পাহাড় চুড়োয়
সুদীপ ঘোষাল
আমরা চারজন গ্রামের ছেলে আর একজন মেয়ে। থাকি প্রত্যন্ত গ্রামে। তবুও আমরা বছরে একবার করে বেড়াতে যাই। এবার আমরা ঠিক করলাম পাহাড় দেখব।
এক মাস ধরে সব তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। টাকা পয়সা জোগাড়, লাগেজ — সমস্ত কিছু জোগাড় করে ফেললাম। আগে থেকেই টিকিট বুক করে ফেললাম। একদম রিটার্ন টিকিট পর্যন্ত। তারপর শুরু করলাম যাত্রা।
প্রথমে গ্রাম থেকে এলাম কাটোয়া। তারপর কাটোয়া থেকে কলকাতা। কলকাতা থেকে চলে এলাম সোজা দার্জিলিং। নিউ জলপাগুড়ি স্টেশনে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। দার্জিলিং এসে শেরপা ভাইদের সাহায্য ছাড়া এক পাও চলা উচিত নয়। পাহাড়ে লাফা জোঁক কোথায় আছে ওরা ঠিক জানে। ভুল করে ওদের আস্তানায় গেলে হাজার হাজার জোঁক রক্ত চুষে মেরে দেবে। শেরপাদের সমস্ত কিছুই জানা। তাই তাদের একজনকে সঙ্গে নিলাম।
শেরপার নাম শের বাহাদুর। শেরপাকে নিয়ে আমরা চড়ে বসলাম জীপে। কচুরি, পুরি, আর চাটনি, সিরি ভাজা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম।
সে আমাদের প্রথমে লাফিং বুদ্ধের মন্দিরে নিয়ে গেল। সেখানে আমরা হাসির মাধ্যমে লাফিং বুদ্ধের পূজো করলাম এবং সমস্ত মঙ্গল কামনা করলাম। শের বাহাদুর বলল, এই মন্দিরে পুজোর ফুল হচ্ছে হাসি। এখানে যত হাসতে পারবেন ততো আপনার সাফল্য সামনে এগিয়ে আসবে। আমাদের খুব ভালো লাগলো এক মহিলা পুরোহিতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে।
খুব ভালো লাগলো কারণ তিনি আমাদের সারা জীবনে দুঃখ কষ্ট মধ্যেও কি করে হাসতে হয় তা শেখালেন।
এরপর শের বাহাদুরকে বললাম আমরা পাহাড়ে উঠতে চাই চলো আমরা পাহাড় দেখব।
এ্যাডভাঞ্চারের পালা এবার।
শের বাহাদুর আমাদের পোশাক সম্বন্ধে যা বলেছিল, তাই আমরা সঙ্গে নিয়েছি অতএব অসুবিধা কোন নেই, এখন শুধু অপেক্ষা। শের বাহাদুরের সঙ্গে মোবাইলে আমাদের কথা হত। বিরাজুলের মামার বন্ধু এই শেরপা।
সাধারণ ট্র্যাকিং করে উপরে চললাম। এক জায়গায় দড়ি লাগানো হয়েছে। সেই দড়ি পেঁচিয়ে উঠে এলাম। সেই খাড়া পাথরের দেয়ালে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টায় পার হলাম পাথর এলাকা। আমরা ছয়জন। শের বাহাদুর, আমি, রমেন, বিশু, বিরাজুল আর মণি।
এবার পরে নিলাম মাউন্টেনিয়ারিং জুতা। নিচে লাগিয়ে নিলাম স্টিলের কাঁটা ক্যাম্পান। এখান থেকে একরাম শু পড়ে চলতে হবে বলে এই জায়গার নাম ক্রাম্পন পয়েন্ট।
উঠে এলাম। এই পথেই উঠে যেতে হবে, আগেই দড়ি লাগানো হয়েছে। শের বাহাদুর বলল, আপনারা ভয় করবেন না এখানে ফাটল আছে। তুষারে স্লিপ কেটে পড়ে যাওয়া ভয় আছে। আপনারা নিশ্চয়ই এর আগেও উঠেছেন। সেইজন্য অভিজ্ঞতা আছে। আপনারা সাবধানে আমার সঙ্গে সঙ্গে আসুন। শের বাহাদুর সামনে চলল, পিছনে আমরা চারজন। শের বাহাদুরের সাহস দেখে আমরা অবাক হলাম।
শের বাহাদুর বারবার সাহস দিচ্ছে, চলিয়ে, চলিয়ে, কুছ ডর নেহি। হাম হে আপকে সাথ।
একটানা চলা আমাদের বিরক্ত লাগছে তবু তার মধ্যে আনন্দ আছে, খিদেও পেয়েছে খুব। শের বাহাদুর তবু বলছে, এখন না, চলুন আমাদের এখনো অনেকটা হেঁটে যেতে হবে।
এখনো অনেকটা পথ আমাদের বাকি আছে।
আমাদের মধ্যে একমাত্র মহিলা হচ্ছে মণি। মণি যেমন সহজ তেমনি তার সক্ষমতা। সাঁতার ক্যারাটে কুংফু কিছুতেই তাকে হার মানানো যায় না। সে খুব সহজ সরল এবং চালাক মেয়ে। দেখতে কালো হলেও তার অন্তর খুব ভালো। পাহাড়ে চড়তে গাছে উঠতে সাঁতার কাটতে তার কোন ভয় লাগে না ছোট থেকেই ।
চলে এলাম গণ্ডকী নদী পাড়ে ছোট গ্রামে। প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম। শের বাহাদুর বললেন তুমলোগ রেস্তোরাঁ কা খাবার খাতে হো। আভি গাঁওকা খানা চাখ লো। হম ইন্ততেজাম করকে লে আতা হুঁ।
রমেন বলল, আমরা গ্রামেরই ছেলে আমরা রেস্তোরাঁর খাবার খাইনা। গ্রামের খাবারই খাই। তুমি গ্রামের খাবারই নিয়ে এসো আমাদের ভালো লাগবে।
পাহাড়ে ওঠার শখ আমাদের পূর্ণ হল। এখন গ্রাম দেখার পালা। আজকে আর গ্রাম দেখতে পারবো না।
শের বাহাদুর শোয়ার ব্যবস্থা করল। একটা ঘর ভাড়া করে দিল। সেই সব কিছু ব্যবস্থা করল। খেয়েদেয়ে রাত্রে শুয়ে পড়লাম।
তারপর সকাল বেলা প্রাতরাশ সেরে আমরা শুরু করলাম গ্রাম ঘুরতে। দুই পাশে খাড়া পাহাড়ের ঢাল। মাঝে মাঝে মেঘের চাদর ভেদ করে এগিয়ে চলেছি। টপকে যাচ্ছি একের পর এক ছোট বড় ঢাল। উচ্চতা বাড়ছে। বরফে কানে তালা লেগে যাচ্ছে। গাছপালা কমে আসছে। গণ্ডকী নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ের উপর দিয়ে। চোখ পড়ছে বেশ কিছু তুষারাবৃত পাহাড়। এখানে শুধু পাহাড় আর পাহাড় পাহাড়।
এইভাবেই চারপাশে রূপ দেখতে দেখতে দু’ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম গ্রামে।
শেরপা বলল, ধামাকা ধামাকা ওয়েসিস বয়ে চলেছে নদীর জলে।
বুঝতে পারলাম না ভাষা। সেখানে আমরা একদিন থাকলাম। এখান থেকে হেঁটে পৌঁছানো যায় তিব্বত সীমান্তে। পৌঁছতে পারলে সেখানে বাস অ্যাভেইলেবেল। বলল শেরপা।
এখানে কোন অসুবিধা নেই। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বলে বহু বছর এখানে জমজমাট পরিপূর্ণ। পর্যটকরা এখানে এসে এই জায়গা মিস করেন না। এখানে এলেই মনে পড়ে যায় অতীশ দীপঙ্কর-এর কথা। সারা গ্রাম জুড়ে বৌদ্ধমূর্তি আর বুদ্ধের বাণী জীবনচিত্র খোদাই করা। অসংখ্য ছোট বড় পাথরের ফলক। পরপর সাজিয়ে রাখা আছে।
তারপর আমরা চলে গেলাম হোটেলে।
হোটেলে আছে এক চীনা দল। ওরা পাহাড়ে উঠার জন্য এসেছে। এখন দক্ষিণ-পশ্চিমে থেকে বেসক্যাম্পে উঠে যেতে হয়। অভিযানের পোর্টার ঘোড়া সবই ঠিক করতে হয় এখান থেকে। নিচের কেউ বইতে পারবে না এটাই এখনকার নিয়ম। শের বাহাদুর বলল।
বিরাজুল খুব সাহসী ছেলে। সে বরাবরই সবাইকে সাহস দেয়। সে বলল, আমরা পাহাড়ে উঠে এই গ্রামে যাবো। এই তিব্বত সীমান্তে। আমরা বাস পেয়ে যাব, যাওয়ার সময় তোদের চিন্তা নেই। এই বাসে করে আমরা দার্জিলিং যেতে পারবো।
বিশু একটু ভীতু প্রকৃতির, তার পেট খারাপ হয়ে গেছে। এত পরিশ্রমের পর উল্টোপাল্টা খাবার খেয়েছে বলে তার পেট খারাপ হয়েছে। সে আজকে হোটেলে বসে থাকল। আমরা চারজনে ঘুরতে বেরোলাম। কিন্তু শের বাহাদুর বিশুকে ঘোড়ায় চাপালো।
শের বাহাদুরকে শেরপাদের অনেকেই চেনে। এখানে তারা সবাই জিজ্ঞেস করছে, তার ভালো-মন্দ আর আমাদের কথা। আমরা বললাম আমরা গ্রাম থেকে এসেছি। সেটা হিন্দিতে তাদের বুঝিয়ে বলে দিলো শের বাহাদুর।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা তো গ্রাম, তাও জিনিসপত্রের এত দাম কেন?
শেরপা বলল, এটাই তাদের লাভ। এই সিজনে ওরা যে জিনিসের দাম পাঁচ টাকা তা দশ টাকা বলে। দ্বিগুণ লাভ করে থাকে।
ভূমিতল থেকে এখানকার উচ্চতা সাড়ে চার হাজার মিটার। পুরো পথটাই আমরা কিন্তু হেঁটে এসেছি। সাড়ে চার কিলোমিটার পথ। সমতলে এটা কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু পাহাড়ে ভীষণ কঠিন। শেরপা বলল, বাহাদুর তুমলোগ। ইসিলিয়ে তুমলোগ সফল হো গয়া।
গ্রাম জুড়ে গাছ। গ্রাম থেকে অদূরে আমাদের সেই কাটোয়া শহরে আমরা পাহাড়ে ওঠার ট্রেনিং নিয়েছিলাম তার ফলে আমরা এতটা পথ এইভাবে আসতে পেরেছি। বিশু তখন সুস্থ হয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে সাবাসি দিয়ে বিশু বলল, তুমলুক বাহাদুর লড়কা হো। ইতনা দূর ছাব্বিশ ফুট মে কোই পাত্থার সে না নেহি সাক্তা। শুধু বড় বড় পাথর। স্লিপ করলেই প্রপাত ধরণীতলে।
আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা খোলার সাথেই চমকে গেলাম। চোখ মেলেই সুন্দরীর দেখা। ভোরের সোনালি আলোয় রাঙা পাহাড়।
এখান থেকে পাহাড়ে দুটো শৃঙ্গ দেখা যায়। পিছনেরটা মেইন পাহাড়। আর সামনেরটা ইস্ট। অল্প পরেই চলে এলো পরোটার সঙ্গে মাংস।
পোর্টারদের ঘোড়ায় আমাদের মালপত্র বেসক্যাম্পে পৌঁছে দেবে বলে মালপত্র একজন একজন করে ওদের বুঝিয়ে দিলাম।
চারটায় রওনা শুরু হল আমাদের প্রকৃত পশ্চিম পাশ দিয়ে পথ। খাড়াই পাহাড়ের পথ।
বিরাজুল ম্যাপ বের করে সবকিছু মিলিয়ে আগে চলছে।
মোবাইলে আমি লোকেশন দেখে এগিয়ে চলেছি। আমরা বাঁদিকে বেসক্যাম্পের পথ ধরলাম। এখন চলেছি দক্ষিণ দিক বরাবর।
প্রথমে বেশ বড় বড় গাছের গুঁড়ি দিয়ে চলার পর মাথা তুলেই সামনে চোখে পড়ছে পাহাড়, বড় গাছ। একসময় পথ শেষ।
এবার ঘাস পথ নেমে চলেছি ধীরে ধীরে। চীনারাও চলেছে আশেপাশে। নিজেদের মধ্যে বেশ মজা করতে করতে চলেছে চওড়া পথে।
সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা এক বড় গ্রামের কাছে পৌছালাম। পথের মাঝে বিশ্রামের জায়গা। পৌঁছানো মাত্রই দিল দোকানে দিল আলুসেদ্ধ আর আখের রস।
আলু নিয়ে ফটো সেশন শুরু করে দিলো অনেকে।
অল্প বিশ্রাম নিয়ে ফের ছুটে চলেছি। গাছের মাঝ দিয়ে একটানা।
নিচে হালকা মেঘ। এবার শুরু হল তুষারপাত। ঝমঝমিয়ে পড়ছে মাথার উপর। বিরাজুল বলল, আমাদের আর এগোনো ঠিক নয়। এবার আমরা ফিরবো।
শের বাহাদুর বলল, কেন আবার আরেকটু এগিয়ে যাবে না।
আমরা বললাম, না আর যাব না এত বিপদের ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।
তারপর আমাদের ফেরার পালা শুরু হল। মাঝে মাঝে বরফ পড়ছে।
ডানদিকের ঢাল থেকে নেমে আসে জলধারা। ছোট পাথরে পাথরে পা দিয়ে খুব সহজেই যাচ্ছি। কোনটা বেশ বড় পাথর। অনেক কসরত করে পার হতে হতে যাচ্ছি।
ধীরে ধীরে ঘাসের পথ শেষ হয়ে গেল। তারপর বালি মাটি কাঁকুড়ের পাথরে মাঝ দিয়ে চলে এলাম। তারপর স্থলভাগ। সমতল।
ক্রমশ চারপাশ আরো মেঘলা হয়ে এলো।
বেলা দুটো নাগাদ মনি বলল, আমরা পাহাড় দেখলাম। আমাদের অভিযান খুব ভালো হলো। তোমাদের সঙ্গে তাই আমার খুব ভালো লাগে।
সেখানেই শের বাহাদুরের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এক পরিচিত জনের। একসাথে দেখে আমাদেরকে চা বাড়িয়ে দিলো। আমরা চা ও জলখাবার খেয়ে বেশ মনোবল ফিরে পেলাম। অপরদিকে টুপটাপ বৃষ্টির মধ্যে উঠে এলাম আমাদের এলাকায়।
এখন আমরা সুন্দর আবহাওয়ার অপেক্ষায় আছি। পরদিন সকালে নদীর ধার বরাবর বেড়াতে গেলাম। সেখানে নদীর জলে পা দিলে জল বরফ হয়ে জমে গেছে।
এত ঠাণ্ডা নদীর জলে ঠাণ্ডা আরো বেড়ে গেছে।
মণি বললো বিরাজুলকে, তুই এই ঠাণ্ডা জলে যদি চান করতে পারিস পাঁচশো টাকা দেব। বিরাজুল রাজি হয়ে গেল।
আমরা বারণ করা সত্ত্বেও সে পোশাক খুলে নিজে চান করার পোশাক পরে নেমে পড়লো জলে। সেই ঠাণ্ডা জলে চান করে সে মণিকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিল। মণি টাকা বের করে দিল।
বিরাজুল পাঁচশো টাকা আমাদের পিছনে খরচ করল। আমাদের সন্ধ্যেবেলা মাংস ভাত খাইয়ে দিল।
তার পরের দিন দুপুরে পোশাপাখিরের গ্রামে ধীরে বৃষ্টি কমে এলো। বিকেলে চারপাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গেল। আমাদের শের বাহাদুর বলল, লোকাল গরমের হামলায় গত দুদিন প্রচুর গরম পড়েছে।
সে তো ভালো বাংলা বলতে পারে না। ভুল ভাল বলে।
এখনো ভয়ঙ্কর তুষারধসের ভয় আছে এখানে। প্রচুর লোক মরে যায়। আশেপাশে বিরাজুলের পাশেই একটা তুষার ধ্বস পড়ল। যে কোন সময় বিপদের আশঙ্কা।
সকাল থেকেই মেঘের চাদরে ঢাকা আবহাওয়া ভালো হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, কিন্তু আবার চারপাশ পরিষ্কার না হয়ে মেঘলা হয়ে গেল। মেঘলার মধ্যেই ০৯:৪৫ নাগাদ রওনা দিলাম।
একের পর এক বরফের ঢাল বেয়ে।
তারপর এইভাবে উত্তরে আমরা অনেক উঁচুতে উঠে পড়লাম। সেখানে কিন্তু নতুন সমস্যা দেখা দিল। ঝড় বইছে। আমরা তাঁবুগুলো জড়িয়ে ধরে থাকলাম। কিন্তু বিপদের আশঙ্কায় আমাদের গা কাঁটা দিয়ে উঠলো।
এবার আমরা তিব্বত সীমান্তে নেমে এসে দার্জিলিং যাওয়ার বাস ধরলাম। পাহাড়ি বাস একটু অন্যধরনের, এদের ছাদগুলো এত সুন্দর যে ঢালু রাস্তাতেও ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে।
বাসে আসতে আসতে পড়বে একটা পাহাড়-জঙ্গল। শের বলল।
এক জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে চা-বিস্কুট খেলাম, কেউ বাথরুম করলাম। কিন্তু সেই সুযোগে উঠে পড়েছে ৪ থেকে ৫ জন মুখোশধারী লোক। কারা কারা আমরা বুঝতে পারলাম না। ড্রাইভার ভয়ে মুখ খুলল না। কিছুক্ষণ বাস চলার পর মুখোশধারীরা নেপালি ছোরা বের করে বলল যার যার পকেটে টাকা পয়সা আছে দিয়ে দাও।
আমরা বুঝতে পারলাম এরা ডাকাত। মণি ভগবানকে প্রার্থনা করে সপাটে লাথি মারলো একটা ডাকাতের মুখে। সে চিৎ হয়ে পড়ে গেল।
সাথে সাথে আমরাও আক্রমণ শুরু করলাম আমাদের হঠাৎ আক্রমণে ওরা ধরাশায়ী হয়ে পড়ল। আমাদের সাহস দেখে ওরা ভড়কে গেল। ওরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল।
শের বাহাদুর আমাদের বাহবা দিলেন। তিনি মোবাইলে পিকচার তুলে আমাদের বলল, আপনাদের জন্যই এই বাস ভর্তি লোক এরা রক্ষা পেল। না হলে ডাকাতের দল আমাদের নিঃস্ব করে দিয়ে পালাতো। তারা প্রাণেও মেরে দেয়। অনেক সময় টাকাপয়সা পেলেও ছাড়ে না। আপনারা সত্যিই খুব ভালো কাজ করলেন। তারপর মোবাইল থেকে থানার লোকাল থানায় যোগাযোগ করে তিনি সেই ডাকাত গুলোকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন।
তারপর আমরা নিরাপদে ফিরে এলাম দার্জিলিং। দার্জিলিং থেকে চলে এলাম নিউ জলপাইগুড়ি। আর থামা নয়।
এবার ফেরার পালা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চলে এলাম কলকাতা। কলকাতা থেকে কাটোয়া। কাটোয়া থেকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে। দিন বয়ে যায়। এখনো স্বপ্ন দেখি বরফের মাঝে আমি হেঁটে চলেছি এক অনন্ত পথে, পাশে শের বাহাদুর। জানি, জীবন অনন্ত নয়। জানি, পাহাড়ের চূড়োয় অন্তত একবার হলেও অনেকেই উঠতে চায়।