খোঁজ
মলয় মজুমদার
নধর দুপুরের রোদ, ছায়াহীন মেঘের আশেপাশে তোমাকেই খুঁজে ফেরে
অনেক পুরুষ।
ভাঙা, শব্দহীন আকাশের পাশে একা তুমি, তোমাকেই খুঁজি আমি ভিড়রাতে
তোমার কালো ভরাট শরীর, নদীও তোমার কাছে হেরে গেছে কয়েক যুগ,
তারপরই তো আমি এলাম, হেরে যাবার জন্যে প্রতিবারের মতো।
তুমি দেখালে তোমার বাড়ির যাতায়াতের পথ, তোমার স্কুল, বালিকার ফ্রক
দুটো গলি পার করলেই পাবো তোমার ঠিকানা।
আজ আঠাশ বছর আট মাস তেরদিন, হারিয়ে ফেলা মোবাইলটা আর
কথা শোনে না। কথা বলে না কাগজ পেন্সিল, কথা বলে না নেশার শহর
শুধু মাতাল হয়ে ফিরে আসি আমি, আমার ঘরের চারিপাশে, সেখানেও
তোমাকে খুঁজি অন্ধের যন্ত্রণা নিয়ে।
সে এক শতাব্দীর আগের কথা। অথবা সেদিনের কথা, অথবা কোন কথায়
হয়তো হয়নি। শুধু রাস্তার আলো আল-পথে হারিয়ে গেছে একদিন
তাই তো নধর দুপুর রোদে আঁকি শীতের কবিতা। প্রথম শব্দগুলো অনিশ্চিত
দ্বিতীয়তে ছন্দ দিয়েছিলাম, তারপর তৃতীয় এবং যখন একশো অঙ্কে গিয়ে
তোমাকে লিখবো ভেবে দোয়াত উল্টে দিলাম, বুনো রোদ ছড়িয়ে পড়লো,
তুমি আর আমি হাঁটতে হাঁটতে প্রথমে ট্রেন, তারপর বাস এবং সব শেষে
রিক্সায়।
তোমার ঘ্রাণ আজো যে আমারকে রোদ্দুর ফিরিয়ে দেয়।
বধিরতা
মলয় মজুমদার
যখন লুটোপুটি খায় উপেক্ষার ঢেউ মেঘ ও মেঘের দেশে
যখন বিষণ্ণ শহরের বুকে নেমে আসে সন্ধ্যার স্খলন,
যখন কুয়াশার শরীরে বাঁধে জমাট অশ্রুপাত, ভৈরবীর
সুর কথা বলে অসুখের আড়ালে।
নিয়ন্ত্রণহীন ফেনারাশি গভীরতা নিয়ে আসে নেশার শহরে
আমি ডুবতে থাকি, অন্ধকারে, নেশাতে,
কালো বিষণ্ণ আকাশে
চোখতুলে কেউ কথা বলে না, শুধু হাহাকার জন্ম নিয়ে আসে
মৃতের গর্ভে।
হত্যার কোন রঙ নেই, শুধু ঘাতকের হাতে থাকে
ধারালো কাব্য
কখনো উজানের ঢেউয়ে হেসে ওঠে নিছক বালিকা,
অথবা কবি
লালে হয় লাল পিষ্টদেশ, শুধু অন্ধকারে কিছু পাথর,
বৃষ্টি নিয়ে আসে। ঘাতকের রঙ তখন গৈরিক।
লালারসে নিষিক্ত হয় কবি ও কবিতা, সাথে উজানের গান
নিথর পাথরের সাথে উপুড় করা দুপুর, পুরোপুরি একটা
মেঘ, একটা গান, একবার লুটোপুটি, একবার বালিকার রঙ
একবার আড়ালে লুকায় অশ্রুপাত, নিছকই জীর্ণ দুপুরে।
যখন লুটোপুটি খায় চেনা-মুখ অথচ অচেনা মানুষ, কি আসে
যায় রোদের ছায়াতে?
শুধু বশ্যতা নিয়ে আসে স্খলিত রাতের আঁধারে, আশেপাশে
উড়ো-চিঠি, উড়ো-ইমেলের সাথে একাকার হয়
গতি-পথ
নদী
সাগর
পাহাড়
জলাশয়
আমার প্রেম
আমার প্রেমিকা
আমার দিকনির্ণয়
অথবা যখন লুটোপুটি খায় আকাশ, নগ্নতা ও বধিরের গানে।