মিত্তিরদের বাড়ি – ব্রতীন বসু

মিত্তিরদের বাড়ি        (অনুগল্প)

ব্রতীন বসু

আমাদের গলিতে লাল বাড়িটা মিত্তিরদের বাড়ি। ওখানে সব কিছু পালন করা হয় উল্টোভাবে।
ছোটো থেকে দেখছি।
জামাইষষ্ঠীতে বাড়ির বউকে শাশুড়ি পাত পেরে খাওয়ায়। ভাইফোঁটায় ভাই ভাইকে ভাইফোঁটা দিত, রাখি পরিয়ে দিত দেখতাম।সেই কবে থেকে।
বউমা আইটি-তে কাজ পেয়ে বরকে নিয়ে বিদেশ গেল। বর ডিপেন্ড্যান্ট ভিসাতে বাড়িতে বসে রান্না করে, ঘর সামলায়, শুনি, বলি সবাইকে।
আমাদের বউরা খোঁটা দেয়, বলে, দেখেছ কি উন্নত মানসিকতা মিত্তিরদের। তোমরা পারবে?
আমি শুনি।
না এতটা পারব না জানি তাই চুপ করে থাকি।
জানিস কি কাণ্ড?
অফিস যাবার পথে কৌশিকের সাথে দেখা বাস স্টপে!
কি?
অপরিচিতা মিত্র, মিত্তিরদের বউ, বিদেশে আছে যে আইটি-তে কাজ করে?
হ্যাঁ জানি তো। নামটা বেশ অদ্ভুত, অপরিচিতা।
হ্যা। আমার স্কুলের বন্ধু। আমরা ওকে আননোন বলে ডাকতাম। ও প্রেগন্যান্ট। তো ভ্রূণ টেস্ট করিয়েছিল। মেয়ে হবে।
ও। দারুণ খবর তো। ওদেশে তো লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। মিত্তিরদের বাড়ির প্রথম মেয়ে হবে। খুব ভাল।
কৌশিক মুখ টিপে হাসল।
হাসছিস কেন?
শাশুড়ি সেই শুনে আনারসের সন্দেশ বানিয়ে পাঠিয়েছে ওদের অফিসের কার হাত দিয়ে।
তুই জানলি কি করে?
আননোন আমাকে মেইলে বলল। আনারস এখন খেতে নেই, জানিস তো?
আমি শুনি।
না এতটা পারব না জানি তাই চুপ করে থাকি।
শুধু জানতে চাই, ওর বর কি বলেছে।

বলেছে, খেও না। খেতে নেই।
বল না মাকে যে খাওনি। বলতে নেই।

আমি এ কথা আর বাড়ি ফিরে বলিনি। যে ভাল হয়ে আছে তাকে বদলাতে নেই। বিশ্বাসের ভ্রূণ আনারস খেয়ে মরে না সহজে।