অরুণা
সঞ্জীব সেন
অক্ষর থেকে ধাতবপ্রিন্ট যাওয়ার আগে প্রুফ পড়ার সময়ই মনে হল আমার ছায়াটি আসলে সূর্যজাত নয়, মুক্তি চাইছে! কোথায় যেতে চাও আজ! ঘাটশিলা, সুবর্ণরেখার পারে, যেখানে গচ্ছিত আছে আমার বাল্যকাল,
যেখানে গচ্ছিত আছে কিছু শব্দহীন সংলাপ, নারীর উদ্ধত পণ ভালবাসি আমি, যেখানে আবেশে প্রেম হয়, আসলে সেটা ঠিক প্রেম নয়, তবুও সব নারী প্রথমে সবুজ পরে গমরঙ হয়ে ওঠে, উঠবেই,
মনে আছে তোর, সেদিনের কিশোর ছেলেটাকে একটুও জায়গা না দিয়ে এগিয়ে গেছিস একপাল কিশোরীর মধ্যমণি হয়ে, লেডিস সাইকেলে এ গলি ও গলি ঘুড়ে বাড়ি ফিরেছিলি, ভেবেছি তুইও একদিন হলুদ পাড়ের শাড়ি পরে মেলা থেকে কিনে আনা কমদামি আয়নায় মুখ রেখে কালো রঙের টিপ পরে বলবি মেলায় যাবে! কিশোর ছেলেটা সেদিন কি বলেছিল শুনবি আজ, শহরের মেয়ে, তোর এই উদ্ধত পণই আমি ভালবাসি, আমিই হব তোর ক্ষিপ্ত তনুর হত্যাকারী একদিন, দেখবি,
আমি একটু সময় চেয়েছিলাম আর তুই অরুণা থেকে অরুন্ধতী হয়ে উঠলি, অরুণা কে নিখোঁজ প্রমাণিত করে, সম্ভব! আমি সেই আত্মঘাতী অরুণাকেই খুঁজি আজও, সেসব বুঝিস কি শহরের মেয়ে,
শীতের রাতে শেষ ট্রেন একা ফিরে যায়, একদিন জিজ্ঞেস করেছি, সেও বলেছে কে একা নয়, আমরা সবাই একা,ভীষণ রকম একা, তোরও কি একা মনে হয় কখনও,
একদিন ঠিক উঠে পরব রাতের শেষ ট্রেনটায় ভোর ভোর পৌছে যাব, আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ভাঙবে তোর, দূর থেকে দেখবো ছায়াহীন আমি,
দু’দিনের জন্য এসেছিস বাপের বাড়িতে, এখানে এসে অরুণার সাজে নিজেকে সাজালেও তুই যে অরুণা হতে পারবি না আর, জানিস কি সেকথা!
আমার ছায়াটি সূর্যজাত নয় মুক্তি চাইছে আজ, ছুঁতে চাইছে অরুণার চিবুক বাহান্ন তীর্থের মত শরীরে দিতে চাইছে চুম্বনসাক্ষর,
দিলাম মুক্তি, ছায়াটি অরুণাকে বুঝতে না দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই, সেদিনের সেই উদ্ধত মেয়েটির মতই বলল,
জানোনি, পরস্ত্রীকে এইভাবে ধরতে আছে, আমি এখন স্বামীর ঘর করি, বোঝোনা!