বুক পকেট (অনুগল্প)
সমিত রায় চৌধুরী
মহেশের দেহ ও মন সকাল থেকেই নিস্তেজ। কাল সন্ধ্যায় তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। পুরো মাসটা পাঁচশ টাকার তাজা নোটটাকে অনেক কষ্ট করে বাঁচিয়ে রেখেছিল। প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় পকেটে পুরে রাখতো আর রাত্রিরে বিছানার বালিশের নিচে। এইটা তার সারা বছরের অভ্যাস। মাসের প্রথম মাইনে পাওয়ার পর বাজেট অনুসারে সব খরচাপাতি ও বিলি বাট্টা করে এই পাঁচশ টাকা তার হাত খরচ হিসেবে নিজের কাছে রাখত। ভালো মাইনে পেলেও এইটা তার অভ্যাস। কৃপণতা। টাকা বাঁচানোর জন্য কষ্ট করে সাইকেল চেপে অফিসে যাওয়া, অফিস ক্যানটিনে কিছু না খাওয়া, কোন নিমন্ত্রণে না যাওয়া। এত সব কষ্ট সহ্য করে মাসের শেষ তারিখ অব্দি এই টাকা বাঁচাতে পারলে সে মনে করতো তার মাসটা সার্থক। মাসের শেষে তা চলে যেত আলাদা সেভিংস-এ।
কিন্তু কাল হল ব্যতিক্রম। মহেশের বাল্যকালের বন্ধু সমুদ্র ও নীল শহরের প্রথম বার-কাম-রেস্টুরেন্ট-এ এক পার্টি দেয়। মহেশ ছিল নিমন্ত্রিত। মহেশের খুব ইচ্ছা ছিল এই খানে যাওয়ার কিন্তু টাকার মায়ায় যাওয়া হচ্ছিল না। অবশেষে এই বিনে পয়সার খাওয়ার সুযোগটা এসছিলো গতকাল সন্ধ্যায়।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন বারে বসে পেটে দু-পেগ চালান হয়। তখন সামনে চলছিল এক গায়কের গিটার বাজিয়ে রোমান্টিক গান। সেও আবার তাদের কলেজ দিনের গান। আড্ডার টেবিলে কত পুরানো কথা। সেই আবেগে ভেসে মহেশ বুক পকেট থেকে পাঁচশ টাকার কড়কড়ে নোটটা বের করে গায়কের বুক পকেটে পুরস্কার হিসেবে গুঁজে দিলো।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই হুঁশ ফিরল। শুধু বুক পকেট নয় তার বুকটাও কেমন খালি খালি লাগছিল। সে ভাবে, টাকা হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের ফুয়েল, আর তাই মানুষের বাঁ দিকে হৃৎপিণ্ড এবং বাঁ দিকেই বুক পকেট।