তিন মাতালের গল্প
সুজিত বসু
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
সকাল গেল, দুপুর গেল, বিকেলও প্রায় গড়ায় গড়ায়,
শ্মশান মশান ধুইয়ে লালে সূয্যি গিয়ে বসলো পাটে
বালির ধূ ধূ পেরিয়ে মরু তেপান্তরে শূন্যে নীরব
সন্ধ্যে প্রসাধনের শেষে শাড়ির আঁচল পরিপাটি
মাথায় তোলে ঘোমটা করে, লজ্জাবতী আস্তে হাঁটে
তিনটে মাতাল শূন্যি চোখে অথই নিঝুম ফেরীর ঘাটে
গুটিসুটি চুপটি মেরে তিনটে খালি বোতল হাতে
জাহাজ আসতে এখনও প্রায়
কয়েক দুপুর বিকেল সন্ধ্যে বৃষ্টি বাদল ঝড়ঝাপটা
এই ফাঁকে কি একটু আরো! বোতল ভাঙে রক্তপাতে
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
আতালপাতাল পেরিয়ে এসে তিনটে মাতাল এখন কি সব
আবোল তাবোল বকছে, প্রথম
মাতাল মারে একটি খাবল দ্বিতীয় জনের ঝুনুর থেকে
দ্বিতীয় তাকায় তীক্ষ্ণ চোখে সাঁতরানো জলপরীর দিকে
তিন নম্বর নির্লিপ্ত এসব দেখে
ছক নকশা কাগজপত্র হাতড়ে হাতডে অন্ধ ঘাঁটে
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
রাত এদিকে ফুরিয়ে এলো, ঝিকমিকোনো তারার মালা
শুকিয়ে ফুলের পাপড়ি হয়ে ঝরণা ঝরায় পাতলা ফিকে
মিহিন আলোর ওড়না পরা নদীর জলে রক্তজবা
একটু একটু ফুটতে থাকে, এমন সময় বজ্রনাদে
কলের বাঁশি বিকট বাজে, অন্যপারে দ্বীপান্তরে
জাহাজ ছাড়ার শব্দে প্রথম মাতাল ওঠে উসখুসিয়ে
বনের থেকে ডালিম টিয়ে
শিসের শব্দে উৎকর্ণ, পেছন ফেরে প্রথম মাতাল
বালির সাদা বুকে সোনার টুকরো ওঠে ঝিলমিলিয়ে
এক নিশ্বাস বেরিয়ে এসে জমলো পাথর
সময় যে নেই ফুরিয়ে গেল কোথায় কবে কেমন করে
পাতাল শুধু সপ্তপাতাল
দ্বিতীয় মাতাল তারই মতো গভীর কোনো দু:খে কাতর
রঙিন ডানা বিছিয়ে দিয়ে ঘুমকাতুরে দুচোখ মেলে
জলপরী কি আলতো করে তাকিয়ে আছে তারই দিকে !
সময় যে নেই, ফুরিয়ে যাবেই, চোখের মধ্যে দ্যুতির জ্বালা
ছিঁচকে ভাঙে পুঁতির মালা
তৃতীয় মাতাল ছক গুটিয়ে মুখর হলো খুশির রবে
ফেরীর জাহাজ এতক্ষণে সত্যি সত্যি আসছে তবে।