ধোঁকা (ছোটোগল্প)
গুলশন ঘোষ
সেদিন সকলের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত এক প্রকার ব্যধ্য হয়েই ফোন করছিল বিমল।
‘This number is busy’ – শোনা মাত্রই ফোন কেটে দিল।
আমাদের সকলের চাপা কৌতূহল। মৈনাক বিমলকে জিজ্ঞাসা করে — কি রে ফোন লাগল?
দূর ছাই, busy, busy বলছে — বিমল এই কথা বলেও আর একবার ট্রাই করার পর হ্যান্ডসেটটাকে বেঞ্চের উপরে রেখে দিয়ে লো বেঞ্চে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর আমি বললাম, আর একবার দেখ না।
বিমল আমার অনুরোধে আবার ট্রাই করল…। টুক্ টুক্ ……। চুপ চুপ এবার রিং হচ্ছে।
স্যর, ভাল আছেন, আমি নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিমল বলছিলাম, এম.এ সেকেন্ড ইয়ার। প্রবল উৎকণ্ঠা আর কৌতূহল নিয়ে সকলে বিমলকে ঘিরে ফোন থেকে আসা আওয়াজ কান খাড়া করে সব শোনার চেষ্টা করলাম।
স্যর, আজ তো আপনার ক্লাস আছে, আসছেন না ? এই কথা বলার পর একটু চুপ করে থাকে বিনল। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে জানালার দিকে চলে যায় ফোন নিয়ে। তারপর আবার তাকে বলতে শোনা যায় করে, নেবেন না – ও।
কিছুক্ষণ চুপ।
দেখা যায়, বিমলের মুখটা তপ্ত তেলে দেওয়া পাঁপড়ের মতো লাল হতে থাকে আস্তে আস্তে। কিছুক্ষণ পরই গরমের রোদে ঝলসে যাওয়া বেগুনের মতোই তার মুখের অবস্থা হতে শুরু করে।
আমরা সকলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করতে থাকি বিমল কী যেন বড় কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর বিমল ফোনটা কেটে দিয়ে শান্ত নিরুৎসাহ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকায়।
এরপর আমাদের সকলের মনে একই জিজ্ঞাসা। কী ব্যাপার ও ভাবে ঝিমিয়ে গেলি কেন! স্যর কী বললেন!
অর্ঘ্য বলে — নিশ্চয় কোন গোলযোগ?
পুরস্কারে বাঁধা পড়েছেন পরেশবাবু — বিমল এই কথা বলে হতাশ হয়ে বেঞ্চে বসে পড়ে।
স্যার, কী বলছেন ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
ফ্যাকাশে মুখে বিমল আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে সোজা ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। বিষয়টা জানার জন্য সকলে মিলে তাকে অনেক করে অনুরোধ করেও তার কাছ থেকে আর কিছুই জানতে পারলাম না।
আমরা চারজন বন্ধু সব সময় এক সঙ্গে থাকি, মজা হৈহুল্লোড় করি – বিমল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে চার্মিং ছেলে। আমরা যতই রাগানোর জন্য বিমলের পিছনে লাগি না কেনো ওকে কিন্তু, কোন দিনই রাগতে দেখিনি। যত বড় খারাপ ঘটনা ঘটুক না কেনো ওর মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। কিন্তু, আজ স্যরকে ফোন করার পর ওর মনটা কেন দমে গেল, আমরা বুঝতেই পারলাম না!
স্পেশাল পেপার নাটক থাকায় লাস্ট সেমেস্টারে আমরা চারবন্ধু আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ি। আমাদের নাটক স্পেশাল রাখার অন্যতম কারণ হল, পরেশবাবুর আসাধারণ ক্লান্তিহীন সুখ শ্রুতিকর ক্লাসের পিপাসা। আর অন্য যে কারণ সেটা ছিল বিমলের পাগলামি আর অকৃত্রিম ভালোবাসা।
গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসাবে প্রথমবর্ষে আমাদের ক্লাসে স্যরের অভিষেক ঘটে ‘চাকভাঙা মধু’ নাটক পড়ানোর মাধ্যমে। প্রথম ইনিংসেই স্যরের ভারহীন বাচনভঙ্গীতে আমরা ফিদা হয়ে যাই।
স্যর, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাপিয়ে ক্লাস নিতেন। এমেরিটাস প্রফেসর। ‘চাকভাঙা মধু’ নাটকে মনোজ মিত্রের অভিনয় আমরা দেখিনি। কিন্তু, সেই অভাব স্যর একাই তাঁর অসামান্য স্বরপ্রক্ষপণে পূরণ করে দিয়েছিলেন। নাটকীয়ভাবে সংলাপের উচ্চারণ ও স্বরের ওঠানামায় মনে হতো আমরা যেন নাটক দেখছি। অঘোর, মাতলা স্যরের কণ্ঠে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। সেদিন থেকেই স্যরের কোন ক্লাস আমরা মিস করতাম না। স্যরের সব ক্লাসে কেউ থাক, না থাক আমরা চারজন ঠিক উপস্থিত থাকতাম। যার জন্য স্যরের সঙ্গে আমাদের আন্তরিকতা একটু বেশিই। তাছাড়া স্পেশাল পেপার নাটক নেওয়ায়, পূর্ব পরিচয়টা আর একটু গাঢ় হয়ে উঠেছিল। তবে আমাদের চারজনের ভিতরে স্যরের সঙ্গে বিমলের খাতির অনেকটাই বেশি। এর অন্য কারণ কী ছিল তা আমাদের ঠিক জানা না থাকলেও; তবে একটা কারণ হল — স্যর আর বিমল একই পথে বাড়ি ফিরতেন। আমরা থাকতাম হস্টেলে। প্রায় দিনই বিমল চেষ্টা করত স্যরের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে। তাছাড়া বিমলকে দেখছি, একটা আলাদা জোশ নিয়ে স্যরের ক্লাস করতে। দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত সব প্রশ্ন করত বিমল। স্যরকে বিমল এতটাই ভালোবেসে ফেলেছিল যে স্যর কেমনভাবে পড়াতেন, কী কী পড়িয়ে গেলেন তার প্রায় সবই হুবহু নকল করত। আর আমরা বন্ধুরা মিলে ভীষণ মজা করতাম। এমনকি কোন কারণে কেউ ক্লাস মিস করে গেলে বিমলকে জিজ্ঞাসা করলে ও পুরো ক্লাসে স্যর কী পড়িয়েছেন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিত।
আজ স্যরকে ফোনটা করার আগে বিমল ভীষণ রকম একসাইটেড ছিল। কিন্তু, কী এমন হল যে বিমল অমন মন মরা হয়ে গেল! আমরা তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম, কোন কিছুরই যখন হদিশ পাচ্ছি না, তখন আমাদের চোখে পড়ে ওয়াশ রুম থেকে বিমল বেরিয়ে আসছে। চোখ মুখ জলে ভেজা। শ্রেণি কক্ষে ঢুকে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে। আমরা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করেছিলাম।
আমি ওকে জিজ্ঞসা করলাম, হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেল তোর?
কয়েক সেকেন্ড পর আমার কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলে — কি রে সব চুপচাপ কেনো তোরা? কী দেখছিস অমন হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে?
বিমলের এই কথায় আমরা যেন আকাশ থেকে পড়লাম। প্রথমে আমি মনে মনে ভেবেছিলাম হয়তো নতুন কোনো ড্রামা শুরু করেছে বিমল। ভাও খাওয়ার জন্য এমন করছে। কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে। আবার এও মনে হয়েছিল হয়তো সত্যি মন খারাপের হওয়ার মতো কিছু ঘটেছে। তাই সে না বলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু, যতদূর ওকে জানি ও কোন কথাই নিজের মধ্যে চেপে রাখে না। তাই ওকে আর বলতে পারিনি যে, বেশি নাটক না করে কি হয়েছে বলতো। এই সব কিছুই আমার মনের মধ্যে তোলাপড়া হচ্ছিল। আমি শেষ পর্যন্ত ওর পিঠে হাত রেখে আবার একবার জিজ্ঞাসা করলাম, তুই বা হঠাৎ ঝিমিয়ে গেলি কেনো স্যরকে ফোন করার পর? অত করে আমরা সবাই জিজ্ঞাসা করলাম তুই কোন কিছু না বলেই চলে গেলি যে?
বিমল পরিষ্কার করে কিছু না বলে আবার আগের ফর্মে ফিরে এসে ছ্যাবলামি শুরু করে।
ক্লাসে গেস্ট ফ্যাকাল্টি প্রকাশবাবুর সম্পর্কে পুরানো ঘটনার ঢাকনা খুলতে শুরু করলো বিনয়। স্মৃতির গর্ত থেকে যেন অনর্গল বাদল পোকার মতোই নানা ঘটনা স্রোত উঠে এসে চোখের সামনে উড়তে লাগল।
সত্যি কথা বলতে কী প্রকাশবাবুর ক্লাসে টানা চার ঘণ্টা বসে পড়া শুনতে আমাদের একদমই কারো ভালো লাগত না। পড়ানোর চেয়ে ভাট্ বকতেন বেশি। কেবল পরিবারে গপ্পো। ‘ময়লা আঁচল’ পড়াতে পড়াতে বারং বার ফণীশ্বরনাথ রেণু’র পরিবর্তে ফুলেশ্বরনাথ রাণু বলতেন। তাছাড়া কাহিনিও ভুল বলতেন। তখন মনে সন্দেহ হতো উনি হয়তো নিজেই কোন দিন উপন্যাসটি পড়েননি। যাই হোক ক্লাসে সময় যেন কাটতেই চাইতো না। মনে হত যেন জেলখানায় বন্দি আছি। বিমল প্রকাশবাবুর ক্লাসে যে দিন না থাকত সেদিন কী যে হত – তা বলার নয়।
খুব একটা ভাল প্ল্যান জুগিয়েছিল বিমল আর আমার মাথায়। আমরা প্রতিদিন নানা অছিলায় স্যরের ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতাম। কোনদিন বিমল অসুস্থতার ভান করলে, ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার নাম করে চলে আসতাম। কোনদিন বা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি কেউ অসুস্থ হয়ে হস্পিটালে ভর্তি আছে– তাকে দেখতে যাবার মিথ্যা বাহানা দিয়েও পালিয়ে আসা হতো। আবার কোনদিন হয়তো চাকরির পরীক্ষার ফর্ম জমা দেওয়ার বাহান দিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিতাম দু’জনে। তাছাড়া এক–দেড় ঘন্টা দেরি করে প্রকাশবাবুর ক্লাসে ঢোকা তো প্রায়শই চলত আমাদের দু’জনের। দেরি হওয়ার কৈফিয়ৎ ছিল — ট্রেন লেট। তার উপর রাস্তায় ট্রাফিক। এইভাবেই স্যরের একটা সেমেস্টারের ক্লাস কাটিয়ে ছিলাম। কিন্তু, ছ’মাস যেন আমাদের কাছে ছ’বছর বলে মনে হয়েছিল।
স্যরের, যে দিন ক্লাস শেষ হওয়ার কথা – স্যর তারপর একটা একস্ট্রা ক্লাস নিতে চেয়েছিলেন যদি আমাদের কোথাও কিছু সমস্যা থাকে সেগুলি আবার আলোচনার জন্য। কিন্তু, আমরা সব ছাত্রছাত্রী মিলে ঠিক করলাম আর আমাদের কোন ক্লাসের প্রয়োজন নেই। কারণ তখন ক্লাস করাটাই আমাদের কাছে সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। এরপর আমরা বিভাগীয় প্রধানকে সকলে মিলে আমাদের অন্য ক্লাস দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। এবং জানিয়েছিলাম যে, স্যর এত ভাল পড়িয়েছেন আমাদের আর কোন সমস্যা নেই।
যেদিন স্যরের ক্লাস শেষ হয়েছিল তারপর দিন দেখেছিলাম বিমলের ন্যাড়া মাথায় টুপি। হঠাৎ বিমলের এই কাণ্ডকারখানা দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কেন না চুলের প্রতি বিমলের প্যাশন এতই বেশি যে তার প্রিয় জ্যেঠু যখন মারা যায় তখনও দেখেছি বাড়ির সকলের অনুরোধকে উপেক্ষা করে চুল অক্ষত রেখেছিল। অথচ সেদিন আমার মনে হয়েছিল, কী এমন হল বিমলের যে, মস্তক মুণ্ডন করে এসেছে!
এখানেই এই নাটক কিন্তু শেষ হয়নি। সেটা মেলোড্রামায় পরিণত হয়েছিল। আমরা পরে জানতে পারবো বিমল ক্লাস শেষে সেদিন নৈহাটিতে মাঘ মাসের বাঘ কাঁপা জাড়ে গঙ্গা স্নান করে রাতে বাড়ি ফিরেছিল।
পরেশবাবুর সঙ্গে যেতে যেতে হঠাৎ নৈহাটির গঙ্গার ঘাটে দরকার আছে বলে সেদিন বিমল সরে পড়ে। স্যরও সেদিন রীতি মতো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন হঠাৎ করে বিমলের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া দেখে।
কিন্তু, পরের দিন যখন পরিমল স্যর, তাকে এসে হেসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যে অত রাতে সে গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিল কেনো?
— ওই একটু গঙ্গায় ডুব দিলাম – এই কথা বলেই চুপ করেছিল বিমল। জোর করে হাসি চেপে ভিজে বেড়ালের মতো বসেছিল।
স্যর চশমা আঁটা বড় বড় চোখে ঢিলে চামড়ার ঝুলে যাওয়া থুতনি নিয়ে জড়ানো গলায় হো হো করে হেঁসে বলেছিলেন –- দ্যাখ কাণ্ড! বিমল স্নান ক্যান রে?
আমরাও হাসতে শুরু করে দিলাম। তখন গোঁফের আড়ালে বিমলের দুষ্টামির হাসি।
প্রকাশবাবুর ক্লাস শেষ হওয়ার একঘেয়েমির বোঝা নেমে যাওয়া আর একটা করে মিথ্যা বাহান বানানো পাপ ও চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার তীব্র আনন্দে যে মস্তুক মুণ্ডন করে গঙ্গা স্নান করতে পারে এটা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি।
ওর প্রতিটা কথা শুনে হাসির দাপটে সেদিন শেষ পর্যন্ত ক্লাসটাই মাটি হয়েছিল।
পড়া আর হল না ঠিক কথা, কিন্তু অনেক বাস্তব ঘটনা সেদিন আমরা পরিমল স্যরের কাছ থেকে জেনেছিলাম। প্রকাশবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে সুযোগ পেয়েছিলেন… ও নানা পুরানো কাহিনিও শুনলাম যা, তা মোটেই মিথ্যে নয়- বলেই মনে হলো।
পরেশবাবুকে আমরা এতদিন যতটুকু জানতাম তার চেয়ে যেন অনেক বেশি করে সেদিন স্যরকে জানলাম। অনেকেই ঘণ্টা দুয়েক পর বাড়ি চলে গেলেও আমরা এই চার বন্ধু ও অন্য কয়েকজন ক্লাসমেট ক্লাসে বসে স্যরের গল্প শুনছিলাম।
পরিমলবাবু স্বাধীনতার লাভের পরের মানুষ। দেশভাগের পর তিনি বাবার চাকরি সূত্রে এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন। তখন স্যর খুবই ছোট। প্রপিতামহ জমিদার ছিলেন। প্রচুর জমি। বিশাল ফলের বাগান। বড় বড় দিঘি। পুরানো বাড়ি। দুর্গা মন্দির। নাটমঞ্চ। মন না চাইলেও সেদিন সব ছেড়ে এদেশে চলে আসতে হয়েছিল তার পরিবারকে। স্যরের, ক্লাসে মাঝে মাঝেই ওপার বাংলার স্মৃতিচারণা শুনতে পেতাম দেশভাগ নিয়ে কোন নাটক আলোচনা প্রসঙ্গে।
পশ্চিম বাংলার অনেক স্যরের কাছেই দেশভাগের আলোচনা শুনেছি – তবে তা এত বর্ণময়, অকৃত্রিম নয়। স্যর যে পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের দশকের আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো সাক্ষী ছিলেন শুধু নয়, তিনি তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে তাঁর সমকালকে, সেকালের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গুলিকে গভীর সহানূভূতির সঙ্গে উপলব্ধি করেছিলেন–তা তাঁর আলোচনা শুনলেই বোঝা যেত।
গণনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ছিলেন পরিমলবাবু। বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে থিয়েটার নিয়ে পৌঁছে যেতেন। বাদল সরকার যখন কর্ণাটকে ওয়ার্কশপ করাতে গিয়েছিলেন তখন নাট্যদল ‘সমুদায়’কে দেখেছিলেন কর্ণাটকের প্রত্যন্ত গ্রামে থিয়েটার পৌঁছে দিতে। প্রান্তিক মানুষের উদ্দেশ্যই এই থিয়েটার। নাটকের বক্তব্যকে প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে বন্দি না রেখে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। তারা এই থিয়েটারের নাম দিয়েছিল ‘জাঠা’। বাদল সরকারকে চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমাদের। কিন্তু স্যরের কথায় অতীত যেন নিকট বর্তমান রূপে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠতো।
স্যর, তাঁর অনেক গ্রন্থেই নানা অভিজ্ঞতার কথা প্রাঞ্জল ভাষায় লিখে গেছেন। চাকরি থেকে অবসরের পর থিয়েটার, সক্রিয় রাজনীতি সবই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেবল লেখালিখি আর পড়ানো চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রবল প্রতাপের সঙ্গে।
সেদিনের ক্লাসে, স্যরের আলোচনার সিংভাগ জুড়েই ছিল প্রথম দিককার বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে এখনকার স্বভাব-বামেদের আলোচনা। সেই সঙ্গে শুনেছিলাম এ রাজ্যের মার্ক্সীয় সাহিত্যিকদের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য মার্ক্সীয় সাহিত্যিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার আশমান জমিন তফাৎ-এর কথা। স্যরের কাছ থেকেই আমরা শুনেছিলাম দেশের বাইরে কত সাহিত্যিক স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলার বা সমালোচনা করার জন্য জেল খেটেছেন।
এই কথা বলতে বলতে তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য আর সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছাড়া ক’জনই বা প্রতিবাদী কবিতা লিখেছেন? বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন লেখার মধ্যে! আমাদের দেশেএকজন লেখকের নাম বল যারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একজন কবি–নাটককারের নাম বল যারা দেশের নেতাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেলে গেছেন? স্পষ্ট অথচ শান্ত হয়ে স্যর কথাগুলি বলে যাচ্ছিলেন। আমাদের তরুণ মনের পাতলা রক্ত যেন দ্রুতই গরম হয়ে প্রতিবাদী ভালভ-এ চাপ দিচ্ছিল স্যরের বাগ্মিতায়। স্যর অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন সেই দিনের ক্লাসে।
তিনি বলে যাচ্ছিলেন, আমাদের রাজ্যের বেশির ভাগ স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কবিদের দেখে মনেই হয় না যে, এঁরা কেউ পরাধীন দেশের কবি। এঁদের কারো একটা কবিতা দেখা — যেখানে পরাধীনতার যন্ত্রণার আগুন ঝরেছে। চাঁদ তারা ফুল নিয়ে খেলেছে। কোথাও পরাধীনতার বেদনা প্রকাশ পায়নি। এই সব কবিতা পড়লে মনে হবে যেন এঁরা সবাই স্বাধীন দেশের কবি।
এই জন্যই হয়তো স্যরের মনের বেদনা সেদিন আমাদের সামনে বেশি করে প্রকাশ হচ্ছিল। আমরা জানি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল প্রাণী মানুষ। কিন্তু, অন্যদের তুলনায় কবি-শিল্পীরা একটু বেশিই হয়ে থাকেন। যে দেশের কবিদেরকে পরাধীনতার বেদনা হন্ট্ (Haunt) করেনি সেই দেশের কবিতার প্রতি স্যরের ব্যক্তিগত খুব বেশি কোন আগ্রহ নেই।
স্যর এও বলেছিলেন, সত্যিই যদি পরাধীনতার বেদনা আমাদের দেশের সব কবিদের হন্ট্ করত তাহলে তার ইম্প্যাক্ট অল্প হলেও তাদের লেখায় পড়তো। কিন্তু, এঁদের কবিতা পড়ে মনেই হয় না এঁরা পরাধীন দেশের কবি! তা না হলে এঁরা এতো বেশি চাঁদ-তারা-ফুল-নিয়ে কবিতা লিখতে পারে!
মনে হল আমরা যারা সাহিত্য নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি তারা জানি, স্যরের এই বক্তব্যের পিছনে কোন সত্য লুকিয়ে আছে। স্যর ব্যক্তিগত ভাবে চিরকালই– ‘Art for people Shake’-এ বিশ্বাসী। মানুষের মঙ্গলের জন্য তিনি শিল্পের সত্যেকে মানতেন। যদিও তা নিয়ে বিতর্কের টেবিলে শব্দতঙ্গের গরম গরম ধোঁয়া তোলা যেতেই পারে। গোর্কির মাদার পড়ে যদি আনন্দ না লাগত তাহলে ক’জনই বা সমাজতন্ত্রকে জানতে এই বই পড়ত সেটাই ভাবার! – এই কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য জিহ্বাবার ডগায় কথাগুলোর সঙ্গে কুস্তি শুরু হলেও ভিরতেই তাই বুদবুদের মতো মিলিয়ে গেলো ।
স্যর, উদাহরণ হিসাবে গোর্কি, ফ্রান্ৎস কাফকা, বার্টোল্ট ব্রেখট, পাবলো নেরুদা, মিলান কুন্দেরা, সলমান রুশদি প্রমুখের এর মতো বিশ্বের তাবড় তাবড় চিন্তানায়ক যাঁরা সমাজ ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন তাদের কথা বলতে বলতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের অল্প বিস্তর সমালোচনা করছিলেন।
বিমল সেদিন একটা দু’টো প্রশ্ন করা ছাড়া কোন কথা বলছিল না। সে সেদিন মশগুল হয়ে স্যরের কথা শুনছিল।
বিমল আমাদেরকে সেদিনের এই সব ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতেই আমরা সকলে বললাম — জানি তো, কিন্তু তোর আজ হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেল কেনো সেটা বুঝলাম না তো!
বিমল আবার শান্ত গলায় বলতে শুরু করেছে স্যরের ক্লাসে সেদিনের অনুভূতির কথা। তার মনের অবস্থার কথা।
সেই ক্লাসে স্যরের কথা বিমলের চেতনাকে প্রবল ভাবে নাড়া দিয়েছিল – তা পরে আমরা তার কথা শুনে বুঝতে পারি।
বিমল সেদিন চুপ করে স্যরের কথা শুনতে শুনতে যখন এক একটা প্রশ্ন করছিল তখন তা আলেয়ার আলোর মতো মনে হচ্ছিল আমাদের কাছে। তার কল্পনার জলসা ঘরে সেদিন ঝল্সে উঠেছিল রূঢ় বাস্তবের চাপা পড়া প্রতিবাদ।
বিমল হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল -– এ রাজ্যের কোন বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। স্যরও তার এই কথা সঙ্গে সহমত প্রকাশ করছিলেন।
স্যর বলেছিলেন –- এখানে সরকারের ভুল কাজের বেশি কেউ সমালোচনা করে না, কেন না তাদের স্বার্থ রয়েছে, আর রয়েছে অনেক বিপদ। চাকরিজীবীদের পেটে লাথি পড়ার ভয়। ট্রান্সফার। আর সাধারণের উপর অন্য বিপদ। হুমকি। সরকারী সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আরো কত কী…।
বিমলকে এই প্রথম দেখলাম স্যরের কথার ভিন্ন যুক্তি দেখাতে। সে বেঞ্চ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলেছিল –- ‘তা বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।’
স্যর বলেছিলেন –- ‘এজন্য বিরোধী দলকে সব সময় সক্রিয় থাকতে হয়।’ সুস্থ গণতন্ত্রের অক্সিজেন সক্রিয় বিরোধিতা।
বিমল অল্প হেসে ছিল স্যরের কথা শুনে। তারপর বিমল বলেছিল -– ‘কিন্তু আমাদের রাজ্যে চিরকালই সরকার পক্ষে থাকে তাদেরই জয় জয়কার। একনায়কতন্ত্র। বিরোধী শূন্য করাই এখানকার অধিকাংশ নেতাদেরই একমাত্র কাজ। সেদিকে ক্ষমতার পাল্লা ভারি সেদিকেই জনগণের সমর্থন। আসলে স্যর, আমরা সবাই ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে ভালোবাসি। অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরা চাপমুক্ত জীবন চায় স্যর। ক্ষমতাবানের বিরোধিতা করে মানসিক আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকে সরে থাকতে পছন্দ করে। বাড়তি সুযোগ, স্বার্থ, পদ, পুরস্কার, কোন না কোন ক্ষমতা ভোগ করার কথা ভাবে ……… ।
বিমল রাজ্য নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা করে – এর আগে আমরা জানতে পারিনি। ভাবতাম পড়াশোনা আর হাসি ঠাট্টা ছাড়া কিছুই বুঝতে চায় না ও। কিন্তু, আজ মনে হচ্ছে মানবিকীবিদ্যা পড়ার স্বার্থকতা সেখানেই যেখানে আমাদের মানবতাবোধের উন্মেষ ঘটবে। চেতনার বিকাশ হবে….. ভালো মন্দ বোঝার বোধ তৈরি হবে। তা নাহলে একটা ভালো কোন লেখা পড়ে অনুভূতির উন্মেষ ঘটায় আহ! কি দারুণ! চমৎকার! প্রভৃতি বিস্ময় সূচক অব্যয় প্রকাশ করে কী হবে?
পুরানো সেদিনের কথার রেশ ধরেই আবার বর্তমানে ফিরে এলো বিমল।
প্রতিবাদী বক্তব্য। তবে সেদিন ক্লাসের মতো তার কথাগুলি আজ আর গোছহারা আলদা নয়। আমাদের মনে হতে লাগল বিমল যেন কোন রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতা করছে।
— এখানকার সরকার আগেকার সরকারের মতোই শুরু করে দিয়েছে, এ রাজ্যে বেশির ভাগ চাকরি, ভাল পদে থাকার জন্য মেধার দাম অল্প, দাম দেয় সোর্স আর কুঁতিয়ে-কাঁতিয়ে এখান সেখান থেকে Qualification-এর কতগুলি কাগজকে। সরকারের জয়ধ্বনি দেওয়ার জন্য কতগুলি ব্যবস্থা আছে এখানে। সরকারের ল্যাজ ধরে ঘুরলেই একটা না একটা কিছু জুটে যায়। এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আংশিক লোক নিয়োগ হয়, সেটাও আবার যে যখন ক্ষমতায় থাকে তার দলের মানুষকেই পাইয়ে দেয়। কিংবা নেপোটিজম্। চূড়ান্ত সব স্বজনপোষণ! বিমলের কণ্ঠ আরো জোর হতে লাগল। আমাদের বিরুদ্ধে দৈনিক পেপার না পড়ার অভিযোগ এনে আবার তার বক্তব্য শুরু করে দিল, আমাদেরকে বলতে লাগল – এ রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চুক্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা। কীভাবে বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের ইন্টারভিউ নেওয়ার নামে দিনের পর দিন গোটা রাজ্য, গোটা দেশ জুড়ে প্রহসন চলছে। অদক্ষ, অযোগ্য চাকরি প্রার্থীকে নিজেদের স্বার্থে চাকরি দিয়েছে।
আমি বললাম -– তাতে কী হয়েছে, কিছু তো অন্তত বেকার সমস্যা ঘুচল। বাকিরাও আমার কথায় সম্মতি দিল।
বিমল আমাদের বক্তব্য শুনে রেগে গিয়ে গালাগাল দিয়ে বসল। আমাদের মধ্যে একজন পালটা গালাগাল দিয়ে বলে — ‘শালা তুই দেখছি বেশি বুঝে গেছিস!’
বিমল যে কতটা বুঝেছে তা আমাদের বোঝাতে লাগল একটা হাস্যকর গালাগাল দিয়ে। … বেকার সমস্যা দূর হল ঠিক কথা, কিন্তু তা সার্বিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। বেকারদের কী কোন রাজনৈতিক রঙ থাকে!’
আমি ওর কথার ধরন দেখে বললাম — ‘আগের সরকারও তাই করে এসেছে আর এবার এরাও তাই করছে তাতে দোষ কীসের?’
বিমল রেগে গিয়ে বলে — তোর মতো শিক্ষত বেকার ছেলের মুখে এসব কথা মানায় না।
বিমলের কথা শুনে সবাই হো-হো করে হাসলাম।
বিমল আবার তার বক্তব্য শুরু করে দিল। সেদিনে বিমল একটা প্রশ্ন করেছিল স্যরকে। পুরানো প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে সেদিনের সেই প্রশ্নের যুক্তির সত্যতা প্রমাণ করতে আজ বিমল বলে — ‘এ রাজ্যে দুর্দান্ত কাজ না করেও, সরকার টিকে থাকার কারণ, তা এইভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়া। নগদ প্রাপ্তি। সরকারি ফ্রি প্রকল্প। এটা কেবল বেকার সমস্যা দূর করা নয় — যে-কোনো পার্টির ক্যাডার তৈরি করা।’ বিমলের এই কথা শুনে আমাদের মধ্যে দু’একজন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।
বিমল আবার বলতে শুরু করলো তার বক্তব্য — এতে সরকারের আরো একটা সুবিধা হয়।
আমি বললাম — কী সুবিধা হয়?
বিমল বলে — এতে সরকারের কম টাকা খরচ হয়, এদের মাইনে দিতে গেলে কত টাকা লাগত কোনো দিন ভেবে দেখেছিস! তাছাড়া পেনশন দেওয়ার কোন দায় থাকে না সরকারের।
আমি বললাম –- কিন্তু সরকারের টাকা না থাকলে দেবে কোথা থেকে।
বিমল এটা ওটা উদাহরণ দিয়ে বিকল্প পথের কথা বলতে শুরু করলো। তার সেই সব কথা শুনে অন্য বন্ধুরা চেপে ধরে বিমলকে।
কৌশিক বলে — বিকল্প পথের কথা মুখে বললে তো শুধু হবে না তার উপায়ও বলতে হবে।
আমাদের মধ্যে মৈনিক বলে উঠল — এখানে বলে তো লাভ নেই বন্ধু, বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে?
আমাদের এই কথা শুনেই বিমল ব্যাগ থেকে ‘সাগ্মিক’ নামের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকাটা আমাদের হাতে দিয়ে একটি লেখা পড়তে দিল। দেখি আমাদের পরেশবাবুর লেখা। অর্ঘ্য জোরে জোরে পড়ছিল। আমরা শুনছিলাম।
লেখাটা পড়া শেষ হতেই মৈনাক বলে — তাহলে স্যরই শেষ বয়সে বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধলেন!
আমি বললাম তাহলে স্যরের লেখাটা তোকে দারুণ ভাবে নাড়া দিয়েছে বল? এই লেখা পড়েই এতক্ষণ গরম গরম ফুটানি ঝাড়ছিলিস।
বিমলের মুখটা একটু ফ্যাকাশে হয়ে গেলেও বেশ দম্ভের সঙ্গে বলে ওঠে — ‘চোখে যা দেখা যায় সব সময় তা সত্যি নাও হতে পারে।
মৈনিকা বলে – মানে।
— লেখাটা আমার। ঠোঁটে ঠোঁট টিপে বিজ্ঞের মতো একটু হেসে জামার কলারটা ঠিক করে নেয় বিমল। স্যরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে এই লেখাটার জন্যই।
বিমলের কথায় প্রথমে কিছুটা সন্দেহ হলেও পরে মনে হয়েছিল ও যে প্রকৃতির ছেলে তাতে ওর পক্ষে এসব কাণ্ড করা অস্বাভাবিক কিছু ব্যাপার নয়। এতক্ষণ পর আমরা একটু আঁচ করতে পারলাম স্যরের পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গে বিমলের দুঃখে সম্পর্কে কোথায়? এই ধরনের লেখার জন্য ‘প্রগতিশীল বঙ্গীয় সমিতি’ পুরস্কারের জন্য পরেশবাবুকে ডাকায় বিস্মিত হয়েই ওই সংস্থার মেম্বারদের কোথাও ভুল হচ্ছে জানিয়েও ওখানে গিয়েছিলেন আসল সত্যিটা জানার জন্য।
নিজের লেখা স্যরের নামে প্রকাশ করার কারণ কী তা বিমলের কাছে অর্ঘ্য জানতে চাওয়ায় বিমল বলে — কারণ অনেকগুলি। আমায় কেই বা চেনে? কিন্তু, আসল ইচ্ছা অন্য! স্যর কেবল বলতেন যে আমাদের রাজ্যে কোন নাট্যকার – তাঁদের লেখায় সরকারের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা কিংবা প্রতিবাদ করার জন্য জেল খাটেনি। স্যরকে আমি খুব ভালবাসি ঠিক কথাই তবে, এই লেখাটার জন্য স্যরকে জেলে দেখতে চেয়েছিলাম। কারণ স্যরের কোন লেখায় এক বিন্দুও আমি কোনো সরকার বিরোধী সমালোচনা পাইনি।