চলচ্চিত্রের চেয়ে বই কেন ভাল
থমাস রিচার্ড
(ইংরেজি থেকে অনুবাদঃ সদানন্দ সিংহ)
‘বই এই মহাবিশ্বে এক আত্মার জন্ম দেয়, মনকে দেয় ডানা, কল্পনাকে ওড়িয়ে নিয়ে যায় এবং জীবন এনে দেয় সবকিছুতে’ – বইকে এক কাব্যিক দৃষ্টি দিয়ে এভাবে দেখা যেতেই পারে। আর বাস্তবতা হল এই ডিজিটাল যুগে এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে সিনেমা দেখার চেয়ে বই পড়া অনেক ভাল।
সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সিনেমা ভালো লাগার এক নাম্বার কারণ হচ্ছে, বই পড়তে অনেক বেশি সময় নেয়। কিন্তু সিনেমাপ্রেমীরা যা জানেন না তা হল বইয়ের ভেতরে যে লুকানো রত্ন, অনুভূতি, জগৎ, কল্পনা এবং সংবেদনশীলতা আছে তা শুধুমাত্র একটি ভাল বই পড়ে অনুভব এবং অভিজ্ঞতালাভ করা যায়। গভীরভাবে গুরুত্ব দিয়ে বই পড়াটাকে কীভাবে এক ভালো বিকল্প হতে পারে সেজন্য আরো অনেকগুলি কারণ খুঁজে বের করা দরকারঃ-
১) কল্পনাকে উস্কে দিন
বই পাঠকের কল্পনাকে গতিময় করে দেয়। আপনি যখন একটি নতুন বই নিয়ে পড়তে বসেন তখন তার দৃশ্য এবং চরিত্রের ফাঁকগুলি আপনার নিজের মত করে দৃশ্য এবং চরিত্র তৈরি করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে নেন। পঠিত অভিজ্ঞতার আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায় পাঠকের সৃজনশীল কল্পনায় ইচ্ছেমত আকার দেওয়ার মাধ্যমে।
২) বিস্তৃত বিবরণ
যদিও সিনেমাগুলি চটকদার ভিজ্যুয়েল ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে লোকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, তবুও চরিত্র এবং গল্প সম্পর্কে বিশদ বিবরণের ক্ষেত্রে তারা কখনোই বইয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। বইয়ের লেখক একই সময়ে চরিত্র, শব্দ এবং অতীত নিয়ে গল্পে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। এইভাবে বই পড়ার মাধ্যমে পাঠকের কাছে এক নতুন পরিচিতি ধরা দেয়, ফলে প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে এক সংযোগ তৈরি হয়।
৩) পঠিত অভিজ্ঞতা
আপনার দেখা সেরা চলচ্চিত্র সম্পর্কে চিন্তা করুন, এটি কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল? সর্বাধিক 2 ঘন্টা। তারা গল্প মিশ্রিত করে, বিশদ অপসারণ করে, চরিত্রগুলিকে একত্রিত করে এবং একটি বরাদ্দ সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ করার জন্য অন্যান্য অকল্পনীয় কাজগুলি সম্পাদন করে। একটি বই পড়ার অভিজ্ঞতা অনেক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে, দিন না হলেও। বইয়ে সময়ের কোন সীমাবদ্ধতা নেই বা পৃষ্ঠারও সীমা নেই। লেখকরা তাদের গল্পটি একটি উপসংহারে আনতে যতক্ষণ চান ততক্ষণ সময় নিতে পারেন এবং পাঠকরা বই পড়া শেষ করতে তাদের নিজস্ব গতিতে যেতে পারেন।
৪) খরচ বিবেচনা করুন
একটি বই কেনার খরচ বিবেচনা করুন এবং এটি একটি সিনেমা টিকিটের মূল্যের সাথে তুলনা করুন; দামের দিক দিয়ে তারা প্রায় একই কিন্তু বিনোদনের মান বেশ ভিন্ন। ফিল্মটি কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু বইটির প্রভাব দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হবে। যেমন উপরে উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়াও, কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই আপনি যতবার খুশি বইটি পড়তে পারেন।
৫) মানসিক সুবিধা
এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে বই পড়া অনেক মানসিক সুবিধা প্রদান করে, সেইসাথে কিছু মনোবীক্ষণগত সুবিধাও। শব্দভান্ডার, মেমরি, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা — ইত্যাদিতেও এক উন্নতি দেখতে পাবেন যখন কেউ নিয়মিত বই পড়বেন।
৬) সিনেমার চেয়ে বই-ই উৎকৃষ্ট
বই আপনার মনের খাবারের মতো এবং এ ছাড়া একটি মন বড় হতে পারে না। যেমন জর্জ মার্টিন তাঁর গেম অফ থ্রোনস-এ বলেছেন “একটি মনের জন্য বই দরকার যেমন একটি তরবারির জন্যে একটি ওয়েটস্টোন প্রয়োজন, যদি তার ধার ধরে রাখতে হয়।” এই সুন্দর কথাগুলিই উত্তর বলে দেয় যে কেন বই সবসময় চলচ্চিত্রের চেয়ে ভাল হবে।