বাড়ির কম্পিউটার – সন্তোষ উৎসুক

বাড়ির কম্পিউটার – সন্তোষ উৎসুক

বাড়ির কম্পিউটার      (ছোটোদের গল্প)

সন্তোষ উৎসুক

শেখু শৈশব থেকেই গাড়ি পছন্দ করত। টিভিতে গাড়ির রেসিং দেখে শিহরিত হত। বাজারের দোকানের শোকেসে সাজানো ছোট বড়, রঙিন গাড়িগুলি তার কাছে একটা সুস্বাদু চকোলেটের মতো মনে হত। যে গাড়িটি সে পছন্দ করত তা তার বাবাকে কিনতে বলত। এভাবে তার কাছে কয়েক ডজন গাড়ি জমে গেছিল। নীল, হলুদ, লাল, সাদা রেসিং গাড়ি, পেট্রোল গাড়ি, জিপসি, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি। যখন তার বাড়িত কোনো সহপাঠী বন্ধু আসত, তখন সে তাদেরকে অত্যন্ত গর্বের সাথে তার গাড়ির জগতে নিয়ে যেত। তার গাড়ির সম্ভার দেখে অনেক শিশু তাকে ঈর্ষা করত।

একদিন যখন তাদের এক প্রতিবেশী সত্যিকারের একটি নতুন গাড়ি কিনল, তখন সে এটি দেখতে গেল। গিয়ে সে গাড়িটি স্পর্শ করে করে সব কিছু দেখল। বাড়িতে ফিরে সে বাবাকে বলল, “বাবা, ওই আঙ্কেল নতুন গাড়ি কিনেছেন তবে তারা এটিকে পরিষ্কার রাখেন না, যখন আমরা এরকম গাড়ি কিনব তখন আমি কিন্তু গাড়িটি খুব পরিষ্কার রাখব”। তারপর সে তার বাবাকে বারবার একটি বাস্তব গাড়ি কেনার কথা বলতে শুরু করল। শেখু তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, কখন আমাদের গাড়ি আসবে? মা তাকে বুঝিয়ে বললেন যে তোমার বাবা পরিকল্পনা করছেন এবং শীঘ্রই এটি কিনবেন। তার স্বপ্নটি পূর্ণ হল যখন একদিন তার বাবা তার প্রিয় হলুদ রঙের এক গাড়ি নিয়ে এলেন।
শেখুর খুশির আর অন্ত ছিল না, তার মন রামধনুর রঙে রঙিন হল। স্কুল থেকে ফিরে সে বেশ কয়েক দিন ধরে তার ছোট বোন আনুর সাথে গাড়িতে বসে থাকত, হাত দিয়ে গাড়িটা পরিষ্কার করত। তারপর সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ত। এমন কি যদি টায়ারে মাটি লেগে থাকত তবে সে সেগুলিকে তার হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলত। একদিন বাজারে শেখু এক শোরুমে একটি নতুন ধরনের খেলনা গাড়ি দেখতে পেল। বাড়িতে এসে সে সেই খেলনা গাড়িটিকে কেনার জন্য বলতে শুরু করল। বাবা তাকে মানা করে বোঝালেন যে এখন তাদের কাছে এক আসল গাড়ি রয়েছে, ব্যয়বহুল খেলনা গাড়িতে অর্থ ব্যয় করার কী দরকার? শেখু উত্তর দিল, “আহা তুমি চলোই না বাজারে, তাড়াতাড়ি না গেলে সেটা পাবো না”। শেখু দেখেছিল গাড়িটার দাম আটশ টাকা এবং গাড়িটি রিমোট কন্ট্রোলে চলত। বাজারে যাবার পর দোকানদার গাড়িটা খোঁজার চেষ্টা করল কিন্তু শেখুকে সেই গাড়িটি দিতে পারল না। প্রিয় জিনিসটি না পেয়ে শেখুর মন খারাপ হয়ে গেল।
তার বাবা বললেন, “চলো এখন বাড়ি যাই, পরে কথা বলব”। বাবা বাড়িতে এসে বললেন, “শেখু, তুমি পরবর্তী বড় ক্লাসে উঠবে। তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং অনেক পড়াশোনা করতে হবে। আমি এত বেশি অর্থ ব্যয় করে তোমার জন্যই একটা বাস্তব গাড়ি কিনেছি। এখন তোমার ছোট বাচ্চাদের মত খেলনা গাড়ি কেনা উচিত নয়। পরিবর্তে তোমার বই কেনা উচিত, একটা কম্পিউটারও নেওয়া উচিত যা তোমার কাজ দেবে। আমি তোমাকে একটা কম্পিউটার কিনে দিতে চাই।”
শেখু উত্তর দেয়, “ঠিক আছে। চলো আমরা গাড়িতে করে সেটা কিনে আনি। আমি স্কুলেও কিছুটা শিখে নিয়েছি।”
বাবা বললেন, “এখন স্কুলেই শিখে যাও, পুত্র। এক ভাল কম্পিউটার কেনার জন্য বেশ কিছু টাকাও লাগে। তুমি নিজের পকেট থেকেই টাকা বাঁচিয়ে কিনতে পারো। “
— “আমাকে কোথায় বাঁচাতে হবে” শেখু জিজ্ঞাসা করল।
— “প্রতি মাসে খেলনা গাড়ি কেনা বন্ধ কর, এভাবে এক বছরে অনেক টাকা বাঁচনো যাবে”। তার মা বললেন।
কম্পিউটারের আকর্ষণ শেখুকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সে লাফিয়ে বলল, “বাবা, এক বছরে হাজার হাজার টাকা বাঁচাতে পারব। এছাড়াও আমার কাছে পুরষ্কারের অর্থ এবং বৃত্তিও থাকবে। “
ছোট বোন আনুও বলল, “আমারও কিছু টাকা থাকবে”।
এভাবে বাবা শেখুকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে টাকা জমিয়ে কম্পিউটার আনা যায়। সেজন্যে তাকে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সে এবং আনু একসঙ্গে কম্পিউটারের জন্য অনেক টাকা জমিয়ে ফেলেছিল
শেখু যখন পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হল, তখন তার বাবা তাকে একটি ভাল কম্পিউটার দিয়েছিল। এতে শেখু তার বাবাকে বলেছিল, “খুব ভাল হল যে আমি খেলনা গাড়ি কেনা বন্ধ করে টাকা জমিয়ে পরে আমি কম্পিউটারের মত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পেয়েছি।”
এভাবেই শেখু এবং আনুর বাড়িতে কম্পিউটারটি এল।