গোবর্ধনের হাইকিং প্ল্যান – সদানন্দ সিংহ

গোবর্ধনের হাইকিং প্ল্যান – সদানন্দ সিংহ

গোবর্ধনের হাইকিং প্ল্যান       (ছোটোদের গল্প)

সদানন্দ সিংহ

সাতসকালে আমার বাড়িতে উপস্থিত গোবর্ধনদা। আমি আর অবাক হই না। গোবর্ধনদার মাথায় নানা কথা খেলা করে। তাই বুঝে গেছি, রাতে-বিরেতে দিনে-দুপুরে গোবর্ধনদা যে-কোনো সময় এসে উপস্থিত হতে পারেন।
এসেই গোবর্ধনদা বললেন, তোমাদের বাড়িতে একটা মই দেখেছিলাম। ওটা আছে তো ?
বললাম, আছে তো। কেন ?
গোবর্ধনদা জানালেন, আমাকে কিছুদিনের জন্য দাও তো ওটা। আমার খুব দরকার।
তারপর আবার জানালেন, জম্পুই পাহাড়ে গিয়ে মজা করে কমলা খাব। আসলে দাদা আর আমি জম্পুই পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছি। তাই পাহাড়ে ওঠার অভ্যেস করব। দাদাই বলেছে পাহাড়ে ওঠার অভ্যেস করতে। শেষে আমিই বুদ্ধিটা বের করলুম। মই বেয়ে ওপরে উঠব আর নামব। তাতে পাহাড়ে ওঠার অভ্যেস হয়ে যাবে আর ব্যায়ামও হয়ে যাবে। দাও, মইটা দাও আমাকে।
বললাম, ঠিক আছে। মাকে গিয়ে বলছি।
মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, মা, আমাদের মইটা গোবর্ধনদা কিছুদিনের জন্য চাইছেন। দিয়ে দেব ?
— বাড়িতে কাজ পড়েছে বুঝি ? দিয়ে দাও।
আমি মইটা বাড়ির পেছন দিক থেকে টেনে বের করলাম। গোবর্ধনদা এসে হাত লাগালেন।
মইটা নিয়ে গোবর্ধনদা আমাদের বাড়ির এক শুকনো গাছে লাগালেন। মই বেয়ে দু পা উঠলেন, তারপর নেমে এলেন। বললেন, ধূস, এভাবে মরা গাছে উঠার কোন আকর্ষণ পাচ্ছি না। বুঝলি হাবু, গাছের ওপরে যদি কোন লোভনীয় জিনিস থাকতো তাহলে টপাটপ উঠে যাওয়ার এক ইচ্ছে থাকতো। মরা গাছে কিছুই নেই।
গোবর্ধনদা কিছুক্ষণ কী জানি চিন্তা করলেন, তারপর বললেন, চলো আমার সঙ্গে। কোথাও গিয়ে সুন্দর এক জ্যান্ত গাছে মইটা লাগাই, তারপর দেখি কত দ্রুত আমি ওঠানামা করতে পারি।
ভাবলাম গোবর্ধনদার সাথে আমিও একটু শরীরচর্চা করি, তাই দুজনে মইটা ধরে এগোতে থাকলাম। গোবর্ধনদা বললেন, হারু ঠাকুরের বাগানে যাই। ওখানে অনেক গাছ।
আমরা হারু ঠাকুরের বাগানে পৌঁছলাম। গোবর্ধনদা এক আমগাছে মইটা লাগালেন। আমাকে বললেন, দেখো, আমি কীভাবে দ্রুত মই বেয়ে উঠছি। বলেই গোবর্ধনদা মই বেয়ে তিন পা উঠতেই পা পিছলে নিচে এসে পড়লেন। আমার দিকে চেয়ে একটু হেসে আবার বললেন, পা-টা সোজা করে ফেলে উঠতে হবে। বলে তিনি একটু একটু করে উঠতে লাগলেন এবং ওপরে উঠে আমগাছের পাতার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
নিচে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল, গোবর্ধনদা আর নামছেন না। আমি ডাকলাম, গোবর্ধনদা, ঠিক আছেন তো ?
ওপর থেকে জবাব এল, একদম ঠিক আছি। ওপরে অনেক পাকা আম। ওপরে এসো, দেখে যাও।
পাকা আমের কথা শুনে আমিও তরতর করে ওপরে উঠে গেলাম। দেখলাম, কাঁচা আমের ফাঁকে ফাঁকে অনেক পাকা আম। এর মধ্যেই একটা আম পেড়ে গোবর্ধনদা খেতে শুরু করেছেন। আমিও লোভ সামলাতে পারলাম না। আমিও একটা পেড়ে খেতে শুরু করলাম।
সময় বয়ে যেতে লাগল। নামার কোনো নামগন্ধ নেই আমাদের। একটার পর আরেকটা আম খেয়ে যেতে লাগলাম দুজনে। খেয়ে আমের খোসা আর আঁটি নিচে ফেলতে লাগলাম। খেতে খেতে একসময় আমার পেট প্রায় ভর্তি হয়ে এল।
এমন সময় নিচ থেকে হারু ঠাকুরের গলা শুনতে পেলাম, কোন্ বজ্জাত আমার আম চুরি করে খাচ্ছে ? নেমে আয় বলছি, নেমে আয়।
শুনে আমাদের পিলে চমকে উঠল। আমাদের হাত থেকে আম খসে নিচে পড়ল।
নিচ থেকে আবার হারু ঠাকুরের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম, নেমে আয় হারামজাদারা।
গোবর্ধনদা আস্তে করে বললেন, নামতে তো হবেই। আচ্ছা আমি আগে নামছি। বলেই গোবর্ধনদা পাতার ফাঁক থেকে বেরিয়ে মই বেয়ে নিচে নামতে লাগলেন। আর নিচে নেমেই গোবর্ধনদা ছুটে পালাতে লাগলেন। ‘দাঁড়া হারামজাদা’ বলতে বলতে হারু ঠাকুরও গোবর্ধনদার পেছনে ছুটতে লাগলেন। সুযোগ বুঝে আমি আমগাছের ওপর থেকে লাফ মেরে নিচে এসে মই নিয়ে বাড়ির দিকে ছুট লাগালাম।