
রাজকন্যা (অনুগল্প)
প্রসেনজিৎ রায়
ছেঁড়া পোশাক, অপরিচ্ছন্ন দাঁত, উসকো চুল, ৩- ৪ দিন স্নানও হয়নি মিতার। বৃষ্টিভেজা সকালে বস্তির ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে সমবয়সী বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে ছাতা মাথায় নিয়ে, কেউ বা বাবা-মায়ের কোলে। বছর সাতেকের মিতারও খুব ইচ্ছে এমন করে স্কুলে যাবে, কিন্তু কাকে বলবে সে ?
বাবা ইটভাট্টায় কাজ করে, অনেক দূরে থাকে জানে কিন্তু কোথায় জানে না। বছরে একবার পূজোতে বাড়ি আসে। সে তার বয়স্কা ঠাকুমার কাছে থাকে, খুব অসুস্থ…. মা কি কোনোদিন বুঝেনি….? বস্তির মানুষের মুখে শুনেছে সে জন্মের সময়ই নাকি তার মাকে খেয়ে ফেলেছে, কিন্তু এ কথার কি অর্থ আজও বুঝে উঠতে পারেনি সে।
রাস্তায় বিকেলে বেরোলে দেখতো তার বয়সের ছেলেমেয়েরা মায়ের হাত ধরে চকলেট, রকমারি আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে, অবাক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকেছে। ভেবেছে তার মা থাকলেও এমন আদর পেত সে…..। কোনোদিন কেউ রংকালো দুনিয়ার চশমা পড়ে বাচ্চা মেয়েটির অসহায়ত্ব দেখতে পায়নি।
একদিন ঘরে খেলছে এমন সময় কেউ এসে কোলে নিয়ে গালে একটা চুম্বন এঁকে দিল রিতার। এবার পূজোর আগেই বাড়ি চলে এসেছে রিতার বাবা বিজয়। “আর তোকে ছেড়ে কোথাও যাব না মা”…. বলেই বুকে আঁকড়ে ধরে রিতাকে। বিজয় তার মাকে জানায় এখানেই একটি ভাট্টা খুলবে মালিক, সে এখানেই কাজ করবে…. বলেই একটি কাপড়ের ব্যাগ বের করে। রিতা নতুন পোশাক ভেবে ব্যাগ খুলেই অবাক হয়ে বলে — এমন পোশাক পড়ে তো সবাই স্কুলে যায় দেখেছি।
— হ্যাঁ তো তোকেও এখন থেকে স্কুলে যেতে হবে মা, অনেক বড় হতে হবে তোকে।
পোশাকটা বুকে ধরে এক তৃপ্তির হাসি হেসেছিল সেদিন কুঁড়েঘরের রাজকন্যা…..