চিঠি – সুদীপ ঘোষাল

চিঠি – সুদীপ ঘোষাল

চিঠি       (অনুগল্প)

সুদীপ ঘোষাল

সুমন যে গ্রামে বাস করত, সেই গ্রামের মেয়ে জয়ন্তী। তখন মাঠে হাঁটতে গেলে জয়ন্তী, সুমনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকত চিঠি হাতে। তখন মোবাইল ছিল না। ছিল না হোয়্যাটস আ্যাপ, চ্যাটের দাপট।
সুমন বলত, তোমার চিঠির আনন্দে আমি সারাদিন আনন্দে থাকি।
জয়ন্তী বলত, উত্তর না দিলে কিন্তু খুব রাগ করব।
তারপর সুমনও চিঠি লিখত। সারদিন চেয়ে চেয়ে চমকে যেত বিকেল। সকালে মেঘের চালফুঁড়ে জয়ন্তীর চিঠি সুমনকে বাঁচিয়ে রাখত, তরতাজা রাখত। কোনো কারণে পত্রালাপ না হলেই মনখারাপের মেঘগুলো ভিড় করত মনে। তার মনে অকারণে জয়ন্তীর বিপদের কথা মনে হত। এইভাবে চলত ছাইখেলার ছলে পুতুলখেলা। তারপর একদিন জয়ন্তীর ঘরে আগুন লাগলো। কারা যেন চিঠিগুলো পুড়িয়ে মনের সাধ মিটিয়েছে।

জয়ন্তী বিয়ে করেছে। তার মেয়ে আছে। এখন আর উড়োচিঠিগুলো আনন্দ দেয় কি তার মনে? সুমন ভাবে, একবার দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবে। প্রায় কুড়িবছর পরে জয়ন্তীর মেয়ের বিয়ের চিঠি এল সুমনের হাতে। সুমন বিয়েতে গিয়ে পুরোনো চিঠিগুলো নিয়েছিলো ব্যাগে। যদি জয়ন্তী দেখতে চায়, সে দেখাবে পুরোনো চিঠির মালা।
জয়ন্তী সুমনকে ডেকে বলল, এই দেখ, আমার বর। ডাক্তার মানুষ। এই আমার মেয়ে। তোমার বউ কই?
সুমন বলে, বিয়ে করাটা হয়ে ওঠেনি, আর হবে বলেও মনে হয় না। জয়ন্তী কাজের ব্যস্ততায় বরকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো কাজে। জয়ন্তী বলল, তুমি বসো। আমাদের এখন অনেক কাজ। মেয়ের বিয়ে বলে কথা। সারাদিন আর জয়ন্তী সুমনের ঘরে আসেনি।
বিয়ের পরের দিন বাইরে এসে সুমন চিঠিগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিলো। এক নতুন জীবনের খোঁজে সুমনের শুরু হল পথচলা।