকনাথরা এই ছবি তোলার সময় খুশিমনে পোজও দিল। লোকনাথ জিজ্ঞেস করল, এসব ফেসবুকে দিচ্ছেন নাকি ?
সতীনাথ জবাব দেয়, হ্যাঁ, তবে এখন নয়, কুড়ি বছর পর।
লোকনাথ অবাক হয়, মানে ? বুঝলাম না।
— মানে কিছু না। কুড়ি বছর পর ফেসবুকে দিয়ে বলব কুড়ি বছর আগের ফটো, এনারা এখন কেমন আছেন ? মানে কুড়ি বছর পর আমি দেখতে চাই আপনারা ছেলেটাকে লাই দিয়ে দিয়ে কোন্ পদার্থে পরিণত করেছেন।