ছুতো (অনুগল্প)
ব্রতীন বসু
পাড়ার দীপকদা, বছর পঞ্চাশেক বয়স, খেলাধুলো পাগল। গ্রীষ্মের প্রথমে এক সাথে সাঁতার ক্লাবে ভর্তি হলাম।
দীপকদা ফর্ম তুলতে যাবার সময় আমাকে ফোন করল,
কিরে সাঁতার কাটবি তো এই সেশনে?
– হ্যাঁ, ইচ্ছে তো আছে।
– আমি ফর্ম তুলে দেব, তুই ফিল আপ করে টাকা জমা ফিয়ে দিস স্টেট ব্যাঙ্কে।
– দারুণ হবে।
রোজ সন্ধের স্লটে অফিসের পর দেখা হতে লাগল।
হপ্তা দুয়েক বাদ থেকেই দীপকদা অনিয়মিত আসা শুরু করল।
এক দিন আসে তো দুদিন দেখা নেই।
প্রথম প্রথম সাঁতার কেটে ফিরে এসে ফোন করতাম।
– কি দীপকদা আজ এলে না?
– বাড়িতে শালা শালিরা চলে এল। কাল যাব রে।
পরের দিনও দেখা নেই।
– আজ আবার কি হল?
– কাল এত খাওয়াদাওয়া হল, পেটটা ঠিক নেই রে। দুদিন একটু রেস্ট নিয়ে যাবো একদম।
একবার টানা এক সপ্তাহ না দেখে ফোন করলাম।
– আর বলিস্ না বাজার করতে গেছি গত রোববার রাস্তায় একটা পেরেক চটি ফুটো করে পায়ে ঢুকে গেল।
– টিটেনাস নিয়েছ?
– হ্যাঁ রে। এই উইকটা কাটিয়ে যাব।
সেবার দিন পনেরো না দেখে আবার হোয়াটসঅ্যাপ করলাম।
বলল, বাড়ির রাতদিনের কাজের লোকটা দেশে গেছে তাই সাঁতারের সময় রুটি সেঁকতে হয়। তোর বৌদি বেলে দিয়ে সিরিয়াল দেখতে চলে যায়।
হ্ঠাৎ করে একদিন দেখি দীপকদা জলে। আমার দশ মিনিট দেরী হয়েছে আসতে তার আগেই নেমে গিয়ে দুবার ফ্রিস্টাইল কেটে ডুব মারছে।
আমি বললাম, তুমি এত ছুতো দাও কেন। আসতে ইচ্ছে নেই বললেই তো পার। মেম্বারশিপটা কাউকে ট্র্যান্সফার করে দিলে টাকাটাও ফেরৎ পেয়ে যেতে।
দীপকদা মুখটা গোমড়া করে বলল, তাহলে তুই আর ফোন করতিস না। রোজই টিভি দেখতে দেখতে সময় কেটে যেত। তোকে যখন এগুলো বলি নিজের ভেতর লজ্জা হয়। সেই লজ্জা থেকে যে খারাপ লাগা আসে তাই দিয়ে মনের জোরে মাঝে মাঝে তো আসি। কিছুটা উপকার তো পাই।
– নিজের ভেতরের খারাপ লাগা গুলো যদ্দিন বেঁচে থাকবে ভাল থাকার সুযোগটাও তদ্দিনই। বুঝলি।
এই বলে ব্রেস্ট স্ট্রোকে দীপকদা দূরে চলে যেতে লাগল।