
রাখে হরি তো মারে কে (অনুগল্প)
গুলশন ঘোষ
তন্ময় প্রভুর সঙ্গে রুম শেয়ার করতে হবে অধ্যাপক অজিত গোস্বামীকে। এই কথা ভাবার পর থেকেই প্রভু বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। রাতে যে কী কাণ্ডটাই না বাঁধবে সে কথাই তাঁর মাথায় ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরপাক খাচ্ছে।পাহাড়ে এখন কনকনে ঠাণ্ডা। বৌদ্ধ সংস্কৃতি সংক্রান্ত গবেষণার কাজে এসেছেন অজিতবাবু। অনেক ঘুরেও মঠের কাছাকাছি কোন গেস্ট রুমের সন্ধান পেলেন না প্রভু। অগত্যা একটা রাত প্রভু তাঁর সঙ্গে একই ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।
খাওয়া দাওয়া মিটিয়ে যখন রাতে যে যাঁর শয্যা গ্রহণ করতে যাবেন তখন অতি সংকোচে তন্ময় প্রভু অধ্যাপককে জানালেন – আসলে স্যার, আমি প্রচণ্ড নাক ডাকি, তাই আপনার ঘুমের অসুবিধার কথা ভেবে আমি খুব দুশ্চিন্তা করছি।একটু মৃদু হেসে ঘাড় নেড়ে অজিতবাবু জানালেন –- না না একদম দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনি নিশ্চিতে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার কোন অসুবিধা হবে না।
প্রতি প্রহর কাটে। প্রভু বিছানায় শুয়ে একবার এপাশ আর ওপাশ করতে থাকেন। সাক্ষী থাকে পাহাড়ি রাত।
তখন ভোর হয়নি। বাইরে থেকে শীতল পাহাড়ের অস্পষ্ট চূড়াগুলো কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। নিদ্রাহীন চোখে প্রভু ধ্যানে বসলেন কাঠের বারান্দায়। সিংহের গর্জনের মতো ক্রমাগত আওয়াজ ভেসে আসছে ঘরের ভিতর থেকে।
সূর্য উঠতেই আওয়াজ থামল। কিছুক্ষণ পর অজিতবাবু বেরিয়ে এলেন বারান্দায়। প্রভুকে বললেন –- আপনি অযথা দুশ্চিন্তা করছিলেন। আমার কোন অসুবিধা হয়নি। কাল রাতে নিশ্চই ভালো ঘুমিয়েছেন!প্রভু বললেন — না আপনার নাসিকা গর্জন আমার সব দুশ্চিন্তা কেড়ে নিয়েছে। এ বার নিশ্চিতে একটু ঘুমিয়ে নিই। প্রভু তুমি অন্তর্যামী।