ফুলশয্যার রথ (অনুগল্প)
সুদীপ ঘোষাল
স্বামী চলে যাওয়ার পরে একদম একা হয়ে পড়েছিলেন কবিতা। মনে পড়তো ফুলশয্যা, আদর। কি করে যে একটা একটা করে রাত, দিন পার হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। তবু বুঝতে হয়, মেনে নিতে হয়। একটা ঘুঘু পাখি তার স্বামী মরে যাওয়ার পর থেকেই এবাড়িতে আসে। আমগাছের ডালে বসে আপন মনে কত কথা বলে। ঘুঘুর ঘু, ঘুঘুর ঘু। সবিতাদেবীর সঙ্গে পাখিটার খুব ভাব। তার মনে হয়, স্বামী ঘুঘুর রূপ ধরে আসেন। তিনি আম গাছের তলায় খুদকুঁড়ো ছিটিয়ে দেন। ঘুঘু পাখিটা খায় আর গলা তুলে কবিতাকে দেখে । কিছু বলতে চায়। তিনি বোঝেন। আর আপনমনেই পাখিটার সঙ্গে বকবক করেন। পুরোনো দিনের কথা বলেন। ছেলের বৌ বলে, বুড়িটা পাগলী হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা অতশত বোঝে না। হাসাহাসি করে। শুধু তার ছেলে বোঝে মায়ের অন্তরের কথা, ব্যথা। ঘুঘু পাখিটা সারাদিন ডেকে চলে। বোধহয় বলতে চাইছে, এবার আয়, এবার আয়। কবিতার বয়স যে হল আশি।
একদিন সবাই দেখলো, বুড়ি ফুলশয্যার খাটে চড়ে শ্মশানে গেলো, বোধহয় স্বামীর কাছে। ঘুঘু পাখিটা ডেকে চলেছে তখনও, ঘুঘুর ঘু…