ঊনকোটি নিয়ে কিছু কথা – অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঊনকোটি নিয়ে কিছু কথা – অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঊনকোটি নিয়ে কিছু কথা

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঊনকোটি প্রাচীন। ঊনকোটি রহস্যময়। জলজঙ্গলের মাঝে, ঝরনার কুলকুল ধ্বনি আর পাখির নির্জন উড়ে যাওয়ার ভেতর শান্ত মৌন পাথরের দেবতা। কেউ কিছু বলছে না। সে এক অপ্রাকৃত দৃশ্য। ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত ঊনকোটি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকেই এমন প্রতিবেশ নিয়ে উপস্থিত। ঠিক কবে কীভাবে এই ক্ষেত্রটি বিকশিত হয়েছে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সেসব মতামত এবং ব্যাখ্যা, সব মিলে এখন এটি একটি কিংবদন্তির চেহারা নিয়েছে। কিংবদন্তি হল তা, যাতে মিশে থাকে ইতিহাস ও কল্পনা। ঊনকোটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান রকম আখ্যান, এবং সবগুলি আখ্যানেই জড়িয়ে আছে এত প্রাচীনতা, যে তাকে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা একটি দুরূহ ব্যাপার। প্রথমে ঊনকোটিকে জড়িয়ে যেসব আখ্যানগুলি জনমহলে প্রচারিত সেগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে। এখানে বলার বিষয়, প্রতিটি আখ্যানেই সামান্য কিছু বৈচিত্র্য এবং পার্থক্য থেকে থাকতে পারে,  কিন্তু মোটমাট আখ্যান বা অনুষঙ্গগুলি প্রায় কাছাকাছি।

ক. 
কথিত আছে দেবাদিদেব মহাদেব একবার অসংখ্য দেবতা পরিবৃত হয়ে সদলবলে কাশীযাত্রা করছিলেন। দীর্ঘভ্রমণে পরিশ্রান্ত দেবতারা যখন রঘুনন্দন পাহাড়ে এসে পৌঁছান তখন সূর্যাস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং দেবাদিদেব সিদ্ধান্ত নিলেন ঐ রাত তিনি এখানে কাটাবেন এবং পরদিন প্রত্যুষে সকল দেবতা মিলে কাশী যাত্রা করবেন। পর দিন ঊষাকালে একমাত্র মহাদেবের ঘুম ভাঙল, কিন্তু বাকি সব দেবতারা শ্রান্তভাবে শয়ন করছিলেন। দেবাদিদেব এতে রুষ্ট হন এবং তিনি একাই কাশী যাত্রা করেন। মহাদেবের অভিশাপে আর কোনো দেবতার ঘুম ভাঙ্গেনি। মহাদেব চলে গেলে এক কম এক কোটি দেবতা সেই রঘুনন্দন পাহাড়ে অনন্তকাল ধরে ঘুমিয়ে থাকেন সেজন্যই এর নাম হয়েছে ঊনকোটি। উপরিউক্ত এই কাহিনিটির অনেক বৈচিত্র্য আছে। সবগুলির মধ্যেই কিছু কিছু পার্থক্য রয়েছে।

খ. 
ঊনকোটি নিয়ে দ্বিতীয় আখ্যানটি হল একবার এক শিল্পী সিদ্ধান্ত নিলেন কাশীর অনুরূপ একটি তীর্থক্ষেত্র প্রতিষ্ঠিত করবেন। তার নাম হল কালু কামার। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এক রাত্রের মধ্যে সব মূর্তিগুলি তৈরি করবেন। তো সদলবলে তিনি লেগে গেলেন মূর্তি নির্মাণে। কিন্তু এক রাত্রিতে তিনি এক কোটি মূর্তি তৈরি করতে পারেননি। একটিমাত্র মূর্তি তৈরি করা বাকি ছিল, এমন সময় একটি কাক গাছের ডালে বসে ডেকে ওঠে ভোর হবার পূর্বাভাস জানিয়ে। এক কম এক কোটি দেবতা নির্মাণ করতে পারায় এই ক্ষেত্রটির নাম হয়ে যায় ঊনকোটি। এই কাহিনিটির মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য ও পার্থক্য। কোথাও শোনা যায় শিল্পী কালু কামারের বদলে একজন রাজার কথা। কোথাও এই রাজাকে স্থানীয় রাজা বলে বলা হয়েছে, যার নাম সুব্রাই খুঙ। সুব্রাই খুঙকে আবার মহাদেবের সঙ্গে এক করে ভাবা হয়েছে। তবে নানান আখ্যান থাকলেও মোটামুটিভাবে কাহিনিটি এরকমই।

গ. 
একবার কোন অজ্ঞাতনামা নৃপতির আমন্ত্রণে স্বর্গ থেকে দেবতারা এসেছেন মর্তভূমিতে। তবে মর্তভূমিতে থাকা অবস্থায় সবিতা সন্দর্শন দেবতাদের পক্ষে অশ্রদ্ধেয় পাপাচারণ। তাই দেবগণের শর্ত সূর্য ওঠার আগেই, কাকপক্ষী ডেকে ওঠার আগেই তারা মর্তভূমি ত্যাগ করে ফিরে আসবেন স্বর্গধামে। দেবতারা এলেন। ধন্য হলেন রাজা। তাদের চরণস্পর্শে মর্তভূমি পুণ্যবান হল। মুগ্ধ হলেন রাজা। তাদের বিভায় এবং চাঁদের জোছনায় সমস্ত জগৎ প্লাবিত হল। কিন্তু সর্বনাশ হল সে পথেই। আকাশ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল দেখে ভোর হয়েছে মনে করে প্রভাত বন্দনা করতে শুরু করল এক কাক। কাকের কণ্ঠে ডাক শুনে মর্ত্যভূমির মানুষদের ঘুম গেল ভেঙে। মানবকুলের সঙ্গে প্রভাত যাপন করার অপরাধে দেবতারা পাথর হয়ে গেলেন। সেখানে ছিলেন এক কম এককোটি দেবতা। সেই থেকে এর নাম ঊনকোটি।

ঘ.
শোনা যায় এই রঘুনন্দন পাহাড়ে তপস্যা করতেন মহর্ষি মনু। মনু অনেক জন ছিলেন বলে অনেকেই এখন স্বীকার করেন। সুতরাং কোন মনু ছিলেন এটা এখন আর স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। মনু নদীর নাম যে মহর্ষি মনুর নাম থেকে হয়েছে এটা সম্পর্কে অনেকেই নিসংশয়। কথিত যে মহর্ষি মনু মনুনদীর তীরে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে পূজা শুরু করেন। রঘুনন্দন পাহাড়ের কাছাকাছি মনু নদীর অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। সেই শিবলিঙ্গ কি ঊনকোটিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, মনু নদী কি ঊনকোটির আরো কাছাকাছি ছিল, পরে সরে গেছে, এখন একথা আর কে স্পষ্ট করে বলতে পারে! তবে এ অঞ্চলে শৈব ধর্মের বিস্তার শৈবতীর্থ উনকোটিকে যে প্রভাবিত করেনি, একথাও বা অস্বীকার করা যায় কীভাবে!

ঙ.
‘ঊনকোটি মাহাত্ম্য’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে মহর্ষি কপিল বরবক্র অর্থাৎ বরাক এবং মনুনদীর মধ্যবর্তী স্থানে ঊনকোটি পাহাড়ে এই তীর্থক্ষেত্র ও লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এইসব পৌরাণিক এবং প্রাগৈতিহাসিক অনুষঙ্গ বাদ দিয়েও কিছু ঐতিহাসিক বক্তব্য বা জটিলতাও রয়েছে। 

ক.
রাজমালায় ঊনকোটিকে ত্রিপুরার রাজবংশের অবদান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ত্রিপুরাব্দ প্রবর্তনকারী যুঝারফার পঞ্চদশ পুরুষ কুমার নামে খ্যাত শিবভক্ত ত্রিপুরেশ এই অঞ্চলে শিবোপসনা করেছিলেন। বিভিন্ন গ্রন্থে আছে যে কৈলাসহর অঞ্চলের পূর্বনাম ছিল ছাম্বুলনগর এবং এখানেই ছিল ত্রিপুরার রাজাদের প্রাচীন রাজধানী। যদিও রাজমালায় বর্ণিত ত্রিপুরার রাজাদের প্রায় শতাধিক নামগুলি অধুনা তৎকালীন ব্রাহ্মণদের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে ব্যাখ্যা করছেন অনেক ঐতিহাসিকগণ। বিভিন্ন রাজবংশকে ভারতবর্ষে সূর্য বা চন্দ্রবংশে সম্পৃক্তির রীতি প্রাচীন। এক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই পুরান বা রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে তাদের যুক্ত করে দেখা হতো। যেমন ত্রিপুরার রাজাদের পূর্বপুরুষ ছিল মহাভারতের দ্রুহ্যু। এছাড়া চতুর্দশ শতাব্দীর পূর্বে ত্রিপুরার রাজাদের এইসব অঞ্চলে আগমনের কোন ইতিহাস কোথাও পাওয়া যায় না। কুমার বা ত্রিপুরেশের ঐতিহাসিকতা সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।

খ.
নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালির ইতিহাস আদিপর্ব’ গ্রন্থে ঊনকোটিকে বাংলার পাল রাজাদের আমলে তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন। গোপাল রাজা হয়েছিলেন অষ্টম শতাব্দীতে। সুতরাং ঊনকোটি অষ্টম শতকের পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয়ে থাকতে পারে। 
মানবেন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের অববাহিকা এবং বাণভট্ট প্রাচীন ইতিহাসের বিস্ময়’ গ্রন্থে ঊনকোটি নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ব্যাখ্যা। তিনি ঊনকোটি শব্দের ব্যুৎপত্তি খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে। বলেছেন ‘ঊনকোটি’ শব্দ নন্ন-নারায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। নন্ন> অন্ন> উন। তিনি বলেছেন পাল রাজা ধর্মপালের কালে এই নন্ন-নারায়ণ সম্ভবত যুগ্ম দেবতা। নন্ন শব্দটি তামিল শিব ভক্ত নয়নার এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে তিনি অনুমান করেছেন। নন্ন-নারায়ন শিব-বিষ্ণু অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে বলে তার বিশ্বাস। ঊনকোটির সুবিশাল ভাস্কর্য মূর্তির মুখমন্ডলের একপাশে সুস্পষ্ট গোঁফ জেগে রয়েছে। এ থেকে তিনি অনুমান করেছেন, এটি আসলে যুগ্ম মূর্তি নন্ন নামক দেবতারই কল্পিত মূর্তি। ধর্মপালের নন্ননারায়ন মন্দির আধুনিক ঊনকোটি অঞ্চলে অবস্থিত বলে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন মহারাজা ধর্মপালের স্ত্রীর নাম দন্না দেবী দক্ষিণ ভারতের নারী। ধর্মপালের স্ত্রী দন্না থেকে ঊন শব্দটির আগমন হতে পারে বলেও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। 

গ.
ইউনেস্কোর প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটে আবার বলেছে যে ঊনকোটি নির্মিত হয়ে থাকবে প্রাক মানিক্য যুগে অষ্টম থেকে নবম শতাব্দীতে। তবে এক্ষেত্রে তারা পাল রাজাদের কথা বলেননি। বলেছেন দেব রাজাদের কথা। দেব রাজাদের আগ্রহ এবং অর্থানুকুল্যে ঊনকোটির নির্মাণ হয়েছে বলে ইউনেস্কো বলছে।

 ঘ.
অনেকে আবার ঊনকোটির সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন কম্বোডিয়ার আঙ্কর ওয়াট মন্দিরের। সুতরাং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গেও একে সংযুক্ত করে দেখেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ঊনকোটি একটি বিস্ময়, একটি অজানা রহস্যের আলয়। 

ঙ. 
রাজমালায় উল্লেখ আছে, কালাপাহাড় ঊনকোটিকে ধ্বংস করেছিলেন।

চ.
তুর্কি আক্রমণের ফলেও ঊনকোটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বলেও উল্লেখ আছে বিভিন্ন গ্রন্থে।

ছ.
ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে বলেও বর্ণিত আছে রাজমালায়। এবং ভূমিকম্পের পরে ত্রিপুরার রাজা সেই স্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।

তবে ঊনকোটিতে শৈব ধর্মের নানা অনুষঙ্গ খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। শিবলিঙ্গ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূর্তির মধ্যে এর অজস্র প্রমাণ রয়েছে। লোকমুখে এটি শৈবতীর্থ ঊনকোটি নামেই অত্যধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এছাড়া দেখা যায় সমস্ত উত্তর ত্রিপুরা নাথ জনজাতির মানুষেরা অনেক বেশি পরিমাণে বাস করে। নাথেরা শৈব। এছাড়া রিয়াং মানুষেরাও এই অঞ্চলে বেশি বসবাস করে। রিয়াংরাও শৈবধর্মে বিশ্বাসী। শিবমূর্তি ছাড়াও ভৈরব মূর্তি, হর-পার্বতী মূর্তি, গণেশ মূর্তি, ষাঁড়, তন্ত্রের বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি ঊনকোটিতে খুঁজে পাওয়া যায়। এর সঙ্গে প্রাচীনতন্ত্রের যোগাযোগ রয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। জয়ন্তনাথ চৌধুরী ‘আবৃত ইতিহাস ঊনকোটি’ গ্রন্থে এর প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। পাশেই থাকা কৈলাসহর অঞ্চলটি সঙ্গে এর একটা সূক্ষ্ম যোগাযোগ রয়েছে। কারণ কৈলাস + হর। হর মানেই শিব। সমস্ত পূর্ব ভারত আসলে মাতৃতান্ত্রিক অর্থাৎ এখানে শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। আমরা লক্ষ করলে দেখব ভারতবর্ষের একান্ন পীঠের বেশিরভাগ পীঠই রয়েছে পূর্ব ভারতে। বুঝতেই পারা যায়, শক্তিপীঠের এই অঞ্চলে  শৈব ধর্মের প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই ঊনকোটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকতে পারে। যদিও জহর চ্যাটার্জির মত নব্য ঐতিহাসিকেরা ঊনকোটিতে খুঁজে পেয়েছেন শৈব ও বৌদ্ধ ধর্মের সংমিশ্রণ। শিবের মুখের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন গৌতম বুদ্ধের মুখের আদল। শিবের ধ্যান নেত্র যেন গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমুখের আদল। শ্রীভূমির দেব রাজাদের হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম উভয়ের প্রতি সামান নজর ছিল। তারা ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। ঊনকোটিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সমন্বয় ঘটেছে। সমর চন্দ্র দেববর্মা তার ‘আবর্জনার ঝুড়ি’ গ্রন্থে ডম্বুরের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের সময় বৌদ্ধধর্মের অবনতির মুহূর্তে ছবিমুড়ার সেই মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি নির্মিত হয়েছিল। বলেছেন, ত্রিপুরায় ভাস্কর্য নির্মাণের কোনও পরম্পরা নেই। সবই বহিরাগত। তিনি গয়া থেকে ভাস্করদের আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুতরাং এই কথাটি ঊনকোটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ভাবা যেতে পারে।  অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের সময় ঊনকোটি নির্মিত হয়ে থাকতে পারে। এবং এর নির্মাণে বহিরাগত শিল্পীদের হাত থাকতেই পারে। 
একটা কথা সহজেই বুঝা যায় প্রাচীন শ্রীহট্টের এই পাহাড়ের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। কোন কোন মূর্তির মুখের মধ্যে মঙ্গোলয়েড মুখের আদল দেখলেও মূর্তিগুলিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায় এটি কোনো একটি সময়ে গড়ে ওঠেনি। এবং মূর্তিগুলি একজন শিল্পীর কারুকৃতি নয়। এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তৈরি হয়েছিল। সুতরাং ইউনেস্কো যে বলছে, মূর্তিগুলি অষ্টম থেকে নবম শতাব্দীর ভেতরে অর্থাৎ প্রায় ১০০ বছরের ব্যবধানে গড়ে উঠেছিল, তা হতেই পারে। মূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ ছিলেন উঁচুদরের দক্ষ শিল্পী, আর কেউ কেউ ছিলেন নিতান্ত শিক্ষানবিশ। তবে বুদ্ধ হোক বা শৈব ধর্মের প্রকাশ হোক, দীর্ঘ সময় ধরে এই মূর্তিগুলি যে নির্মিত হয়েছিল তা সহজে বুঝা যায়। যদিও সবই আমরা কল্পনা বা অনুমান করতে পারি, তীব্রভাবে নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়। ঊনকোটির নির্জনতায় গেলে সেই প্রাচীনকালের নাম না জানা শিল্পীদের ত্যাগ, তিতিক্ষা, শ্রম এবং মেজাজ ও শিল্পকুশলতার পরিচয় আমরা সহজেই অনুভব করতে পারি। ঊনকোটি যেন সেতু। রহস্যের সঙ্গে আজকের বাস্তবের। অজানার সঙ্গে জানার। ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্বাসের। তবে পাহাড়ের গোপনে অরণ্যের ভেতর অজস্র শিল্পীর হাতের জোরে ভালবাসা ও নিষ্ঠায় গড়ে ওঠা যে পবিত্র দেবভূমি তা যুগ যুগান্তর ধরে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তা সত্য।