উন্নয়নের পথে
সন্তোষ উৎসুক
একদিকে বিশ্বের অহংকার, ক্ষমতাধর নেতারা অন্য দেশের সাথে যুদ্ধ করে মরে সম্মান অর্জন করছে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো দিনরাত পরিবেশ রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন করছে। তৃতীয় দিকে সর্বোচ্চ গতিতে চলা গাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। চতুর্থ দিকে, আমাদের দেশেই দেশপ্রেমিক ঠিকাদাররা যাতে চার লেন নির্মাণ করতে পারে সেজন্য পুরনো রাস্তার পাশের পুরনো শক্ত গাছ মেরে ফেলা হচ্ছে। শিমলা এবং মানালির মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত পর্যটন গন্তব্যে যাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরও বেশি লোক পৌঁছতে পারে সেজন্য এই দ্রুত উন্নয়নও করা হচ্ছে। সেখানে পর্যটক ও যানবাহনের ভিড় জমে যায়। কতটা উন্নয়ন হচ্ছে তা দেখলে গর্ববোধ হয়।
এ প্রেক্ষাপটে বিদেশিদের বোঝাপড়া উল্টো দিকে যাচ্ছে। সেখানকার কিছু শহরবাসী মনে করতে শুরু করেছে যে তাদের শহরগুলি এই প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি করা হয়নি যে গাড়ির হর্ন ২৪ ঘন্টা শোনা যাবে। তাদের মনে হয় বিশুদ্ধ বাতাস স্বপ্ন হতে চলেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। চিন্তা না করেই ঘণ্টায় পঞ্চাশ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার গাড়ির গতি বাড়িয়েছে তারা। উন্নয়নের পরিপন্থী এই সিদ্ধান্তের ফলে সড়কে গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এটাও প্রকাশ পেয়েছে যে অনেক শহরে আমলাতন্ত্র পঞ্চাশ থেকে ত্রিশের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিশালী পা রেখেছে। মনে হয় ফাঁসির অনুপ্রেরণা হয়তো ভারতীয় আমলাতন্ত্র থেকেই নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আমাদের পাহাড়ি এলাকায় নতুন চার লেনের শানবাধানো চালু হলে বিজ্ঞ প্রশাসকরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ঘণ্টায় ষাট কিলোমিটার বেগে যানবাহন চালাতে হবে, তখন গতিপ্রিয় গাড়ির চালকরা জবাবে বলেন, এটা হচ্ছে খুব ভুল। আমরা, জীবনে একবার, প্রথমবারের মতো এলাকায় দেওয়া নতুন চার লেনে মাত্র ষাটের গতিতে দামি গাড়ি চালাব? তাদের মতে, গাড়ির স্পিডোমিটারে দেখানো গতি মাথায় রাখতে হবে। গাড়ি নিজেই ষাটের গতিতে চলতে অস্বীকার করবে সেটা আলাদা ব্যাপার। এই ধরনের কাজের জন্য জরিমানা প্রদান করা গর্বের বিষয়।
বিদেশিরা কখনই বুঝতে পারে না যে একটি গাড়ি, একটি বড় গাড়ি, একটি লম্বা গাড়ি, একটি সূর্যের ছাদযুক্ত একটি গাড়ি, একটি বিশেষ নম্বরযুক্ত একটি গাড়ি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতীক। স্বাভাবিক জীবনে গাড়ি কেনা একটি কঠিন কাজ, গাড়ির জন্য ঋণ নিলে তা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিনলেও পার্কিং পাওয়া মুশকিল। কঠিন কাজ করার মজা সহজ কাজ করার মধ্যে নয়। বাইরের দেশে সাইকেল চালানোর প্রচার করা হচ্ছে। একটি সাইকেল কখনই একটি গাড়ির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। সাইকেল বিক্রি জিডিপিতে কোনো পার্থক্য করে না। এই মহৎ কাজটি কেবল একটি গাড়িই করতে পারে। তাই রাস্তায় গাড়ির গতি কম রাখা উচিত নয়।
(Feed Source: prabhasakshi.com)