সহকারী গোয়েন্দা – সদানন্দ সিংহ

সহকারী গোয়েন্দা – সদানন্দ সিংহ

সহকারী গোয়েন্দা                   (ছোটোদের গল্প)

সদানন্দ সিংহ

গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জির গল্প পড়তে পড়তে নিজেকেই আমি দীপক চ্যাটার্জি বলে ভাবতাম। শুধু দীপক চ্যাটার্জির সহকারী রতনলাল কে হবে তা খুঁজে পাচ্ছিলুম না। আমি জগা, গোবরা, ফটকে আর সুদেব — সবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রতনলাল হতে রাজি কিনা। কিন্তু কেউই রাজি নয়। উলটে ওরা বলেছে যে ওরা নাকি দীপক চ্যাটার্জি হতে রাজি যদি আমি রতনলাল হই। মাথামুণ্ড সব কথা ! আমাকে ওরা সব ভেবেছে কী ! শেষে আমি চিংড়িমামাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার সহকারী রতনলাল হতে রাজি কিনা ? চিংড়িমামা আমাকে এক চাটি মেরে বচলল, যা এখান থেকে।
শেষপর্যন্ত আমি এক বিকেলে গোবর্ধনদা’র বাড়ি গেলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমার সহকারী রতনলাল হবেন কিনা।
গোবর্ধনদা প্রশ্ন করলেন, রতনলাল কে ?
আমি বললাম, বিখ্যাত গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জির সহকারীর নাম রতনলাল।
— অঃ। তা দীপক চ্যাটার্জির সহকারী হতে আমার একদম আপত্তি নেই।
— না না, দীপক চ্যাটার্জির সহকারী নয়, আমার সহকারী হিসেবে থাকতে রাজি কিনা বলছি।
— তোমার নাম কী করে দীপক চ্যাটার্জি হল ? আশ্চর্য তো !
বুঝিয়ে বললাম, না, বলছিলাম যে আমি দীপক চ্যাটার্জির মত গোয়েন্দা হতে চাই। তা হতে গেলে একজন সহকারীর দরকার। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম, আপনি আমার সহকারী হবেন কিনা ?
— অঃ। তাই বল। কিন্তু আমি তোমার সহকারী হলে কী হবে ?
— আমরা দু’জনে মিলে তদন্ত করে অনেক সমস্যার সমাধান করব
— কী সমস্যা ?
— যেমন কারুর কিছু চুরি গেল বা কিছু একটা জিনিস হারিয়ে গেল – এইসব।
— বাঃ ভালোই তো। মজার ব্যাপার। তা আমার একটা কলম গতকাল হারিয়ে গেছে, সেটা আগে খুঁজে বের করা দরকার।
প্রথম রহস্যের একটা গন্ধ পেলাম। খুশি হয়ে বললাম, কলমটা কোথায় রেখেছিলেন জায়গাটা দেখতে চাই।
গোবর্ধনদা আমাকে ঘরের ভেতর নিয়ে এক টেবিল দেখিয়ে বললেন, এটার ওপরে রেখেছিলাম। আমি টেবিলটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম — কাঠের টেবিল। টেবিলের ওপরে একটা খাতা আছে, এছাড়া আর কিছুই নেই। জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আপনি কি কিছু লিখেছিলেন কলম দিয়ে ?
— হ্যাঁ হ্যাঁ একটা কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম, শেষ করতে পারিনি। বলে গোবর্ধনদা খাতা খুলে দেখালেন। দেখলাম, খাতায় লেখা আছে —
গ আকার গা,

     ধ আকার ধা ..
দেখে বললাম, গ আকার আর ধ আকার তো হবে গাধা।
— জানি জানি। কলমের কালি শেষ হয়ে গেল বলে আর লিখতে পারিনি। শেষে আমি কলমটা খাতার ওপরেই রেখে দিয়েছিলাম।
— তখন সময় ক’টা।
— দুপুর। ক’টা বাজে বলতে পারব না।
— তারপর থেকে ঘরে কেউ এসেছিল।
— বাড়িতে আমরা দু জন শুধু, আমি আর দাদা। দাদা আমার ঘরে এসেছিল কিনা আমি দেখিনি। তবে আসতেও পারে, আমি তো সবসময় আমার ঘরে ছিলাম না।

সব কিছু তদন্ত করে দেখার পর আমার আর কোনো সন্দেহ রইল না, কলমটা গোবর্ধনের দাদা হর্ষবর্ধনদাই নিয়ে গেছেন। বললাম, কলমটা হর্ষবর্ধনদাই নিয়ে গেছেন।
— তাই নাকি। দাঁড়াও আমি দাদাকে জিজ্ঞেস করছি। বলেই গোবর্ধনদা অন্য ঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে জানালেন, তোমার কথাই একদম ঠিক। দাদা বলেছেন আমার কবিতার নিচে গাধা কথাটা লিখতে গিয়ে দেখেছিলেন যে কলমে কালি নেই, তাই দাদা রেগে কলমটা ফেলে দিয়েছেন। বেশ বেশ, তোমার তদন্ত একদম সঠিক। ঠিক আছে, আমি তোমার সহকারী রতনলাল হতে রাজি।
গোবর্ধনদার কথা শুনে আমিও খুব খুশি হলাম, যাক এবার আমি একজন সহকারী পেয়ে গেছি।