
রাবণ ক্লাবের উচ্চসভা
সন্তোষ উৎসুক
রাবণ ক্লাবের সদস্যরা চেয়েছিলেন এই বছর দশেরার আগে সভা অনুষ্ঠিত হোক। গত বছর দশেরার পর বৈঠক হলেও বিশৃঙ্খলার কারণে পৈশাচিক স্বার্থ নিয়ে ঠিকমতো আলোচনা করা যায়নি। সভা আয়োজনের বিষয়ে কয়েকজন সদস্য সভাপতি রাবণজীর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বিনয়ের সাথে তার অনুমোদন দিয়ে বলেন, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন, আমার মন থেকে বুঝুন, সমাজ অসুর স্বার্থ রক্ষায় অনেক সহযোগিতা করছে। সমাজে বাড়ছে হিংসা, বিদ্বেষ ও বৈষম্য। এই অজুহাতে আমাদের সবার মর্যাদা উঁচু হয়ে যাচ্ছে।
সভায় রাবণজী বলেছিলেন যে আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে সমাজের লোকেরা অবশ্যই পরিবেশের কথা চিন্তা না করে আমাদের লম্বা মূর্তি তৈরি করবে এবং আগুন দেওয়ার জন্য আমাদের মতো বিখ্যাত নেতাদের পাবে। আমাদেরকে অশুভের প্রতীক আখ্যা দিয়ে, আমাদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর মাধ্যমে তারা ধরে নেবে যে মন্দ কমে গেছে। এই অজুহাতে মন্দের ওপর ভালোর জয় বলে বিবেচিত হবে। এই লোকেরা কুশপুত্তলিকা পোড়াতে থাকে, তারা মনে করে কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর মধ্য দিয়েই মন্দ শেষ হয়ে গেছে। খুব বোকা। এসবই সমাজে রোপিত পৈশাচিক গুণের ফল। ভাল ব্যাপারটা এখন একটি উজ্জ্বল মুখোশ হয়ে উঠেছে, কেউ তার খারাপ আচরণকে ভাল আচরণে পরিবর্তন করতে প্রস্তুত নয়, প্রতিটি মনে, আমি … এটাই রাবণ প্রকৃতি। ভারতীয়রা আমাদের দরবার, আমোদ-প্রমোদ, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া, মারামারি ও সাহসিকতার মতো বিলাসিতা উপভোগ করছে, তারা সেগুলিতে মগ্ন হয়ে তাদের মানবিক, পারিবারিক, নৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় কর্তব্য ভুলে যাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে রাবণের প্রবণতা বাড়ছে, অর্থাৎ আমাদের সাম্রাজ্যের জন্য কোন হুমকি নেই।
মেঘনাদ বললেন, মহারাজ, আপনি বললে আমিও নিজের প্রশংসা করব।
কিন্তু রাবণ বললেন, এখন সবাই রাবণ হতে চায়। মানুষ মন্দ দ্রুত শিখে, ভালো নয়। এত লঙ্কায় মানুষ বসতি করেছে, আমরা শুধু অশুভের প্রতীক কিন্তু সমাজে অসংখ্য রাবণ আছে, মেঘনাদ আর কুম্ভকর্ণ আছে, কোটি কোটি আছে। আমাদের সমাজে পৈশাচিক প্রবণতা গড়ে উঠছে। আমাদের গুণাবলি অর্থাৎ অহং, লালসা, লোভ, আসক্তি, কাম, ক্রোধ, অন্যায়, অনৈতিকতা, অসত্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মন্দ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, আমাদের নামে কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে।
রাবণজী রাক্ষসদের কথা বলতে বাধা দিয়েছিলেন। এমনকি কুম্ভকর্ণও তার শক্তিশালী বক্তৃতায় ঘুমাতে পারেননি। তিনি মনে মনে সংকল্প করলেন যে তিনি আর ঘুমিয়ে তার জীবনকে নষ্ট করতে দেবেন না বরং পৈশাচিক সংস্কৃতিকে রক্ষা ও প্রসারে গুরুত্ব সহকারে কাজ করবেন। মেঘনাদকে ইঙ্গিত করে রাবণজী বললেন, আমরা তোমাকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি কিন্তু তোমার প্রশংসার সাথে সাথে আমাদেরও প্রশংসা কর, বল, পরাক্রমশালী, হরিযুগী রাজা রাবণের মহিমা।
(Feed Source: prabhasakshi.com)