
উৎস (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
এখন সকালবেলা। অনেকদিন পর অম্লান বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় নেমে এক চেয়ারে বসে আছে। দশ দিন ধরে একটানা জ্বর-কাশির পর গতকাল থেকে সে ভালোই। আজ তাই দুর্বল শরীরে বারান্দায় চেয়ারে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। বাড়িতে এখন কেউ নেই। কিছুক্ষণ আগে অম্লানের স্ত্রী সরলা শাক-সবজি-মাছ কেনার জন্য বাজারের দিকে গেছে।
ঠিক এইসময় অম্লান টের পায় বারান্দার লোহার গ্রিলের দরজা ক্যাঁচ করে খুলে কে যেন বারান্দায় ঢুকে পড়েছে। সে দেখে, লাল শালু পরা জটাধারী একজন লোক বারান্দায় ঢুকে তার পাশে রাখা এক চেয়ার টেনে বসে পড়েছে। বসেই লোকটা তার ঝোলা থেকে একটা সাপ বের করে অম্লানের সামনে ধরে বলে, তোর সামনে মা মনসা। এখন মা মনসাকে পুজো কর, তোর সব রোগ-শোক ভালো হয়ে যাবে।
অম্লান লোকটাকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, লোকটার বয়েস পঁয়ত্রিশের কাছাকাছিই হবে। তারই মত। ঢুকেই একেবারে তুই-তোকারি শুরু করেছে! শালা ভেবেছে কী ! কিন্তু রাগতে গিয়েও রাগতে পারে না। তার শরীরটা এখনো বেশ দুর্বল, শক্তিতে সে পেরে উঠবে না। তাই চুপ করে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। তার মুখের দু হাত দূরেই সাপটা অনবরত জেভ বের করছে, আবার ঢোকাচ্ছে।
লোকটা আরেকটু এগিয়ে এসে সাপটাকে অম্লানের চোখের সামনে নিয়ে বলতে থাকে, এ সাক্ষাৎ মা মনসা। যা, পুজোর জন্য দু হাজার টাকা নিয়ে আয়। নইলে মা মনসা তোর বংশ নাশ করে দেবে, বাড়িতে আগুন লেগে যাবে, মৃতদেহের লাইন লেগে যাবে।
উপায়ান্তরবিহীন অম্লান বলে, বাবা আপনি বসুন। আমি ভেতর থেকে আসছি। বলে অম্লান ঘরে ঢুকে যায়।
ঘরে দাদুর আমলের একটা তলোয়ার ছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আগে দাদু রাজবাড়িতে কাজ করতেন। সেই সূত্রে রাজবাড়ি থেকেই এই তলোয়ারটা এসেছিল। এতোদিন ওটা দেয়ালেই শোভা পেত। অম্লান এই তলোয়ারটাকে নামিয়ে একটা গামছা দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়। তলোয়ারটাকে হাতে নিতেই অম্লান টের পায়, তার শরীরে এক শক্তি এসে ভর করেছে। তারপর সে ভারী তলোয়ারটাকে ধরে বেরিয়ে এসেই বারান্দায় রাখা এক পাতাবাহার টবের ওপর এক কোপ বসিয়ে দেয়। টবটা দু টকরো হয়ে যায়। ব্যাপার দেখে জটাধারী লোকটা সাপটাকে নিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে বারান্দার বাইরে বেরিয়ে যায়। তারপর চো চো দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। অম্লান ব্যাপার দেখে হো হো করে হাসে। সে বুঝতে পারে, সমস্ত অস্ত্রই এক শক্তির উৎস।