বলাই দে’র ছড়া

বলাই দে’র ছড়া

শেষ হয়

বলাই দে

ঘটনার ঘনঘটা
স্মৃতি পটে দগদগে,
চেতনায় হানা দেয়
ফোটে খুব টগবগে।

পথে পথে কেটে যায়
জীবন আর যৌবন,
বালি খুঁড়ে বালি শুধু
বায়ু ছোটে বনবন।

অপলক চোখ দুটি
বেদনার মুখ ছবি,
একরূপে প্রতিদিন
কিবা সোম কিবা রবি!

কেবা শোনে ফরিয়াদ
কেইবা দেয় আশ্বাস,
ভাবে শুধু দিনরাত
বিধাতার পরিহাস!

মেতে থাকে জনপদ
যার যেমন ধান্দায়,
কেন আর রাখে মনে
নিঃস্ব এই বান্দায়!

ফিরে ফিরে আসে ওই
জীবনের কালবেলা,
এইভাবে শেষ হয়
জীবনের যত খেলা!


শূন্যে বিলীন

বলাই দে

শিক্ষা বাড়ায় চেতনা
দেয় বোধের শক্তি,
তখনই দেশ যায় এগিয়ে
চেতনাই আনে মুক্তি।
যে জাতির নাই ইতিহাস
সে যে জড় এবং জীর্ণ,
চোখ থেকেও “কলুর বলদ”
সবই কন্টকাকীর্ণ।
গতি যখন হারায় নদী
তাকে বলে বন্ধ্যা,
শেওলা জমে পিচ্ছিল পথ
সব দিকেতেই মন্দা।
উৎসে যদি প্লাবন ডাকে
ছলছলিয়ে যায় বয়ে,
নিত্যনতুন কাব্যগীতি
সাহস জোগায় দুঃখ জয়ে।
পূবালী হাওয়া ছোটে
বৃষ্টি নামায় দিগন্তে,
কামার, কুমার, কৃষক বন্ধু
জাগে নতুন মন্ত্রে।
মনে জোয়ার, জোয়ার আনে
থামায় গতি সাধ্য কার,
আনন্দেতে মাতোয়ারা
শূন্যে বিলীন হাহাকার।

আমার সুরে

বলাই দে

যাদের আছে অনেক অনেক
তাকায় তবুও গোমড়ামুখে,
সমুদ্র ওই ঝড়ে উত্তাল
গডগডি নাই তাঁদের সুখে।

হিসাব কষে দিবারাত্রি
নাই যে কমা, নাই যে দাঁড়ি,
পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়
আয়োজন খুব যেন তারই!

তাঁরই আকাশ তাঁরই বাতাস
সবাই নাচুন তাঁর ইশারায়,
বেচাকেনার আড়তখানা
থামুক চলুক তাঁরই ধারায়।

ভাসুক ডুবুক নাই যে ক্ষতি
এগোয় কেবল ভাটার স্রোতেই,
উজিয়ে গেলে উজান পানে
নয় ভালো কাজ কোনোমতেই!

পাখি তুমি গাইতে পারো
আমার সুরে আমার কথায়,
এই পথেরই মাখো ধূলা
বিপথে নেয় ওই জনতায়।

থাকবে তুমি বেঁচে বর্তে
হবে যবে শৃঙ্খলিত,
দানাপানি মিলবে অঢেল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাবে কত?

অহংকার

বলাই দে

অজ্ঞতা আর অহমিকার
ব্যাধি দূরারোগ্য,
নিরাময়ের সম্ভাবনা দূর-
যতই করো যজ্ঞ!

নোটবন্দী আর অতিমারী
বেজায় রামধাক্কা,
নড়বড়ে আজ মেরুদণ্ড
ফেঁসে গেছে চাক্কা।

মৃত্যু মিছিল অন্নদাতার
চলছে দেশের রাস্তায়,
খাল কেটে কুমির ডেকে
পদে পদে পস্তায়!

সাধারণের চিল চিৎকার
ঢুকছে না ওই কর্ণে,
গিরগিটির বহুরূপের
রূপে রসে বর্ণে!

ঠাট বিহারির খামতি কিসে
মুখেই কেবল ফুটছে খই,
জ্বলে পুড়ে হচ্ছে খাক
পাকা ধানে দিচ্ছে মই!

রোগটা যে কী ধরণের
ধরতে না পায় বৈদ্য,
নিরাময়ের চেষ্টা কোথায়
শুনিয়ে চলেন পদ্য!