সুখোমণির ভুলে যাওয়া এবং
সমর চক্রবর্তী
ভুলে যায় বলে সুখোমণির বেজায় ডর। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া সেই ভুলে যাওয়ার আশঙ্কায় তার কালো চোখ দুটো মেলে শুধু চেয়ে থাকে। সমূহ ঘটনাপুঞ্জে আকীর্ণ তার ভাবখানা দেখে মনে হবে, সর্বপ্রাণবাদী এই অনন্ত প্রকৃতি বুঝি তাকে মনে করিয়ে দেবে সব। আর এ সময়ে বিস্ফারিত দৃষ্টির দিকে সবাই তাকিয়ে আছে টের পেলে, তার চঞ্চল চোখদুটো আরো নম্র হয়ে ওঠে। সাথে সাথে তার উচ্ছ্বল হয়ে হেসে ওঠা দেখে মনে হবে যে, এই ভুলে যাওয়াটা তার একটি যাদুটোনা মাত্র।
সে বারে বারেই বলে, আচ্ছা জেঠু, হাসি ভুলে যাই কেনে?
হ্যাঁ, এভাবেই ‘সুখো-সোরেন’-এর কথার জন্ম হয়। সব অনেক যারা কুটুম হয়ে, সব ভুল আর
ইয়াদ-কে বুঝে নিতে এক সূচক হয়ে দাঁড়ায়। সে যেটাকে বলে, ‘লড়হাই’!
সেন্দরা মানে শিকার। যেখানে সমস্ত চিনহেলিয়ে – বর্ষার – ঢল খেয়ে গজিয়ে ওঠা ঘন সবুজ চা-পাতার শরীরে ঘৃণ্য লিকলিকে জোঁকগুলিকে সোজা অস্বীকার করে (রক্ত) শোষকের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া তীব্র ডিটারজেন্ট!
অচ্ছে রাষ্ট্রীয় শিক্ষাবর্ষে ভুল করেও কি এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবে একাডেমি? তারা কি জানতে চাইবে এই ধর্মনগরে চা-শ্রমিকের রোজ মজুরি মাত্র ১৭৬ টাকা কেনো? যে মজুরির দরে সুখো সাঁওতাল কলেজে যাওয়ার আগে ঘাম ঝরিয়ে আসে। সুখো আর যাই ভুলোক, এটা কিন্তু ভুলে না যে চা বাগানের ক্ষুধার্ত যাপনে ঝাল পাতিছানার মতো তার স্বাদ লেগে থাকে তার ঠোঁটে। যেনো ভুল নামক না পাওয়াকে মুঠোবন্দি করে নেবে তার ঠোঁটচাপা ক্রোধে। যেভাবে একদিন ভুলকে ধরে ফেলা যায়। করে নেওয়া যায় সঠিক একটি শরীর।