উপহার (অনুগল্প)
গুলশন ঘোষ
কলাগাছের মতোই বড় হয়ে গেল ছোট্ট অমৃতা। অভাব কী তা কোনদিন সে বুঝতেই পারেনি বাবার দৌলতে।
বিয়ের অনলাইন সাইট থেকে নিজের পছন্দ মতো ছেলেকে ও বিয়ে করল।
বাধা দিল না মা-বাবা ওর সুখের কথা ভেবে।
জামাই চাকরি করে। যৌতুক দাবি করেনি। তবুও দামি-দামি সোনার গয়না, সেগুনের খাট, জামাইকে হিরের আংটি আরো নানান জিনিস দিয়েছিল অমৃতার মা-বাবা ওদের পৃথিবীকে সুখে ভরিয়ে তুলতে।
তবুও বিয়েটা সুখের হল না।
অমৃতা ৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে আজ আলাদা থাকে ৫ বছর।
করোনার সময় তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে তাকে ছেড়ে চিরঘুমের দেশে চলে গেছে। আজ এক বছর পূর্ণ হল।
বেদনা অনেক ফিকে হয়ে এসেছে। বাঁধ পড়েছে তার চোখের জলে।
সকাল ১০টা। ফোনে একটা মেসেজ ঢুকলো।
আগামীকাল অমৃতার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ের মেসেজ এসেছে শপিং মল থেকে।
বাবার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সকালে উঠেই অমৃতা ফুল কিনতে বেরিয়ে পড়ল । ফেরার পথে ঢুকল শপিং মলে। একটা কাপড় কিনল। পেমেন্ট করার সময় কাউন্টারের থাকা ব্যক্তি ফোন নম্বর জানতে চাইলেন।
অমৃতা বাবার BSNL নম্বরটাই বলল।
“অলরেডি রেজিস্টার্ড ম্যাডাম। নিখিল মিত্র।”
অমৃতা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। ঝাপসা হয়ে এলো চারপাশ। তার বাবা আজ সশরীরে নেই। তবুও বিশ্বে যেন তার বাবার অস্তিত্ব অনুভব করতে লাগল অমৃতা। মনে মনে সে ভাবতে লাগল আজীবন বাবা সব কিছু দিয়ে তার অভাব মেটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা কোনদিন জানতেন না সব দিয়েও বাবার অভাব মেটানো যায় না। এই মুহূর্তে এক শূন্যতার যন্ত্রণা ও আনন্দে শরীরের প্রতিটা রক্ত বিন্দু যেন চিৎকার করে তাকে জানান দিচ্ছে সে কথাই।
“উনি আমার বাবা হন। কিন্তু উনি আর নেই। ডিসকাউণ্ট বাদে কত দিতে হবে” — অমৃতা জিজ্ঞাস করে।
ম্যাডাম ১৭০০ টাকা ব্যালেন্স রয়েছে। এখান থেকেই অ্যাডজাস্ট করে নেবো। আর কিছু দিতে হবে না।
বুকের শূন্যতা যেন আরও বেড়ে গিয়ে গলার কাছে দলা পাকানো যন্ত্রণা ঢেলে উঠে আসতে লাগল বাবার কাছ থেকে এই জন্মদিনের শেষ উপহার পেয়ে ।