তরঙ্গ
রহিত ঘোষাল
১
ব্রহ্মডাঙার উপর দিয়ে আমরা চলেছি, অসম্ভব বেশি পরিমাণে লোক নিয়ে একটি ট্রেন খুব ধীর গতিতে চলেছে,
সে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এরকম়ই কথা আছে, পথে ছোট ছোট স্টেশন, অনামি সব গ্রাম-মাঠখেত, এটুকুই স্মৃতিতে ভেসে ওঠে, এক বিশাল ধর্মীয় জমায়েত, পিঁপড়ের মতো তরুণেরা সেখানে ভিড় করেছে, তাদের সবার চোখ মাথার পেছনে।
২
দূরত্ব বুঝি না, অসাড়তা তাও কি বুঝি, ফিরতে ফিরতে আকাশ দেখি, স্বর্গ দেখতে পাই না, সরোবরে ঝাঁপ দিয়ে দেখেছি স্বীকার করি, নতুন কিচ্ছু পাইনি, ধুয়ে মুছে গেছে প্রেম রাতের কাছে, গাছের তলায় আমার ঘুমপাড়ানি চোখ ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে তলিয়ে গেছে পালকের ছোঁয়াতে, কলঙ্ক টলটল হৃদয় আজ হয়েছে অবৈধ।
৩
দেশছাড়া, ঘরছাড়া, রং ছাড়া,
আর কত দিন বাদলা থাকবে মন, মোমবাতির এই অল্প ভাঙা আলো মিলিয়ে দেয় কলোনির প্রেম, টিউশনের প্রেম, আর আড়াল করে খাওয়া ঠোঁট, আমাদের বাপমায়েরা জন্ম নেয় বারবার এখানেই, আমরা শুধু মরি বৈশাখে বা বর্ষাকালে, ইচ্ছেমতো মিলিত হয় দেয়ালঘড়ির টিকটিক, সকালে ছুট লাগাই, সমুদ্রে ডাক নাম দিয়ে আসি নিঃশব্দে।
৪
রৌদ্র পুকুর, বাতাস মাঠ এসো আমরা বেড়িয়ে আসি,
দূরের অনেক দূরের স্বপ্ন দেখি, এসো আমরা একশো বছর আগেকার কথা বলি, আমাদের বাল্যসখী আজ বিধবা হয়েছে বাঘাযতীন হাসপাতালে, তার হাত থেকে লন্ঠন নিয়ে কলুষ করি মাটির শরীর, ভস্ম, পোড়া কুসুম দিতে গিয়ে তাকে অলীক পাখির রাঙা সন্ধ্যাতারা দিয়ে ফেলি, রুদ্ধশ্বাস সম্বল এই নীচু এলাকায় কাদাজলে দেখি তরঙ্গ খেলছে।