
মহান গোবর্ধন (ছোটোদের গল্প)
সদানন্দ সিংহ
হর্ষবর্ধনের শরীরটা দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছে। নিজের শরীরটাকে ইদানীং ভারী ভারী মনে হচ্ছে। তাই তিনি সকালবেলা ছাদের পর একটু শরীরচর্চা শুরু করেছেন কয়েকদিন হয়েছে। কিন্তু শরীরচর্চা তিনি একদমই করতেই পারছেন না। ডনবৈঠক করতে গেলে তিনি বসতে পারছেন বটে, কিন্তু উঠে দাঁড়াতে গিয়ে তাঁর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। উপায় না দেখে তিনি গোবর্ধনকে ডাকলেন, গোবরা এদিকে আয়।
দাদার ডাক শুনে গোবর্ধন দৌড়ে চলে আসে। বলে, বল কী জন্যে ডাকলে ?
— বলছি কি, আমার ডনবৈঠক করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আজ।
গোবর্ধন দাদাকে দেখতে দেখতে কীসব চিন্তা করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গেই সে সমাধানও খুঁজে পেয়ে যায়, বলে, ও এই ব্যাপার! ঘরে চলো, দেখিয়ে দিচ্ছি।
ছোটভাইয়ের জবাব শুনে একটু অবাক হর্ষবর্ধন। সন্দেহ সহকারে বলেন, ঠিক আছে, চল।
ঘরে এসে গোবর্ধন দাদাকে বলে, তুমি জানালার কাছে দাঁড়াও। তারপর জানালার লোহার গ্রিল ধরে ডনবৈঠক শুরু করো। একদম সহজ হয়ে যাবে।
হর্ষবর্ধন একটু তাজ্জব হয়ে বলেন, এভাবে করলে কি আর ডনবৈঠক হয় ? ডনবৈঠক করতে হয় কোনো কিছু না ধরেই, বুঝলি হাঁদা?
দাদার জবাব শুনে একটু মনক্ষুণ্ণ হয় গোবর্ধনের, বলে, কোনো কিছু করতে গেলে সবাইকে কিছু না কিছু ছাড়তে হয়। যেমন, আমি তোমার গদিতে বসতে চাইছি, কিন্তু বসতে কি পারছি ? তাই আমার ইচ্ছেটা আমি ছেড়ে দিয়েছি।
হর্ষবর্ধন এবার আরো তাজ্জব হয়ে যান, বলেন, হায় হায়, আমাকে হঠিয়ে তুই আমার সব কিছু দখল করতে চাস?
— আমি কি তাই বলেছি নাকি ? আমি শুধু ত্যাগের কথা বলেছি। আমাদের ঋষি-মুনিরা কতো কিছুই ত্যাগ করেছেন, আমি তো সামান্য কিছু ত্যাগ করেছি মাত্র।
হর্ষবর্ধন উত্তরে বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমিও তাহলে একজন মহান ব্যক্তি। তোমাকে প্রণাম জানানো দরকার। বলেই হর্ষবর্ধন সাষ্টাঙ্গে গোবর্ধনকে প্রণাম করার জন্যে মেঝেতে শুয়ে পড়েন।
দাদার এই কাণ্ডে গোবর্ধন কিন্তু খুব খুশি হয়, গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে। ভাবে সে সত্যিই মহান।