স্বপ্নের আঁতুড়ঘর
সমর চক্রবর্তী
আমাদের দারুণ গর্বের শহরের উলঙ্গ শরীর বেয়ে নেমে আসা পোংটা ঘামের অস্বস্তিতে নগর জীবন এখন একেবারেই লেজেগোবরে এবং যথার্থই পরিত্রানহীন। পণ্যের হাতছানি দেওয়া থরে থরে সাজানো, নয়া নয়া সব চমকিলা প্রাচুর্যের ভারে ক্লান্ত রিক্ত — হাঁসফাস-অতৃপ্ত আভিজাত্য তখন আশ্রয় খোঁজে একটু সুরাহারে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই দ্বীপে বিভাজিত বিচ্ছিন্ন যত আবাসের সদর-পাড়া, পাড়া থেকে গলি ও তার তস্য গলি থেকে উৎসারিত বাহুল্য সংস্কৃতির নাগরিকবৃন্দের পরিভাষাহীন দূরন্ত গতি ছাড়া আর কোন অপশন নেই। এই চিহ্নিত করার বিপরীতে এক ভীষণ একঘেয়ে তিতিবিরক্ত ভাল্লাগেনা ভাল্লাগেনা অসুখে খোপ খোপ হাত খাঁচার মত সন্তুষ্টির উদ্যানে অথবা লংড্রাইভের ছলে নারী ও সুরায় সিক্ত হতে হতে যখন কবিতার মতো দূরন্ত যৌবন পালাতে চায়, তখন মূলতঃ ঘেরাটোপ এই শহর থেকে দূরে — আর প্রতিবার যেখানে চোখ রাঙানোর মতো লেখা থাকে “সামনে যানা মানা হ্যায়!” অর্থাৎ এই পথ এখানেই শেষ!
আশ্চর্য! সেই নির্ণায়ক অস্বস্তিকর অস্তিত্বের মতো আমি, এই আমি। ঠিক সেখানেই থাকি। স্বপ্নময় প্রতিটি ভোর, সকাল, সবুজ দুপুর আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো ক্ষুধার্ত সন্ধ্যায়, বাতাস যখন গতিপথ পালটে পাখিদের গান আর শিশুদের কলতানে প্রকৃতি যেখানে উপুড় করে ঢেলে দিয়ে যায় সহজ সরল যত প্রশান্তির সুখ। ফলত আমাদের এই নিজেদের একটু নিরিবিলিতে দেখা — অস্তগামী সূর্যের সাতরঙা আলো ভরা আকাশী আয়নায়।
তোরা যতই এই সভ্যতার বড়াই করে পাঞ্জা লড়িস না কেনো, এই বাঁধনছাড়া প্রাণসুধাকে তোরা কখনই ঈর্ষা না করে থাকতে পারবি না। দোস্ত, তোদের সেই হাড়সুদ্ধ জ্বলনের ইয়ার্কি নিয়েই তোরা আজ আয়! চল। ইচ্ছের জোরে সময়ের বলিরেখা গুলোকে সাদা পৃষ্ঠার মতো সমান করে ফেলি। আর চোখের পরিধিতে লাফিয়ে নামা দৃশ্যগুলোকে মুঠোবদ্ধ করতে মনের গোপন কোঠর থেকে তুলে আনি সেই কিশোর বয়স।